সুহাসিনী
বরাবরই ছকভাঙা জীবন পছন্দ তাঁর। হঠাৎ অভিনয় ছেড়ে দেওয়া, ষাট পেরিয়ে বিয়ে— সবেতেই স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেছেন অভিনেত্রী-পরিচালক সুহাসিনী মুলে। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের প্রযোজনায় একটি ওয়েব সিরিজ়ের গল্প ‘দাওয়াত-এ-বিরিয়ানি’তে অভিনয় করছেন তিনি। সেই সূত্রেই কলকাতায় এসেছিলেন অভিনেত্রী।
অবাঙালি হয়েও ঝরঝরে বাংলায় কথা বলেন সুহাসিনী। তবে নিজের বাংলা নিয়ে খুঁতখুঁতে তিনি। ‘‘আমার বাংলা বলায় অবাঙালি টান আছে। স্পষ্ট বুঝি। ‘জন অরণ্য’য় মানিকদাকে যখন অ্যাসিস্ট করছিলাম, তখন সেটের চারপাশে শুধু বাংলা। আমি স্পষ্ট বাংলা বলতে পারতাম না। একদিন মানিকদা বিদ্যাসাগরের বই নিয়ে হাজির। বললেন, ‘ইফ ইউ ওয়ান্ট টু লার্ন শেক্সপিরিয়ান বেঙ্গলি, ইউ মাস্ট রিড ইট।’ আমার তো মাথায় হাত!’’ হাসতে হাসতে বললেন সুহাসিনী।
‘দাওয়াত...’-এর গল্প লখনউ ও কলকাতাকে কেন্দ্র করে। সুহাসিনীর চরিত্র সেখানে গুরুত্বপূর্ণ। চরিত্র বাছাইয়ের জন্য দু’টি জিনিস মাথায় রাখেন তিনি। ‘‘গল্প বলার সময়ে আমার চরিত্রটা বলতেই হবে। অর্থাৎ আমার চরিত্র ছাড়া গল্প দাঁড়াবে না। আর এমন যেন না হয়, মার্ডার মিস্ট্রির প্রথম দৃশ্যেই আমি মারা গেলাম। অভিনয়ের সুযোগ থাকতে হবে। ‘পানিপত’-এ আমার আড়াই মিনিটের উপস্থিতি। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। এ নিয়ে আমার মধ্যে কৌলীন্যবোধ নেই,’’ সপাট জবাব সুহাসিনীর।
তাঁর কেরিয়ার শুরু ‘ভুবন সোম’ থেকে। মাঝপথেই সিনেমা ছাড়েন। সে প্রসঙ্গ উঠতেই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লেন, ‘‘যে সময়ে সিনেমা ছেড়েছিলাম, তখন সেন্সিবল কাজ করতেন কয়েক জন... সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তপন সিংহ। তখন শ্যাম বেনেগাল, বাসু ভট্টাচার্যরা ছিলেন না। বিমল রায় রিটায়ার করেছেন। ফলে বম্বেতে ইন্টেিলজেন্ট কাজের সুযোগ ছিল না। মা বললেন, পড়াশোনার সময় থাকে, অভিনয়ের নয়। যদিও সে কথা আমি মানি না। তবু পড়াশোনাতেই ফিরলাম।’’ তার পরে তথ্যচিত্র বানিয়েছেন ২৫-২৬ বছর ধরে। কিন্তু শেষে অভিনয়েই ফিরলেন। ‘‘তখন তথ্যচিত্রে এত টাকা ছিল না। ৪০ বছর বয়সে দেখি, অ্যাকাউন্টে ৪৫৮৮ টাকা ৮৬ পয়সা পড়ে। ভাবলাম, বয়স হচ্ছে। এটা চলতে পারে না। ইউনিসেফের একটি সংস্থায় কাজ করলাম। তখনই গুলজ়ার সাহেবের সঙ্গে দেখা হল। ‘হু তু তু’ পেলাম। উনি বললে লাঠি ধরেও দাঁড়িয়ে পড়তে পারি। এর পরে টিভি, ‘লগান’, ‘দিল চাহতা হ্যায়’ এই সব করে, এ বার ফিচার ফিল্ম পরিচালনা করতে চাই। চিত্রনাট্য শেষ। প্রযোজক খুঁজছি।’’
ষাট পেরিয়ে বিয়ে করেছেন পার্টিকল ফিজ়িসিস্ট অতুল গুর্তুকে। বললেন, ‘‘আমি একাই মরে যাব ভেবে প্রস্তুত ছিলাম। মা চিন্তা করলে বলতাম, ‘তোমার নাতি আছে। আমার বিয়ে না করলেও চলবে।’ তবে জীবনে এই প্রথম কোনও পুরুষ মানুষ দেখলাম, যাঁর ইগো নেই। আমাদের কাজের জগৎ আলাদা। কিন্তু দু’জনে একসঙ্গে সময় কাটাতে ভালবাসি। খুব ভাল আছি।’’
সত্যিই, জিনা ইসি কা নাম হ্যায়!