রণজয়-সোহিনী
অভিনেত্রী সোহিনী সরকার ও অভিনেতা রণজয় বিষ্ণুর সম্পর্ক নিয়ে অনেক গসিপ চললেও, কখনওই প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি তাঁরা। তবে এ বার আর লুকোছাপা নয়... তাঁরা বলছেন, ‘ইন আ রিলেশনশিপ’। এই জুটির কাছে দাবি ছিল, ফোটোসেশনে তাঁদের কেমিস্ট্রি যেন ধরা পড়ে।
‘‘দার্জিলিংয়ের রাস্তায় আমি শাহরুখ আর রণজয় কাজল হয়ে, বিছুটি পাতা দিয়ে আমায় প্রোপোজ় করেছিল,’’ ব্ল্যাক কফির কাপে চুমুক দিয়ে হাসতে হাসতে বলছিলেন সোহিনী। রণজয়ের জন্য এল ক্যাপুচিনো। অভিনেত্রীকে মাঝপথে থামিয়ে রণজয় বললেন, ‘‘একসঙ্গে প্রথম কাজ ছিল ‘জাজমেন্ট ডে’ সিরিজ়। এর আগে কেবল ফোটোশুট করেছি একসঙ্গে। বন্ধুত্ব অবশ্য ২০১৩ থেকেই। শুরু থেকে আমাদের সম্পর্ক ছিল খুব মজার, এখনও তাই। একে অপরকে খোঁচা দিয়ে কথা বলতে মজা পাই। প্রেমে পড়ি দার্জিলিংয়েই।’’
শুটিং চলাকালীন সোহিনী অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর পুরো দায়িত্ব একা কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন রণজয়! ‘‘পড়ে গিয়েছিলাম আমি। নার্ভের সমস্যা দেখা দেওয়ায় অ্যাম্বুল্যান্সে করে শুটিংয়ে পৌঁছতাম। রণ তখন যে ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিল, আমার পাশে ছিল, তার পর ওকে না ভালবেসে পারিনি,’’ ঠোঁটে মিষ্টি হাসি সোহিনীর। তবে দু’জনকে এক সূত্রে বাঁধতে রণর কেয়ারিং স্বভাবের সঙ্গে দার্জিলিংয়ের রোম্যান্টিকতাও মিশেছিল।
ইন্ডাস্ট্রির গুঞ্জন, সোহিনী এর আগে অনেক বার প্রেমে পড়েছেন। ‘ভূমিকন্যা’র সময়ে অনির্বাণ ভট্টাচার্যের সঙ্গে তাঁর গাঢ় প্রেম ছিল বলেই শোনা গিয়েছিল। কতটা সত্যি? ‘‘দু’জন সুন্দর দেখতে ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে থাকলে প্রেমে পড়বে, এটা প্রকৃতির নিয়ম। আর রণও বলে, আমার সঙ্গে অনির্বাণকে বেশ মানায় নাকি,’’ রহস্যময় হাসি নায়িকার চোখে। তা হলে এই সম্পর্ক নিয়ে কতটা সিরিয়াস দু’জনে? ‘‘আমি যে কোনও সম্পর্ক নিয়েই ভীষণ সিরিয়াস,’’ জবাব সোহিনীর। আবার ও দিকে রণজয়ের গার্লফ্রেন্ডেরও লম্বা লিস্ট ছিল। সোহিনীর প্রতি তিনি কতটা সিরিয়াস, তা নিয়ে বললেন, ‘‘প্রত্যেক মানুষের জীবনে শূন্য জায়গা থাকে। আমার সেই শূন্যস্থানটি পূরণ করেছে সোহিনী। যে জন্য ওর উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। আমার অনেক সিক্রেট ওর সঙ্গে শেয়ার করেছি, যা আগে কারও সঙ্গে করিনি।’’
কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির গুঞ্জন, এই আকর্ষণ ক্ষণিকের। ‘‘ওর সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা ঘুরেফিরে, মজা করে কাটানো যায়। দিনের পর দিন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা দু’জনের একসঙ্গে থাকতে ভাল লাগে। দেখা যাক, এর পর জীবন আমাদের কোন দিকে নিয়ে যায়,’’ দার্শনিকসুলভ উত্তর সোহিনীর। এখনই লিভ-ইন করতে উৎসাহী নন তাঁরা। যদিও প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে রণজয় লিভ-ইন করতেন। তা সুখের হয়নি বলেই এই সম্পর্ককে সময় দিতে চাইছেন দু’জনে।
‘‘আমার বন্ধু, গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে তৃতীয় ব্যক্তির কোনও খারাপ মন্তব্য শুনতে পারব না,’’ সোহিনীর প্রতি পজ়েসিভনেসের কথা নিজেই স্বীকার করে নিলেন রণজয়। আবার সোহিনী বললেন, ‘‘রণর কাছ থেকে পাওয়া সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত, আমার জন্মদিনে ওর হাতে আঁকা আমার ছবি ও পায়েস।’’ একটা বিষয়ে দু’জনেই একমত, ‘‘আমাদের বন্ডিং স্ট্রং। এটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।’’
পাঁচ-ছ’বার ঝগড়া হলেও মিটিয়ে নিয়েছেন দু’জনেই। ‘‘দু’জন মানুষ একসঙ্গে থাকতে চাইলে ঠিক মিটমাট করে নেওয়া যায়। বেশি কিছু হলে আমি কেঁদে ফেলি,’’ লাজুক গলায় সোহিনীর উত্তর। পাশ থেকে রণজয়ের সলজ্জ স্বীকারোক্তি, ‘‘তাতেই আমার রাগ জল হয়ে যায়।’’ সোহিনীর আবেগে যেমন রাশ টানেন রণ, তেমনই আবার তাঁকে ডিসিপ্লিনও শেখান। ‘‘বেডরুমে জুতো পরে ঢোকে, বিছানায় মোজা পরে বসে সোহিনী,’’ অভিযোগ তাঁর।
সোহিনীকে ‘সোশ্যালাইজ়’ করার দায়িত্ব নিয়েছেন রণজয়। বৃষ্টিতে নিজের বাড়ির জানালার ধারে বসে বই পড়তে, বাড়ির পোষা বেড়ালকে যতটা আদর করতে ভালবাসেন, ততটাই নীরব থাকেন সোশ্যাল সাইটে। কিন্তু কেন? ‘‘কোনও সংবিধানে লেখা আছে নাকি, আমায় সব সময়ে পোস্ট করতে হবে,’’ উত্তরও মাপা সোহিনীর।
এই মুহূর্তে রণজয়ের হাতে রয়েছে ‘ষড়রিপু টু’। সোহিনী শুট শেষ করেছেন ‘আগন্তুক’-এর। পায়ে অস্ত্রোপচারের জন্য স্বপ্না বর্মণের বায়োপিক আপাতত স্থগিত।
‘‘আমি যা ভাবছি, তুই-ও কি তাই ভাবছিস?’’ এই কথা দিয়েই শুরু হয়েছিল দু’জনের সম্পর্ক। একই রকম ভাবনাই তাঁদের সম্পর্কের রসায়ন। এখন দেখা যাক, বিয়ের ভাবনায় একমত হন কি না সোহিনী-রণজয়।
ছবি: শুভঙ্কর বারুই; মেকআপ: উজ্জ্বল দত্ত; পোশাক (রণজয়): দেব আর নীল পোশাক (সোহিনী): জুহি বেনগানি; জুয়েলারি: সাক্ষী ঝুনঝুনওয়ালা; স্টাইলিং: রুদ্র সাহা
লোকেশন: ফেয়ারফিল্ড বাই ম্যারিয়ট, রাজারহাট ; ফুড পার্টনার: কাভা, রাজারহাট