বলিউডের নায়িকাদের মধ্যে প্রথম সুপারস্টার তিনি। একাই পাল্লা দিতেন তাবড় নায়কদের জনপ্রিয়তার সঙ্গে। সুন্দরী এবং পরিশ্রমী শ্রীদেবী ছিলেন কাজপাগল। এক সময় এমনও গিয়েছে, এক বছরে তাঁর ১২টি ছবি মুক্তি পেয়েছে।
কিন্তু তাঁর জীবনে এ রকমও একটি বছর গিয়েছে যখন কোনও ছবিতে অভিনয়ের সুযোগই আসেনি তাঁর কাছে। সে বছর কোনও ছবিতেই সই করেননি ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’-র নায়িকা।
শ্রীদেবীর কেরিয়ারে সেই কালো বছরটি হল ১৯৯৫। শুধু পেশাদার জীবনই নয়। ব্যক্তিগত দিক দিয়েও এই বছরটি তাঁর কাছে ছিল বিষাদময়।
সে বছরই ধরা পড়ে, শ্রীদেবীর মা রাজেশ্বরী ক্যানসার আক্রান্ত। একাধিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পরে শ্রীদেবী ঠিক করেন তিনি মাকে নিয়ে যাবেন নিউ ইয়র্ক।
নিউ ইয়র্কের এক নামী হাসপাতালে রাজেশ্বরীকে ভর্তি করেন শ্রীদেবী। সেখানেই তাঁর অস্ত্রোপচারের দিন ঠিক হয়।
অস্ত্রোপচারের দিন সকাল থেকেই শ্রীদেবী ছিলেন অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। চিকিৎসকরা যখন জানান, রাজেশ্বরীর অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে, তখন তাঁর দুশ্চিন্তা কিছুটা কমে।
কিন্তু রাজেশ্বরীর জ্ঞান ফেরার পরে দেখা দেয় নতুন সমস্যা। তিনি ১০ বছরের পুরনো কথা বলতে থাকেন। কিন্তু ভুলে গিয়েছেন সাম্প্রতিক স্মৃতি।
ক্রমশ রাজেশ্বরীর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে। তিনি পরিচিতদের চিনতে পারছিলেন না। হারিয়ে ফেলেছিলেন চলার ক্ষমতাও।
এর পর প্রকাশ্যে আসে হাসপাতালের চরম গাফিলতির কথা। রাজেশ্বরীর মস্তিষ্কে যে দিন অস্ত্রোপচারের কথা ছিল, সে দিন আরও এক ভারতীয় রোগীর অস্ত্রোপচারের কথা ছিল ওই একই হাসপাতালে।
অভিযোগ, দ্বিতীয় রোগীর এক্স রে রিপোর্ট অনুযায়ী রাজেশ্বরীর মস্তিষ্কের বাঁ দিকে অস্ত্রোপচার করা হয়। অথচ তাঁর মস্তিষ্কের ডান দিকে অস্ত্রোপচারের কথা ছিল।
হাসপাতালের গাফিলতিতেই তাঁর মা মৃত্যুমুখে চলে গিয়েছেন, দাবি করেন শ্রীদেবী। এই বিতর্কিত অধ্যায় খবরে এসেছিল নিউইয়র্কের সংবাদমাধ্যমে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমেও সেই খবর প্রকাশিত হয়েছিল।
এর পর নিউ ইয়র্কের অন্য একটি হাসপাতালে এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত চিকিৎসক নতুন করে অস্ত্রোপচার করেন রাজেশ্বরীর। এ বারের অস্ত্রোপচার সফল হয়। তিনি কিছুটা সুস্থ হন আগের তুলনায়। তবে পুরোপুরি সুস্থতা অধরাই থেকে যায়।
টানা ২ মাস নিউ ইয়র্কে থাকার পর মাকে নিয়ে দেশে ফেরেন শ্রীদেবী। জীবনের এই সঙ্কটের সময়ে তাঁর পাশে ছিলেন বনি কপূর।
তবে দেশে ফেরার কয়েক মাস পরে মৃত্যু হয় শ্রীদেবীর মায়ের। নিউ ইয়র্কের অভিযুক্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেন শ্রীদেবী। শোনা যায়, হাসপাতালের তরফে তাঁকে ৭ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল।
মাকে হারিয়ে জীবনে একা হয়ে পড়েন শ্রীদেবী। পরের বছরই বনি কপূরের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।
২২ বছর পরে সেই দাম্পত্যে পূর্ণচ্ছেদ পড়ে যায় শ্রীদেবীর রহস্যমৃত্যুতে।