খুব অল্প বয়স থেকেই অভিনয় করেছেন শ্রীদেবী। শিশুশিল্পী হিসেবে যাত্রা শুরু করে তার পর সুপারস্টার নায়িকা। প্রথমে শ্রীদেবীর সঙ্গে ছবির সেটে যেতেন তাঁর মা। পরে তাঁর সঙ্গী হতেন বোন, শ্রীলতা।
শুটিংয়ের খুঁটিনাটি থেকে শ্রীদেবীর আয়ব্যয়ের হিসেব— সবই থাকত শ্রীলতার তত্ত্বাবধানে। কার্যত দিদির সেক্রেটারি ছিলেন বোন। দিদির ব্যস্ত জীবনকে তিনি সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতেন।
শ্রীদেবীও বহু সাক্ষাৎকারে বোনের অবদানের কথা স্বীকার করেছেন। সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে বলিউডে জনপ্রয়িতা বাড়ল শ্রীদেবীর। তাঁকে বলা হতে লাগল ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সুপারস্টার নায়িকা। যিনি একার ক্ষমতায় কোনও ছবিকে সাফল্য এনে দিতে পারেন।
এ রকম সুপারহিট নায়িকার ম্যানেজার হওয়ার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন অনেক পেশাদারই। তাঁদের সাহায্য বিভিন্ন সময়ে নিয়েছেন শ্রীদেবী। ফলে শ্রীলতার কাজ এবং গুরুত্ব বেশ কিছুটা কমে যায় শ্রীদেবীর জীবনে। ১৯৮৯ সালে শ্রীলতা বিয়ে করেন রাজনীতিক সঞ্জয় রামস্বামীকে।
বিয়ের পরে শ্রীলতা ব্যস্ত হয়ে পড়েন নিজের সংসার নিয়ে। বোনকে মিস করতেন দিদি শ্রীদেবীও। বহু সাক্ষাৎকারে বলেওছেন সে কথা।
১৯৯০ সালে লন্ডনে ‘লমহে’ ছবির শুটিং করছিলেন শ্রীদেবী। সে সময় ভারতে তাঁর বাবা মারা যান। শুটিংয়ের ব্যস্ত সূচি থেকে সময় বার করে শ্রীদেবী শুধু এক দিনের জন্য আসতে পেরেছিলেন। বাকি সব সামলিয়েছিলেন তাঁর বোন।
১৯৯৫ সালে তাঁরা তাঁদের মাকে হারান। এই সময় থেকেই দু’জনের সম্পর্কে ফাটল ধরে। বিবাদের মূলে ছিল সম্পত্তি। মুম্বই ও চেন্নাইয়ে সম্পত্তি ছিল শ্রীদেবীর মায়ের। যদিও শ্রীদেবীর দাবি ছিল, তিনি-ই মাকে কিনে দিয়েছিলেন অধিকাংশ সম্পত্তি।
শ্রীদেবীর অভিযোগ ছিল, রাজনীতিক স্বামীর কথায় শ্রীলতা তাঁকে সম্পত্তি নিয়ে আইনি নোটিস পাঠান। সম্পর্ক এতই তিক্ত হয়ে যায় যে, ১৯৯৬ সালে বনি কপূরের সঙ্গে শ্রীদেবীর বিয়ের অনুষ্ঠানে পর্যন্ত অনুপস্থিত ছিলেন শ্রীলতা।
বনি কপূরের পরিবারও শ্রীদেবীকে দীর্ঘ দিন অবধি মেনে নেয়নি। বিয়ের পর সন্তানের জন্ম, অস্তগামী কেরিয়ার— জীবনের এই সব পর্ব একাই পাড়ি দেন শ্রীদেবী।
প্রায় ২০ বছর দুই বোনের মধ্যে কোনও সম্পর্ক ছিল না। একে অন্যের মুখদর্শনও করতেন না। শেষে বনি কপূরের উদ্যোগে তাঁদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয় বলে শোনা যায়। ২০১৩ সালে শ্রীদেবী সম্মানিত হন পদ্মশ্রী সম্মানে। সে বছর আবার কাছাকাছি আসেন দুই বোন।
শোনা যায়, ২০১৮-র ফেব্রুয়ারি মাসে দুবাইয়ে শ্রীদেবীর মৃত্যুর সময়ে ওই শহরেই ছিলেন শ্রীলতা। তবে দিদির মৃত্যু প্রসঙ্গে মুখ বন্ধই রেখেছেন। এমনকি, চেন্নাইয়ে শ্রীদেবীর মৃত্যুর পরে প্রার্থনাসভাতেও তিনি যোগ দেননি।
শ্রীদেবীর মৃত্যু নিয়েও বহু প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, এই ঘটনার পর থেকে শ্রীলতাকে প্রায় দেখাই যায়নি। প্রচারমাধ্যম থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ সরিয়ে নেন তিনি। নীরব রয়ে যান প্রিয় দিদির মৃত্যরহস্য প্রসঙ্গে। অভিনেত্রীর মৃত্যুর পরে তাঁর চেন্নাইয়ের বাংলোর মালিকানাও চলে যায় শ্রীলতার নামেই।