ইমেল মারফত অভিযোগ দায়ের করলেন শ্রীলেখা মিত্র। ছবি: সংগৃহীত।
সংবাদমাধ্যম বা সমাজমাধ্যমে হেনস্থার অভিযোগ নয়, এ বার সরাসরি পুলিশের কাছেই লিখিত অভিযোগ জানাতে চাইছেন চলচ্চিত্র জগতের নির্যাতিতারা। বাঙালি অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রকে দিয়েই এর সূচনা। জানা গিয়েছে, সোমবার তিনি কোচি সিটি পুলিশ কমিশনারের কাছে মালয়ালি পরিচালক রঞ্জিত বালকৃষ্ণনের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সম্প্রতি মালয়ালম চলচ্চিত্র জগতে মহিলা শিল্পীদের উপর নির্যাতন বা হেনস্থার অভিযোগের ভিত্তিতে রিপোর্ট পেশ করেছে হেমা কমিশন। তার পর থেকেই চলচ্চিত্র জগতে শুরু হয়েছে নাড়াচাড়া। দিন কয়েক আগে বাংলা চলচ্চিত্র জগতের পরিচিত মুখ শ্রীলেখা মিত্র মালয়ালি পরিচালক রঞ্জিত বালকৃষ্ণনের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ করেছিলেন সংবাদমাধ্যমে।
অভিনেত্রীর অভিযোগ, ২০০৯ সালের ‘পালেরি মনিক্যম: ওরু পাথিরাকোলাপাথাকাথিনতে কথা’-এর অডিশনের সময়ে তাঁকে যৌন হেনস্থা করেছেন পরিচালক রঞ্জিত। শ্রীলেখা বলেন, “অডিশনের সময় রঞ্জিত আমাকে ডেকে নিয়ে যান ওঁর শোয়ার ঘরের দিকে, ছবির গল্প বলার জন্য। আমি ভাবলাম, ভিড় এড়ানোর জন্য তিনি ডাকছেন। ঘরটি বেশ অন্ধকার ছিল। আমি ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে এক সিনেমাটোগ্রাফারের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলাম। হঠাৎ আমার হাতের চুড়িগুলি নিয়ে খেলতে শুরু করলেন পরিচালক। আমার অস্বস্তি হচ্ছিল। কারণ, আমার সঙ্গে তেমন কোনও বন্ধুত্বও ছিল না ওঁর। কিন্তু আমি নিশ্চিত হতে পারছিলাম না। তার পরে তিনি আমার ঘাড়ে ও চুলে হাত দিতে শুরু করেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি সেই ঘর থেকে বেরিয়ে যাই।”
প্রাথমিক ভাবে অভিযোগ অস্বীকার করলেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেরলের সরকারি সংস্থা ‘কেরালা চলচ্চিত্র অ্যাকাডেমি’ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন পরিচালক। সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলার পাশাপাশি এ বার শ্রীলেখা আইনি পদক্ষেপ করলেন। অভিনেত্রী জানিয়েছেন, “যে হেতু এটা একটা অপরাধ, তাই শীর্ষ আদালতের নির্দেশিকা অনুযায়ী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। ইমেল করে আমার অভিযোগ দায়ের করেছি।”
হেমা কমিটি রিপোর্ট প্রকাশের পরই আইনি পদক্ষেপ করতে শুরু করেছেন হেনস্থার শিকার একাধিক মহিলা। কেরল সরকার ইতিমধ্যেই এক বিশেষ তদন্তকারী দল (এসআইটি) গঠন করেছে মালয়ালম চলচ্চিত্র জগতে যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে। সেখানে এক নবীন লেখক যৌন হেনস্থার অভিযোগ জানিয়েছেন পরিচালক ডিকে প্রকাশের বিরুদ্ধে। এর আগে অভিনেতা প্রযোজক বাবুরাজের নামেও যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেছিলেন এক অভিনয়শিল্পী। ২০১৯ সালের সেই অভিযোগ এ বার পুলিশের কাছে লিখিত ভাবে করতে চান বলে দাবি করেছেন তিনি।
গত সপ্তাহে হেমা কমিটির রিপোর্ট প্রকাশের পরই কেরল সরকারের তরফ থেকে সাত উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিককে নিয়ে এক বিশেষ তদন্তকারী দল করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে রয়েছেন চার জন মহিলা আইপিএস আধিকারিক।
তবে অভিযুক্তেরাও শুরু করেছেন আইনি পদক্ষেপ। যেমন অন্য একটি ঘটনায় ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ মালায়ালাম মুভি আর্টিস্ট (এএমএমও)’-র সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন এক বর্ষীয়ান অভিনেতা। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। সেই অভিনেতাই এ বার কেরল পুলিশের কাছে নির্যাতিতার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ দিকে সোমবার সন্ধ্যায় সমাজমাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্র জগত ঘটে চলা হেনস্থার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন ঋতাভরী চক্রবর্তীও। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলকে উল্লেখ করে তিনি অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁর আবেদন, যাতে বাংলার চলচ্চিত্র জগতেও বিভিন্ন হেনস্থা নিয়ে দ্রুত তদন্ত শুরু হয়।
ঋতাভরী তাঁর পোস্টে লেখেন, “মালয়ালম চলচ্চিত্র জগতের যৌন হেনস্থার ঘটনা প্রকাশ্যে এনেছে হেমা কমিশনের রিপোর্ট। আমি ভাবছি, বাংলা চলচ্চিত্র জগতে কেন এই ধরনের পদক্ষেপ করা হচ্ছে না? প্রায় এই একই ধরনের ঘটনা আমার সঙ্গে ঘটেছে। জানি আরও কয়েক জন টলিপাড়ার অভিনেত্রীর সঙ্গেও ঘটেছে।” সরাসরি ঋতাভরীর নিশানায় রয়েছেন বাংলা ছবির জগতের নায়ক, পরিচালক থেকে প্রযোজকেরা।