(বাঁ দিক থেকে) ‘সিংহম আগেন’ ছবির পরিচালক রোহিত শেট্টি, দীপিকা পাড়ুকোন এবং রণবীর সিংহ। ছবি: সংগৃহীত।
বাঙালির পরশুরাম (রাজশেখর বসু) হনুমানকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। রামের একনিষ্ঠ ভক্ত হনুমানের সঙ্গেও সাক্ষাৎ হয়েছিল বানর-রানি চিলিম্পার। বাল্মিকী বা কৃত্তিবাস তাঁদের রামায়ণের কাহিনিতে কোথাও হনুমানের সঙ্গিনীর কথা উল্লেখ করেননি। কিন্তু রসিক পরশুরামের কল্পনা-কুঠারের আঘাতে নড়ে বসেছিল হনুমান। তারও মনে হয়েছিল, জীবনে সঙ্গিনী প্রয়োজন। খোঁজ করতে করতেই সন্ধান মিলেছিল চিলিম্পার। তবে বিস্তর গোলমালের পর শেষ পর্যন্ত নাক-কান মুলে সীতাদেবীর কাছে আজীবন অকৃতদার হয়ে পূর্বপুরুষদের জলদান করার বরই চেয়েছিলেন পরশুরামের হনুমান। পরশুরামের ‘হনুমানের স্বপ্ন’ গল্পটি রামায়ণের ‘স্পিন অফ’ হলেও তা বিশুদ্ধ কল্পনা। ভারতীয় সংস্কৃতিতে হনুমান একান্ত ভাবেই ‘অ-রোম্যান্টিক’ এক ব্যক্তিত্ব। তাঁর সারা জীবন রাম-সীতার চরণেই নিবেদিত।
ধরেই নেওয়া যায় পরশুরামের গল্পটি পড়েননি, তবু সে পথেই হাঁটলেন পরিচালক রোহিত শেট্টিও। এক পর্দায় রণবীর সিংহ-দীপিকা পাড়ুকোনকে এনেও কোনও রোম্যান্টিক দৃশ্য তৈরি করলেন না তিনি। বললেন, “মানুষের আবেগের কথা ভাবতে হবে তো!” আসলে রোহিতের ‘সিংহম আগেন’ তৈরি হয়েছে রামায়ণের ছায়ায়। সেখানে রণবীরকে গড়া হয়েছে হনুমানের আদলে। তাই কোনও ভাবেই তাঁর বিপরীতে রোম্যান্টিক করে তোলা গেল না দীপিকাকে। যদিও রোহিত স্বীকার করলেন, আসলে তিনি ভয় পেয়েছিলেন।
দীপাবলিতে মুক্তি পেয়েছে পরিচালক রোহিত শেট্টির ‘পুলিশ ব্রহ্মাণ্ড’-এর সাম্প্রতিক ছবি ‘সিংহম আগেন’। অজয় দেবগন, করিনা কপূর খান, অক্ষয় কুমার, জ্যাকি শ্রফ, টাইগার শ্রফের পাশাপাশি এ ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছেন রণবীর-দীপিকাও। চিত্রনাট্য অনুযায়ী তাঁরা দু’জনেই পুলিশ আধিকারিক। কিন্তু, সুযোগ থাকলেও তাঁদের মধ্যে কোনও প্রেমের সম্পর্ক দেখাননি পরিচালক রোহিত শেট্টি। অথচ, দীর্ঘ দিন ধরেই এই ছবি নিয়ে দর্শকের মধ্যে আগ্রহ ছিল, বিশেষত দীপিকাকে নিয়ে। কারণ, রোহিতের ‘পুলিশ ব্রহ্মাণ্ডে’ তিনিই প্রথম মহিলা আধিকারিক, শক্তি।
কেন রোম্যান্টিক সম্পর্ক দেখালেন না রোহিত? সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রোহিত বলেন, “যখন রামায়ণ নিয়ে কাজ হয়, তখন সেই মহাকাব্যের সঙ্গে বহু মানুষের জড়িত থাকা আবেগের কথাও ভাবতে হয়। আসলে এর সঙ্গে আমার আবেগও জড়িয়ে রয়েছে। আমরা হয়তো রণবীর দীপিকার ভালবাসার দিকটা দেখাতে পারতাম। কিন্তু ছবিতে রণবীরের আগমন তখনই ঘটছে, যখন হনুমানের কাহিনি বর্ণিত হচ্ছে। তাই সচেতন ভাবেই প্রেমের প্রসঙ্গ সরিয়ে রাখা হয়েছে।” এমনকি গোটা ছবিতে কোনও গানও ব্যবহার করেননি। তিনি বলেন, “সচেতন ভাবেই প্রেমের অনুষঙ্গে গানও ব্যবহার করা হয়নি। কারণ, ছবি তৈরি করে কেউই কারও ভাবাবেগে আঘাত করতে চান না। বিশেষত, রামায়ণের মতো বিষয় নিয়ে কাজ করতে গেলে একটু বেশিই সচেতন থাকতে হয়।”
রোহিত স্পষ্ট জানিয়েছেন তিনি ভয় পেয়েছিলেন। এমনকি ছবি মুক্তির সময়ও সেই ভয় তাঁদের তাড়া করেছে বলে তাঁর দাবি। পরিচালক বলেন, “আমরা সব সময় সচেতন থাকতাম, রণবীর বা বেবো (করিনা) যেন এমন কিছু না করে ফেলে, যাতে দর্শকের ভাবাবেগে আঘাত লাগে। ছবিমুক্তির সময় পর্যন্ত আমরা ভয়ে ভয়ে ছিলাম। শুক্রবার সন্ধ্যায় ছবিমুক্তির পর অবশেষে আমাদের মুখে হাসি ফোটে।”