আরজি কর-কাণ্ডে সরব উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়। গ্রাফিক্স: সনৎ সিংহ।
আরজি কর-কাণ্ড অনুষঙ্গে মঙ্গলবার সরব গায়িকা উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়। নীরবতা ভেঙেছেন, তিনিও পুরুষের হেনস্থার শিকার। তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-মৃত্যু তাঁকে এতটাই নাড়া দিয়েছে যে তিনি নিজেই তার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভাগ করে নিয়েছেন। একটি ঝলকে তিনি জানিয়েছেন, এক অর্ধনগ্ন পুরুষ তাঁকে কু ইঙ্গিত করেছিল। যা তাঁকে সাময়িক ভয় পাইয়ে দিয়েছিল।
উজ্জয়িনী কথা শুরু করেছেন যথেষ্ট কুণ্ঠিত ভাবে। তাঁর কথায়, “আরজি কর-কাণ্ডে মৃত তরুণী প্রসঙ্গে বলা হল, ‘অত রাতে ও ওখানে কী করছিল?’ কথাটা শুনে মাথার মধ্যে ওলোটপালট চলছিল। অনেক কথা মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। বুঝতে পারছিলাম না, আমাদের মতো তথাকথিত সঙ্গীতশিল্পীদের বিষয়টি নিয়ে আদৌ কি মুখ খোলা উচিত?” এর পরেই তিনি ভাগ করে নিয়েছেন তাঁর সঙ্গে অতীতে ঘটে যাওয়া এক ঘটনা। এক সন্ধ্যায় তাঁর গানের অনুষ্ঠান। তিনি নিজের ঘরের বিছানায় বসে গানের তালিকা তৈরি করছিলেন। হঠাৎ তাঁর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দেয়, কেউ তাঁকে দেখছে। তিনি মুখ ঘোরাতেই দেখেন, কেউ একজন তাঁকে দেখেই লুকিয়ে পড়ল!
শিল্পীর কথায়, “ঘন বসতি অঞ্চলে বাড়ি। এমন জায়গায় এই ঘটনায় প্রথমে বিস্মিত হয়েছিলাম। একটু খোঁজাখুঁজি করতেই চোখে পড়ল সেই মূর্তিমানকে। এক ১৬-১৭ বছরের অর্ধ্বনগ্ন তরুণ আমার দিকে কু ইঙ্গিত করছে।” আর পাঁচ জন মেয়ের মতোই সে দিন গায়িকা ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বাড়ির পুরুষ সদস্যদের জানান। তাঁরা পাশের বাড়িতে গিয়ে কথা বলার পর সেই তরুণকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়। এখন আরজি কর হাসপাতালে মৃতার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অঘটন তাঁর মনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তিনি জানতে চেয়েছেন, “এখন আরজি কর হাপাতালের মৃতার প্রসঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, ‘ও ওখানে কী করছিল’? আমিও বাড়িতে হেনস্থার শিকার। তা হলে কি আমায় শুনতে হবে, তখন বাড়িতে আমি কী করছিলাম?” আর যদি এমন প্রশ্ন নাও ওঠে, যদি বাকি মেয়েরা জানান, এমনটা তো মেয়েদের সঙ্গে হামেশাই ঘটে থাকে তা হলেও তিনি জানতে চাইবেন, “এই মানসিকতা আর কত দিন আঁকড়ে থাকবে নারী?”
ঝলকে উজ্জয়িনীর বক্তব্য শুনে তাঁকে মন্তব্য বাক্সে সমর্থন জানিয়েছেন আর এক গায়িকা প্রস্মিতা পাল। নিজের জীবনের কথা ভাগ করে লিখেছেন, “বলবে, জানলা খুলে রেখেছ কেন? আমার সঙ্গেও এমন ঘটেছে। আইসিএসই পরীক্ষা। নিজের ঘরে বসে পড়ছি। হঠাৎ পাশের বাড়ির ছেলেটি ডিম ছুঁড়ে মেরেছিল।” সঙ্গে সঙ্গে গায়িকা মাকে ঘটনাটি জানান। প্রস্মিতার মা উল্টে সে দিন মেয়েকেই শাসন করেছিলেন। সতর্ক করে বলেছিলেন, “বড় হয়ে গিয়েছ। জানলা বন্ধ করে না থাকতে পারলে অন্তত পর্দা টেনে রাখতে হবে।”