ইঞ্জিনিয়ার হয়েও অবিচল থেকেছেন নিজের শখের প্রতি। চালিয়ে গিয়েছেন অভিনয়। তার পরেও হয়ত বলিউডে সে ভাবে সাফল্য পাননি। কিন্তু ছাপিয়ে গিয়েছেন অন্য দিকে। পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে আজ সাধারণ মানুষের নয়নের মণি, অভিনেতা সোনু সুদ।
পঞ্জাবের মোগা শহরে সোনুর জন্ম ১৯৭৩ সালের ৩০ জুলাই। স্যাক্রেড হার্ট স্কুলের ছাত্র সোনু নাগপুরের যশবন্তরাও চহ্বন কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে পাশ করেন। তিনি একজন ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার।
মডেলিংয়ের হাত ধরে পা রাখেন অভিনয়ে। ১৯৯৯ সালে প্রথম অভিনয়, তামিল ছবি ‘কাল্লাঝাঘার’-এর পর দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন সোনু।
বলিউডে প্রথম অভিনয় ২০০২ সালে। ‘শহিদ-ই-আজম’ ছবিতে সোনু ছিলেন ভগৎ সিংহের ভূমিকায়। অভিনেতা হিসেবে প্রথম পরিচিত পান মণিরত্নমের পরিচালনয়া ‘যুবা’ ছবিতে। সেখানে তিনি অভিষেক বচ্চনের ছোট ভাইয়ের ভূমিকায় ছিলেন।
বলিউডে সোনুর ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য হল ‘সিং ইজ কিং’, ‘নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস: দ্য ফরগটেন হিরো’, ‘দবং’, ‘আশিক বনায়া আপনে’, ‘গব্বর ইজ কিং’ এবং ‘সিম্বা’। তবে বলিউডের তুলনায় দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে সোনু অনেক বেশি জনপ্রিয় ও পরিচিত নাম।
কেরিয়ারে এসেছে বিতর্কও। ‘মণিকর্ণিকা: দ্য কুইন অব ঝাঁসি’ ছবির শুটিংয়ের মাঝপথে বেরিয়ে যান সোনু। ঘটনার জেরে ছবির মূল অভিনেত্রী কঙ্গনা অভিযোগ করেন, সোনু মহিলা পরিচালকের নির্দেশনায় কাজ করতে অনিচ্ছুক।
এর তীব্র প্রতিবাদ জানান সোনু। বলেন, এর আগে তিনি ফারহা খানের নির্দেশনায় কাজ করেছেন। ফারহার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও খুব ভাল। পরিচালক নারী না পুরুষ, তাতে তাঁর কিছু এসে যায় না। কিন্তু নির্দেশকের দক্ষতা তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
স্ত্রী সোনালি এবং দুই ছেলে আয়ান ও ঈশানের ঘেরাটোপে সোনু আদ্যন্ত ঘরোয়া। সোনুর বাবা শক্তি সাগর সুদ এক জন ব্যবসায়ী। মা, সরোজ সুদ শিক্ষিকা। দিদি মনিকা এবং বোন মালবিকার সঙ্গে বড় হয়েছে সোনু। তাঁর দিদি মনিকা এক জন বিজ্ঞানী।
স্ত্রী সোনালি এবং দুই ছেলে আয়ান ও ঈশানের ঘেরাটোপে সোনু আদ্যন্ত ঘরোয়া। সোনুর বাবা শক্তি সাগর সুদ এক জন ব্যবসায়ী। মা, সরোজ সুদ শিক্ষিকা। দিদি মনিকা এবং বোন মালবিকার সঙ্গে বড় হয়েছে সোনু। তাঁর দিদি মনিকা এক জন বিজ্ঞানী।
জীবনের পথ পুরোটাই মসৃণ ছিল না। আরও অনেকের মতো সোনুর জীবনেও সাফল্য এসেছে পরিশ্রমের ধাপ বেয়েই। সোনু ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার আগে কয়েক দিনের জন্য কাজ করেছেন তাঁর বাবার শোরুমেও।
মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা সম্বল করে সোনু মুম্বই এসেছিলেন। প্রথম দিকে থাকতেন আরও ছ’জনের সঙ্গে, এক কামরার একচিলতে ফ্ল্যাটে। খরচ জোটাতে কাজ নিয়েছিলেন বেসরকারি অফিসে।
অফিসের কাজে ঘুরতে হত মুম্বইয়ের নানা প্রান্তে। বরিভেলি থেকে চার্চগেট যাওয়ার জন্য লোকাল ট্রেনই ছিল তাঁর পরিবহণ। প্রতি মাসে বেতন পেতেন সাড়ে চার হাজার টাকা।
আজ সোনু সুদের গ্যারাজে পোর্শে আর অডি কিউ দাঁড়িয়ে থাকলেও অতীতের ঘামরক্ত ঝরা দিনগুলো তিনি ভোলেননি। দেশ জুড়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা দেখে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেননি তিনি।
সোনু সুদ মুম্বইয়ে আটকে পড়া ভিন্ রাজ্যের কিছু মানুষকে ঘরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন। বিষয়টা হঠাৎ করেই শুরু হয়। শুরু হয় টুইট দিয়ে। একাধিক ব্যক্তি সোনু সুদকে ট্যাগ করে টুইট করে জানান, তাঁরা মুম্বইয়ে আটকে পড়েছেন। তাঁদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করলে ভাল হয়।
এমন আরও কয়েক জনের টুইটের উত্তর দেন সোনু সুদ। তিনি একাধিক বাসের ব্যবস্থা করেন মুম্বই থেকে তাঁদের বাড়ি ফেরার জন্য। এমনকি, নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সেই সব ব্যবস্থা তদারকি করেন। সোনু সুদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তার ভিডিয়ো আপলোড হয়েছে।
সাধারণ মানুষের অনেকেই সোনু সুদের এই উদ্যোগের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বলিউডে ভাল সুযোগ বা পুরস্কার হয়তো তাঁর নামের পাশে নেই। কিন্তু এই মুহূর্তে সোনু সুদের সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইল এবং মোবাইলের ইনবক্স ভরে গিয়েছে সাধারণ মানুষের শুভেচ্ছা ও পরিযায়ী শ্রমিকদের ধন্যবাদ-বার্তায়।