ভল্লালদেব
মারকাটারি ভিলেন না হলে কি হিরো দুমদাম অ্যাকশন দেখাতে পারে? ভিলেনকে কুপোকাত করবে, তবেই না হিরোর ‘মর্দানি’ প্রমাণিত হবে! হিন্দি ছবির দর্শকের কাছে তাই হিরোর মতোই এক সময় গুরুত্বপূর্ণ ছিল ছবির খলনায়ক বা নায়িকা। কখনও বা হিরোর জৌলুসকে ছ’গোল দিয়ে পিছনে ফেলে দিয়েছে ছবির ভিলেন। গব্বর সিং, মোগ্যাম্বো, শাকালের মতো চরিত্রকে ভয় পেয়েই আমাদের বেড়ে ওঠা। দিনে-কালে বলিউডের বয়স বেড়েছে। সময়ের সঙ্গে তাল রাখতে ভিলেনকে পাল্টাতে হয়েছে সিগনেচার স্টাইল।
হিন্দি ছবির কনটেন্ট যে ভাবে বদলাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই ছবিতে এখন ভিলেন অবান্তর। মোটা কালো দাগের খলচরিত্রের বদলে আলো-আঁধারির মিশেলে ধূসর চরিত্রই এখনকার ভিলেনের পরিপূরক। তবে আমাদের চোখ যে ভাবে দেখতে অভ্যস্ত, তা কি রাতারাতি বদলে ফেলা যায়?
২০১৭–র তিন নজরকাড়া ভিলেন ‘ওল্ড ইজ গোল্ড’-এর মন্ত্রে বিশ্বাসী। পরদায় তাদের দেখতে দেখতে কিন্তু দর্শকের অনেকেরই মনে হয়েছে, তাদের খতম করতে কখন হিরোর এন্ট্রি হবে?
ভল্লালদেব: এই মুহূর্তে দেশে যদি একটি জনসমীক্ষা করা হয়, তবে জনপ্রিয়তায় অমরেন্দ্র বাহুবলীর চেয়ে খুব বেশি পিছিয়ে থাকবে না ভল্লালদেব। এই চরিত্রে অভিনয় করে রানা ডাগ্গুবতী দর্শকের থেকে নিন্দে কম, ভালবাসা বেশি পেয়েছেন। প্রভাসের মতোই তাঁর মহিলা ভক্তের সংখ্যাও লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। চরিত্রটির একটি বড় বৈশিষ্ট্য ছিল তার রাজকীয়তা। ভিলেন হলেও রাজকীয়তার মোড়ক ছেড়ে কখনও বেরিয়ে আসেনি সে। লম্বা-চওড়া সংলাপের চেয়েও রানার বডি ল্যাঙ্গোয়েজ, চাহনি আর পেশিবহুল নির্মেদ শরীর দেখেই হাঁ হয়ে গিয়েছিল দর্শক।
মাধবরাও, হাসিনা, আবু
আবু উসমান: সলমন খানের ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’ প্রমাণ করল, সলমন জিন্দা হ্যায়। আর বলিউড চাইলে ইরানের প্রতিভাকেও খুঁজে বার করতে পারে। টাইগারের বিপরীতে জঙ্গিনেতা আবু উসমানের চরিত্রে সাজ্জাদ দেলাফ্রুজকে নিয়ে ইতিমধ্যে হইচই পড়ে গিয়েছে। ‘বেবি’র পর এটি তাঁর দ্বিতীয় হিন্দি ছবি। এ ক্ষেত্রেও চরিত্রটির লুক তার প্লাস পয়েন্ট। জঙ্গিনেতার নির্মমতা, শ্যেন বুদ্ধি ধরা পড়েছে সাজ্জাদের হিমশীতল চাহনিতে। সঙ্গে তার ইরাকি লব্জে ইংরেজি বলাও চরিত্রটিকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে।
আরও পড়ুন: জন্মদিনে প্রাক্তনদের ঢল
মাধবরাও শেলার: ছোট পরদার জনপ্রিয় রাশভারী ‘মিস্টার বাজাজ’ চাইলে খলনায়কের চরিত্রও যে ফুটিয়ে তুলতে পারেন, তার প্রমাণ ‘কাবিল’। হৃতিক রোশনের এই রিভেঞ্জ ড্রামায় রোহিত-রণিত (রায়) দুই ভাইকেই নেগেটিভ চরিত্রে দেখা গিয়েছে। পরদায়ও তাঁরা দুই ভাই। তবে ছবিতে ছোট ভাই অমিতকে (রোহিত) যে ভাবে আগলে রেখেছে মাধব, অভিনয়ের চুলচেরা বিশ্লেষণেও বড় ভাই অনেকটাই এগিয়ে। তাই হৃতিকের সঙ্গে রণিতের দৃশ্যগুলি বেশি দাগ কেটেছে।
হাসিনা পার্কার: এত ডাকসাইটে ভিলেনের পাশে হাসিনা পার্কারকে একটু ঠান্ডা মনে হতে পারে। তবে বলিউডের নতুন সারির অভিনেত্রী শ্রদ্ধা কপূর এই চরিত্রের মধ্য দিয়ে সাহসী পদক্ষেপ করেছেন।
সত্তর-আশির দশকের ভিলেনের সঙ্গে এখনকার ভিলেনের তুলনা করলে মিল পাওয়া যাবে না। কারণ এক সময়ে ভিলেন ছিল হিন্দি ছবির ‘স্টক ক্যারেক্টার’। সেখানে অমরেশ পুরীর স্টাইল এক রকম, আশুতোষ রাণা আবার উল্টো মেরুর। আগেকার ভিলেনদের মুখে হিট সংলাপও থাকত। কারও স্টাইল ছিল চুরুট, কারও বা এক চোখে বাঁধা পট্টি। হালফিল সুপারহিরো মুভিতে ভিলেনও হয়ে উঠেছে সুপারভিলেন। যেমন ‘কৃশ থ্রি’তে কাল (বিবেক ওবেরয়), ‘রা ওয়ান’-এ অর্জুন রামপাল। তবে ‘মর্দানি’র তাহের রাজ ভাসিন ও ‘পিঙ্ক’-এ অঙ্গদ বেদীর চরিত্রও ভিলেনের সমার্থকই বলা যায়। কারণ, তাদের নারীবিদ্বেষী, একপেশে চিন্তাভাবনাই এই সময়ের মেয়েদের কাছে বড় প্রতিবন্ধকতা।