পরিজনদের মধ্যে কেউ অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সম্পন্ন কৃষক পরিবারের জমিজমা ছিল বারাণসীতে। বাবা, মা চেয়েছিলেন ছেলে লন্ডনে গিয়ে এমবিএ পড়ুক। ছেলে আবার বিদেশ যাওয়ার আগে আইন পড়তে শুরু করলেন। নেশা ছিল ক্রিকেটেরও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়ে গেলেন অভিনেতা। হিন্দি ছবির দর্শকের মনে সুজিত কুমার রয়ে গেলেন ‘রাজেশ খন্নার বন্ধু’ হয়ে।
সুজিত কুমারের জন্ম ১৯৩৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। তাঁর জন্মগত নাম শামসের সিংহ। কলেজে পড়ার সময় তাঁর অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। কলেজজীবনে তাঁর অভিনয় দেখেছিলেন সে সময়ের বিখ্যাত পরিচালক ফণী মজুমদার। সুজিতের অভিনয় তাঁর পছন্দ হয়।
ফণী মজুমদারের পরামর্শে সুজিত অভিনয়কে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার কথা ভাবেন। ‘আকাশদীপ’ ছবিতে সুজিতকে নিজের সহকারী পরিচালক হিসেবে নেন ফণী। কথা দিয়েছিলেন, পরের ছবিতে সুজিতকে অভিনয়ের সুযোগ দেবেন।
কিন্তু ধর্মেন্দ্র, নন্দা অভিনীত ‘আকাশদীপ’ ব্যর্থ হয়। এর পর নবাগত সুজিত কুমারকে নায়ক করে ছবি তৈরির জায়গায় ছিলেন না ফণী। কিন্তু তত দিনে সুজিতের মনে অভিনয়ের নেশা জমিয়ে বসেছে। তিনি অন্য কোনও পেশায় পা রাখার কথা ভাবতে পারছেন না। প্রযোজকের দরজায় দরজায় ঘুরতে শুরু করেন তিনি।
এই সময়ে সুজিতের সঙ্গে আলাপ হয় শক্তি সামন্তের। তিনি সুজিতের পরিচয় করিয়ে দেন জিমি নারুলার সঙ্গে। আবার সহকারী পরিচালকের জীবন শুরু হয় সুজিতের।
এই সময় প্রযোজক নাসির হুসেন এবং পরিচালক কুন্দন শাহের সঙ্গে আলাপ হয় সুজিতের। তাঁরা তাঁকে ভোজপুরী ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু সই করানোর পরে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়। শেষ অবধি সেই ছবিতে নেওয়া হয় অন্য অভিনেতাকে। এই ঘটনায় ভেঙে পড়েছিলেন তিনি।
যদিও পরে ভোজপুরী ছবিতে অভিনয় করেই নিজের কেরিয়ার শুরু করেন তিনি। সেখান থেকে সুযোগ পান হিন্দি ছবিতে। সইদা খানের বিপরীতে তাঁকে দেখা যায় ‘এক সাল পহলে’ ছবিতে। এর পর তিনি অভিনয় করেন ‘পুতলিবাঈ’ এবং ‘লাল বাংলা’ ছবিতে।
কিন্তু নায়কের ভূমিকায় তাঁর অভিনয় বক্স অফিসে সফল হচ্ছিল না। তিনি ঠিক করেন এর পর থেকে পার্শ্বনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করবেন। হিন্দি ছবিতে তিনি নায়কের তুলনায় অনেক বেশি জনপ্রিয় হন পার্শ্বনায়কের ভূমিকায়।
১৯৬৯ সালে মুক্তি পেল ‘আরাধনা’। এই ছবিতে নায়ক রাজেশ থন্নার পাশে গাড়িতে বসে তাঁর মাউথ অর্গান বাজানোর দৃশ্য হিন্দি ছবির স্মরণীয় দৃশ্যের মধ্যে অন্যতম।
শুধু পর্দাতেই নয়। এই ছবির পর থেকে অভিনয়ের বাইরেও রাজেশ খন্নার সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব ঘনিষ্ঠ হয়। ‘মেহবুবা’, ‘হাতি মেরে সাথী’, ‘অবতার’, ‘ইত্তেফাক’, ‘আন মিলো সজনা’, ‘অমর প্রেম’, ‘মেরে জীবনসাথী’, ‘রোটি’, ‘আখির কিঁউ’, ‘অমৃত’-এর সহ বেশ কিছু ছবিতে তাঁরা একসঙ্গে অভিনয় করেন।
তাঁর কেরিয়ারে উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে অন্যতম ‘আঁখেঁ’, ‘নয়া রাস্তা’, ‘জুগনু’, ‘হমরাহী’, ‘চরস’, ‘ধর্মবীর’, ‘দেশ পরদেশ’, ‘কামচোর’, ‘ক্রান্তিবীর’ এবং ‘তিরঙ্গা’।
হিন্দির পাশাপাশি ভোজপুরী ছবিতেও সুজিত কুমার ছিলেন উল্লেখযোগ্য নাম। ‘বিদেশিয়া’, ‘লোহা সিংহ’, ‘নাগ পঞ্চমী’ এবং ‘গঙ্গা হামার মাঈ’-র মতো জনপ্রিয় ভোজপুরী ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি।
তবে হিন্দির মতো ভোজপুরী ছবিতেও তিনি ছিলেন চরিত্রাভিনেতা। পাশাপাশি খলনায়কের চরিত্রেও জনপ্রিয় হয়েছিলেন তিনি। নয়ের দশকে তিনি অভিনয় থেকে সরে প্রযোজনাতে সরে যান।
পর্দার বাইরে রাজেশ খন্নার সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হয়েছিল। পাশাপাশি, তিনি ঘনিষ্ঠ ছিলেন জিতেন্দ্র, রণধীর কপূর এবং রাকেশ রোশনের সঙ্গেও। তাঁদের সঙ্গে তিনি নিয়মিত শরীরচর্চা করতেন।
৩ বছর অসুস্থ থাকার পরে ২০১০ সালে সুজিত কুমার প্রয়াত হন ক্যানসারে। তাঁর স্মরণসভায় উপস্থিত ছিল কপূর এবং রোশন পরিবার। ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন রাজেশ খন্নাও।
সুজিত কুমার অভিনীত শেষ হিন্দি ছবি ‘ক্রান্তিবীর’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯৪ সালে। তাঁর প্রযোজিত ছবিগুলির মধ্যে অন্যতম ‘অনুভব’, ‘আসমান সে উঁচা’, ‘খেল’, ‘দরার’ এবং ‘চ্যাম্পিয়ন’।
সুজিতের ছেলে যতীন কুমারও চেষ্টা করেছিলেন নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। পার্শ্বচরিত্রেও তিনি সাফল্য পাননি।