শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়।
তারকা মানে তাঁকে ঘিরে রাশি রাশি কৌতূহল, কটাক্ষ? তারকারা নাকি কারওর ঘরনি হতে পারেন না! কিংবা কারওর মা? প্রথম সারির তারকা হয়েও যে মানুষের কাছাকাছি থাকা যায়, পরিবারকে সময় দেওয়া যায়, তার অন্যতম উদাহরণ শুভশ্রী। শনিবার অনুরাগীদের সঙ্গে মুখোমুখি আড্ডায় এসে সে কথাই আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন তিনি। শুভশ্রী এখন আর শুধুই নায়িকা নন। এক দিকে তিনি একজন দক্ষ অভিনেত্রী ও মা, বিধায়ক-পরিচালক-প্রযোজকের স্ত্রী। অন্য দিকে, তিনি শাসক দলের রাজনীতির প্রত্যক্ষ অংশ। দলীয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি যেমন ভালবাসেন, তেমন শ্রদ্ধাও করেন।
আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে শুভশ্রী কথা শুরু করলেন রাজ-পুত্র ইউভানকে নিয়ে। তাঁর জীবনে ‘মা’ হওয়া অভিনেত্রী হওয়ার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রাজ-পত্নীর কথায়, ‘‘যে নিজে মা হয়নি, সন্তানের জন্ম দেয়নি, প্রথম বার সন্তানকে কোলে নেয়নি-- তাকে এই অনুভূতি বোঝানো খুবই মুশকিল। ইউভান আমার এই সব স্বপ্ন পূরণ করেছে। তাই ইউভানের মতো দামি আমার জীবনে আর কেউ নয়।’’ মায়ের ভূমিকা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তাঁর সাফ জবাব, যে কোনও নারীকেই জীবনে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। তিনিও ব্যতিক্রম নন। কখনও সন্তানের জন্ম দেওয়ার আগে প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে, কখনও আবার অভিনেত্রীর মা হওয়ার জন্য বেড়ে যাওয়া ওজন নিয়ে ধেয়ে আসা কটাক্ষের সঙ্গে।
অভিনেত্রীর মাতৃত্ব নিয়ে আলোচনা করতে করতেই উঠে আসে নুসরতের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার প্রসঙ্গ। যা এই মুহূর্তে টলিউডের চর্চিত একটি বিষয়। শুভশ্রী বলেন, ‘‘মা হওয়ার জন্য নুসরতকে যে ভাবে প্রত্যহ ট্রোলের শিকার হয়েছে, আমার ধারণা সেটাকে ও একদমই গুরুত্ব দেয়নি। বরং নিজের মতো এই সময়টাকে উপভোগ করছে। নুসরতও হয়তো তাদেরই মনে রাখবে, যারা ওর পাশে ছিল।’’
ধীরে ধীরে ব্যস্ত হচ্ছেন শুভশ্রী। কাজের জন্য ইউভানকে ছেড়ে বেরোতে হচ্ছে তাঁকে। ‘ডান্স বাংলা ডান্স’ -এর জন্য তিনি যারপরনাই ব্যস্ত। শুভশ্রীর ব্যস্ততার প্রভাব পড়েছে ছেলের উপরেও। ছোট পর্দার রিয়্যালিটি শোয়ে মাকে দেখে চিনতে পারছে সে। কিন্তু ইউভান কি শুধুই শুভশ্রীর? অনুরাগীরা তো ইউভানকেও আপন করে নিয়েছেন। শুভশ্রী উপভোগ করেন যখন করিনা কপূর খানের ছবিতে তাঁর কোলে ছেলে তৈমুরের চেহারায় সযত্নে বসিয়ে দেওয়া হয় ইউভানের মুখ। রাগের বদলে গলা ছেড়ে হাসতে হাসতে অনায়াসে বলে ওঠেন, ‘‘ভালই তো, আমার ছেলে জাতীয় স্তরের তারকা হয়ে গেল! রাজ আর আমি এটা নিয়ে খুব মজা করি।’’
মা হওয়ার মুহূর্তেই মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন শুভশ্রী। ইউভান জন্মানোর কিছু দিন আগেই প্রয়াত হন তাঁর শ্বশুরমশাই কৃষ্ণশঙ্কর চক্রবর্তী। আজও সে কথা ভুলতে পারেননি শুভশ্রী। তিনি বললেন, ‘‘বাবা আমাকে খুব ভালবাসতেন। খুব শ্রদ্ধাও করতেন। আমার সঙ্গে সব কথা ভাগ করে নিতেন। বাবা যে আমাদের মধ্যে নেই, সেটা এখনও বিশ্বাস করতে পারি না।’’
শাশুড়ির কথাও বলতে ভুললেন না শুভশ্রী। তিনি জানালেন, শাশুড়ি মা কোনও দিন তাঁকে রান্নাঘরে পর্যন্ত ঢুকতে দেননি। শুভশ্রী বললেন, ‘‘এক গ্লাস জল চাইলেও মা রাজের কাছে চান। আমাকে কোনও দিন বলেননি এক গ্লাস জল এনে দাও।’’ শুভশ্রী যেমন পরিবারকে নিজের সবটা দিয়েছেন, পরিবারও তাঁকে নানা ভাবে প্রতিদান দিয়েছে।