Indian Share Market

অস্থির বাজারে নজর থাক কিছু মাপকাঠিতে

শেয়ার বাজার আসলে এতটাই সংবেদনশীল লগ্নিস্থল। বড় কারণে তো বটেই, অনেক সময়ে এত ছোটখাটো কারণে সূচকের উত্থান-পতন হয় যে সাধারণ লগ্নিকারীদের পক্ষে তার সূত্র খুঁজে পাওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে ওঠে।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ০৬:১১
Share:

— প্রতীকী চিত্র।

কয়েক দিনের ধারাবাহিক পতন। তার পরে এক দিন বিপুল উত্থান। অদূর ভবিষ্যতেও গতিপথ কী হবে তার নিশ্চয়তা নেই!

Advertisement

শেয়ার বাজার আসলে এতটাই সংবেদনশীল লগ্নিস্থল। বড় কারণে তো বটেই, অনেক সময়ে এত ছোটখাটো কারণে সূচকের উত্থান-পতন হয় যে সাধারণ লগ্নিকারীদের পক্ষে তার সূত্র খুঁজে পাওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে ওঠে। আবার বাজার যখন সামগ্রিক ভাবে ওঠে, তখনও কিছু শেয়ারকে নামতে দেখা যায়। আবার হয় এর উল্টোটাও। এতটা না হলেও ওঠাপড়া চলে ঋণপত্রের (বন্ড) বাজারেও। শেয়ার এবং বন্ড বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মিউচুয়াল ফান্ডের ন্যাভ (নেট অ্যাসেট ভ্যালু) বাড়ে বা কমে। এখন প্রশ্ন হল, কোন কোন কারণে হয় এই উত্থান-পতন? কারণগুলি সম্পর্কে ধারণা থাকলে আগে থেকে অনুমান করা যায় বাজার কোন পথে যেতে পারে। দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বাজার বিশেষজ্ঞেরা এই সব কারণ অনুসন্ধান করেই সূচক সম্পর্কে পূর্বাভাস দিয়ে থাকেন। যদিও এই সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে কোনও ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। তবে কার্যকারণ সম্পর্কে ধারণা থাকলে লগ্নির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়। আজকের প্রতিবেদনে বাজারের গতিপথের প্রাথমিক কিছু শর্ত নিয়ে আলোচনা করব।

  • মূল্যবৃদ্ধির হার বাড়লে সুদ বৃদ্ধির একটা প্রবণতা দেখা যায়। সুদ বাড়লে শিল্পের খরচ বাড়ে। কমে শিল্প সংস্থাগুলির মুনাফা। ফলে ঋণ নির্ভর সংস্থার শেয়ারের দাম কমে। মূল্যবৃদ্ধির হার এবং সুদ কমলে হয় এর ঠিক উল্টোটা। অর্থাৎ, বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়। ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের শেয়ারগুলি চাঙ্গা হয়।
  • সুদ বাড়লে বন্ডের দাম কমে, ইল্ড বাড়ে। লোকসান গুনতে হয় বন্ডের লগ্নিকারীদের। খরচ বাড়ে সরকারের। অন্য দিকে, ঋণে সুদ কমলে খোলা বাজারে বন্ডের দাম বাড়ে এবং ইল্ড কমে। ফলে বন্ড এবং বন্ড ফান্ডের লগ্নিকারীদের মুনাফা বাড়ে।
  • দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা থাকলে বাজারে নথিভুক্ত সংস্থাগুলির আর্থিক ফলাফলে তার প্রতিফলন ঘটে। ফলাফল ভাল হলে তাদের শেয়ার দর ঊর্ধ্বমুখী হয়। এই কারণে সংস্থাগুলির ত্রৈমাসিক ফল এবং দেশের জিডিপি সংক্রান্ত পরিসংখ্যানের দিকে নজর রাখা উচিত।
  • অর্থনীতি এবং সংস্থার ফলাফল ভাল হলে তা বিদেশি লগ্নিকেও আকর্ষণ করে। লগ্নি বাড়ে দেশের ভিতর থেকেও। এর ফলে চাঙ্গা হয় শেয়ার বাজার।
  • বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি বা হ্রাসের প্রভাব থাকে জাতীয় অর্থনীতির উপরে। লগ্নিকারীদের সে দিকেও নিয়মিত নজর রাখা উচিত।
  • বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে শেয়ার বাজার উত্তাল হতে পারে। ঠিক যা হচ্ছে এখন। ফলে বুঝতে হবে কোন যুদ্ধের কী ধরনের প্রভাব ভারতীয় অর্থনীতির উপরে পড়তে পারে।
  • দেশের নির্বাচন তো বটেই, আমেরিকার নির্বাচনেরও প্রভাব দেখা যায় শেয়ার বাজারে। নতুন সরকার আর্থিক ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে শেয়ার বাজার।
  • আমেরিকার অর্থনীতিতে উন্নতি দেখা গেলে তা ভারতের পক্ষেও ভাল। এতে ভারত থেকে সে দেশে রফতানি বাড়তে পারে। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি রফতানি। অন্য দিকে, চিনের অর্থনীতি ঊর্ধ্বগতি পেলে তা ভারতের পক্ষে ভাল না-ও হতে পারে। কারণ, সে ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি এ দেশ থেকে বিপুল পুঁজি প্রত্যাহার করে চিনে পাড়ি দিতে পারে। যার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে শেয়ার বাজারে। যা গত দেড় মাস ধরে দেখা যাচ্ছে।
  • আবহাওয়ার বড় প্রভাব থাকে অর্থনীতি তথা শেয়ার বাজারের উপরে। দেশ ভাল বর্ষা পেলে তা আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দেয়। কারণ, কৃষিফলন ভাল হলে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে থাকে। অন্যান্য পণ্যেরচাহিদা বাড়ে।
  • শেয়ার সংক্রান্ত দুর্নীতি এবং জালিয়াতির নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শেয়ার সূচকে। এই ধরনের অভিযোগ বার বার উঠতে থাকলে দেশি-বিদেশি লগ্নিকারীরা বাজারের উপরে আস্থা হারাতে পারেন। এ ব্যাপারে বাজার নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সেবির ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে লগ্নিকারীদের আস্থা ফেরানোর ক্ষেত্রে। গত সপ্তাহে এই ধরনের একটি অভিযোগে শেয়ার বাজারে বিপুল পতন হয়েছিল।
  • শেয়ার বাজারের উপরে কেন্দ্রীয় বাজেটের গুরুত্ব অপরিসীম। বাজার দেখতে চায়, বিভিন্ন শিল্পের উন্নয়নের জন্য বাজেটে কী রাখা হয়েছে। কর বাবদ মানুষের কতটা সুবিধা হল। ঘাটতি কতটা বাড়ল অথবা কমল। সরকার পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য কত খরচ করবে এবং বাজার থেকে সরকারকে কত ঋণ করতে হবে।
  • দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি মূল্যায়ন সংস্থার পূর্বাভাসের দিকেও নজর রাখা উচিত লগ্নিকারীদের। মূল্যবৃদ্ধি এবং জিডিপির ব্যাপারে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমানও প্রভাব ফেলে শেয়ার বাজারে। শেয়ার এবং বন্ড বাজারের গতিপ্রকৃতির ভিত্তিতে ওঠানামা করে ফান্ডের ন্যাভ।
Advertisement

(মতামত ব্যক্তিগত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement