শ্রীলেখা মিত্র।
শাড়ি মানেই মনে ভেসে থাকে এক নারীর মুখ। শাড়ি মানেই মা ও যে কোনও নারীর গন্ধ মাখা অবয়ব যেন। ফিদা হুসেনের মনে না পড়া মায়ের মুখ তাই মাদার টেরিজার শাড়িতেই অবয়ব পায়।প্রচেত গুপ্তর‘পঞ্চাশটি ছোটগল্প’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘সুদক্ষিণা সিদ্ধান্ত নিল’ অবলম্বনে সুদেষ্ণা রায় ও অভিজিৎ গুহ নির্মাণ করেন ফিল্ম ‘সুদক্ষিণার শাড়ি’। এই গল্প থেকে ফিল্ম করার কথাকী করে ভাবলেন?
ফিল্মের অন্যতম পরিচালক সুদেষ্ণা রায় বললেন, “গল্পটা যেদিন পড়েছি সেদিন থেকেই ইচ্ছে ছিল ফিল্ম করার। ছোট গল্প থেকে ফিল্ম করতে গেলে তো আরও অনেক উপাদান যোগ করতে হয়। সেটা করেছি পদ্মনাভ (দাশগুপ্ত), আমি আর রানা (অভিজিৎ গুহ) মিলে।”
শাড়ির মধ্যে কী দেখলেন লেখক? প্রচেত গুপ্ত বললেন, “এই গল্পে শাড়ি প্রতীকের মতো। গল্পটার মধ্যে শাড়ি একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। শাড়ি আমার কাছে এসেছে নারীর নিজস্ব অস্তিত্ব, নিজের কথা, নিজের স্পেস, টু সাম এক্সটেন্ট অধিকার হিসেবেও বটে। নারীর সেই জায়গাটা কি দেওয়া হয়?”
ফিল্মে শাড়ির ভূমিকা ঠিক কী? আর এক পরিচালক অভিজিৎ বললেন, “একজন মহিলার অবসেশন। অবসেশনটা আপাতভাবে পাগলামি মনে হতে পারে। কিন্তু একটা জায়গায় গিয়ে তার কাছে এটা প্যাশন। পাগলামি এবং প্যাশন জিনিসটা অনেক বেশি কাছাকাছি। মেয়েটি শুধু শাড়ি কেনে না, শাড়ির ইতিহাস, শাড়ির সঙ্গে যুক্ত থাকা শ্রমিকের জীবন— সবকিছু বেরিয়ে আসে শাড়ির মধ্য দিয়ে। এটা অনেক বড় পারস্পেক্টিভের একটা গল্প।”
সুদেষ্ণা যোগ করলেন, “এটা এক সাধারণ হাউজ ওয়াইফেরও গল্প। জীবনে প্রতিনিয়ত সে লড়াই করছে। বাড়ি ম্যানেজ করাটাও একটা লড়াই। তার মধ্যেও মেয়েটির ভাল লাগার জায়গা শাড়ি। সে অনেক কষ্ট করে টাকা জমিয়ে শাড়ি কেনে। নিজের কোনও রোজগার নেই, সেটা নিয়েও খোঁটা শুনতে হয়। শাড়িকে কেন্দ্র করেই মেয়েটির উত্তরণের গল্প ছবিতে দেখা যাবে।”
ফিল্মে অভিনয় করেছেন বাদশা মৈত্র এবং শ্রীলেখা মিত্র
কিন্তু শাড়ি দ্বিতীয় লিঙ্গের মতোই দ্বিতীয় শ্রেণির মনোবাঞ্ছা নয় কি? সুদেষ্ণা সে কথাই বললেন, “বই কেনার নেশাটা দারুণ। কিন্তু শাড়ি কেনার নেশাটা নয়। অনেকে বলে শাড়ি কেন কিনছ, অ্যাটলিস্ট গয়না কেন, সেভিং হবে। কিন্তু শাড়িটাও তো একটা ওয়ার্ক অব আর্ট, একটা জিওগ্রাফি, একটা হিস্ট্রি, একটা কৃষ্টি, একটা শিল্প। যেমন রান্না করাটাকে লোকে শিল্প ভেবেছে, ক্রিয়েটিভ শিল্প এবং ইন্ডাস্ট্রি শিল্প।”
ফিল্মে অভিনয় করেছেন বাদশা মৈত্র এবং শ্রীলেখা মিত্র। অভিজিৎ শেয়ার করলেন, “এর আগে আমরা শ্রীলেখার সঙ্গে ‘মায়ের বিয়ে’ ফিল্মে কাজ করেছি। ওটাও খুব সাকসেসফুল ছিল। আবার ওর সঙ্গে কাজ করলাম। খুবই ভাল লাগছে।”
ফিল্মের ‘সুদক্ষিণা’ শ্রীলেখা মিত্র বললেন, “সুদেষ্ণাদি রানাদার সঙ্গে আমার খুব কম কাজ করা হয়েছে। কিন্তু যেটুকু কাজ করেছি খুব ভাল লেগেছে। শিক্ষিত মানুষদের সঙ্গে কাজ করতে ভাল লাগে। সহজভাবে গল্প বলার পারদর্শিতা আছে ওঁদের।”
আরও পড়ুন-প্রকাশ্যে এল দীপিকার মালতী হয় ওঠার প্রস্থেটিক মেকআপের সম্পূর্ণ ভিডিয়ো
সুদক্ষিণার কলেজের বন্ধুর চরিত্রে বাদশা। বললেন, “গল্পটায় সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি আছে সাঙ্ঘাতিক। আমার চরিত্রটা ক্যাটালিস্ট। গল্পের নায়িকার উত্তরণের পিছনে চরিত্রটার ভূমিকা আছে। ইমোশনালি ছবিটার সঙ্গে আমি খুব কানেক্টেড। খুব ভাল লেগেছে কাজটা করে।”
সুদক্ষিণা ছড়িয়ে আছে আমাদের সবার ঘরে ঘরে। শ্রীলেখা বললেন সে কথাই, “চরিত্রটার মধ্যে আমি আমার মাকে দেখতে পেয়েছি, পাশের বাড়ির কাকিমাকে দেখতে পেয়েছি। নিজেকেও হয়তো কিঞ্চিত দেখতে পেয়েছি। প্রত্যেক মহিলাকেই মেয়েটি রিপ্রেজেন্ট করছে।”
গল্প বা উপন্যাস থেকে ফিল্ম হলে মূলের থেকে ফিল্ম ভিন্ন হতে পারে। এ বিষয়ে লেখক প্রচেত গুপ্তের মত কী? তিনি বললেন, “আমি মনে করি যে লেখা ও ছবির মাধ্যম সম্পূর্ণ আলাদা। যিনি লেখেন তিনি একটা অবয়ব তৈরি করেন। পরিচালক যখন ছবি করেন, তিনি সেই অবয়ব ভেঙে আর একটা অবয়ব তৈরি করেন।একজন কলম নিয়ে কাজ করছেন, একজন ক্যামেরা নিয়ে।এমনও হতে পারে আমি যে দর্শনের কথা বলেছি, বিশ্বাসের কথা বলেছি, ভাব ভালবাসা বা বিরহের কথা বলেছি, আনন্দ বেদনার কথা বলেছি সেটা পরিচালক গ্রহণ করতে না-ও পারেন। কিন্তুলেখাটা কোথাও না কোথাও পরিচালকের পছন্দ বলেই তিনি একটা গল্প বাছেন। ফলে তাঁর ওপর সবসময় বিশ্বাস রাখতে হয়।”
ফিল্মের অন্যান্য অভিনেতা হলেন অলকানন্দা রায়, ত্রিদিব কুমার সেনগুপ্ত (পরিচালক আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্তর বাবা), পৃথা সেনগুপ্ত প্রমুখ। দেখা যাবে রবিবার,১৯ জানুয়ারি দুপুর ১টায়,জি বাংলা সিনেমা অরিজিনালস-এ।