আরজি করে অবস্থানে টলিউডের শিল্পীরা। ছবি: সংগৃহীত।
সাধারণ মানুষ ওঁদের রুপোলি পর্দায় দেখে অভ্যস্ত। বিনোদন দুনিয়ার সেই খ্যাতনামীরা আপাতত মাটির খুব কাছে। আরজি কর-কাণ্ডে সৃজিত মুখোপাধ্যায়, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, শোভন গঙ্গোপাধ্যায়, লগ্নজিতা চক্রবর্তী, শোলাঙ্কি রায়, অলিভিয়া সরকার, সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় আন্দোলরত চিকিৎসকদের পাশে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলেন। স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে হাসপাতালে ভাঙচুর নিয়ে প্রতিবাদে মুখর তাঁরা। স্বাধীনতা দিবসের রাতে এঁরা রাত জাগছেন হাসপাতাল চত্বরে। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছে তাঁদের দাবি, "শুনলাম, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তাণ্ডব চলেছে। অনেক যন্ত্র, রোগীদের শয্যা নষ্ট হয়েছে। সেগুলো সারানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী না হয় এ বছর ক্লাবগুলোকে পুজোর অনুদান না দিয়ে হাসপাতালকেই সেই অর্থ দিলেন। আরজি কর হাসপাতাল আবার নতুন করে সেজে উঠুক।"
একই সঙ্গে স্বাধীনতা দিবসের রাতে প্রতিবাদের সমাবেশ থেকে আওয়াজ তোলেন অবস্থানকারী চিকিৎসক পড়ুয়ারা, আর কোনও মধ্যস্থতা নয়। এ বার পুলিশমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চান তাঁরা।
দ্বিতীয় দিনের জমায়েতে দুই প্রজন্মের অভিনেতা, পরিচালক, সঙ্গীতশিল্পীরা উপস্থিত। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে গতকালের ভিড়, উন্মাদনা, প্রতিবাদের ঢেউ স্তিমিত! বিক্ষোভরত চিকিৎসক, খ্যাতনামী, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক ছাড়া আর কারও উপস্থিতি তেমন ভাবে চোখে পড়েনি! পাশাপাশি, আগের রাতের ঘটনার কথা মাথায় রেখে রাত বাড়তেই র্যাফও বেড়েছে। হাসপাতাল চত্বরে বেড়েছে পুলিশি প্রহরাও।
সেই দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সোলাঙ্কি রায়, বিরসা-বিদীপ্তার বড় মেয়ে মেঘলা দাশগুপ্ত। উভয়েই জানান, আগের দিনের জমায়েতে উত্তাল সমুদ্রের মতোই জনসমাবেশ আশা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু এসে দেখছেন সবটাই যেন থিতিয়ে পড়েছে। তাঁদের কথায়, “একের পর এক অঘটন, প্রতিবাদ। পরের বছর আবারও একই ঘটনা। পথে নামাই সার। আমরা বুঝতে পারছি না এর শেষ কোথায়।”
শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে, নেতাজির মূর্তির পাদদেশে জমায়েতে অংশ নেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। অন্য দিকে, সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে রাজি হননি শোভন। তাঁর অনুরোধ, আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের কথা তুলে ধরা হয় যেন। মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত দুই কন্যার বাবা পরিচালক বিরসা। সুজয়প্রসাদ বললেন, “এই শহরে মেয়েদের ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে জানি না। তবু আশার কথা, রাজ্য সরকার-সহ যা কিছু স্থবির এ শহরে, এই প্রতিবাদেই একটু হলেও নড়ে বসেছে।”
এই আশা আঁকড়েই উপস্থিত প্রত্যেকে স্বপ্ন দেখছেন, ‘স্বাধীনতার ৭৮, দেখবে নতুন ভোর!’ শুধু ভোর নয়, রাতেও তখন মেয়েরা নিরাপদ। কোনও মায়ের বুক আর খালি হবে না। ‘বিচার চাই’ ধ্বনি তুলে আর মেয়েদের ‘মধ্যরাত দখল’ করতে নামতে হবে না পথে।