আরজি কর-কাণ্ডে প্রতিবাদী তথাগত মুখোপাধ্যায়। গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।
আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল, সমাজমাধ্যমে সাধারণ থেকে বিশিষ্টদের প্রতিবাদবার্তা ভাইরাল। ১৪ অগস্ট, স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে মেয়েদের পথে নামার আর্জি জানিয়েছেন বাংলা বিনোদন দুনিয়ার খ্যাতনামীরাও। সেই বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের প্রতিবাদে সরব পরিচালক-অভিনেতা তথাগত মুখোপাধ্যায়ও। তিনি সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, “সিনেমা শেষ হতে অনেক রাত হয়েছে তাই প্রেমিককে বাড়ি পৌঁছতে এসেছে প্রেমিকা... ছেলের ফিরতে রাত হয়ছে তাই মা রাস্তার মোড় পর্যন্ত পায়চারি করছে।” লেখার একেবারে শেষ পর্বে তাঁর বক্তব্য, “আর আমি ঘরে লুকিয়ে আছি, যেন সিগারেট পর্যন্ত কিনতে বেরোতে না হয়। আমি তো কাপুরুষ, ভীতু, ধান্দাবাজ, ধর্ষকদের প্রতিনিধি। আমাকে যেন রাতে কোথাও বেরোতে না হয়। কারণ, রাত এখন শুধু মেয়েদের। শহরে মধ্যরাত শাসন করে শুধু মেয়েরা।”
কোন ভাবনা থেকে এই বক্তব্য তথাগতের? যোগাযোগ করে জানতে চেয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তথাগত বলেছেন, “এই লেখার পিছনে একাধিক ভাবনা কাজ করেছে। এক, আমি সেই সমাজকে দেখতে চাই যেখানে এত দিন ধরে যা যা পুরুষেরা করেছে সেটাই অনায়াসে অতি সাধারণ নারীও করতে পারবে। সেটা মধ্যরাতে রাস্তায় থাকা হোক কিংবা বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে পানাহার করে হুল্লোড়ে মেতে ওঠা। নিস্তব্ধ রাতে বিকট শব্দ তুলে পুরুষের মতো বাইকও চালাবে। যা দেখে এত দিন চমকে যেত নারী। এ বার চমকানোর পালা পুরুষের।”
তিনি মনে করেন, “এগুলো তখনই হবে যখন একজন নারী আর একজন নারীকে সমর্থন করবে।” উদাহরণ হিসাবে তিনি জানান, এখনও একজন নারী পরকীয়ায় জড়ালে বা উন্মুক্ত পোশাক পরলে তার দিকে সকলের আগে আঙুল তোলে নারীই। তাঁর প্রশ্ন, “পুরুষ নারীকে নানা ভাবে দমন করতে চাইবেই। এটাই সমাজ তাকে শিখিয়েছে। কিন্তু এখনও একজন নারী কেন নারীর বিরুদ্ধে আঙুল তুলবে? যতই সে ছোট থেকে শিখুক!”
এই প্রসঙ্গে তথাগতের উদাহরণ, “আরজি কর-কাণ্ডে পুরুষ অধ্যক্ষ কত সহজে বলে দিলেন, অত রাতে ফাঁকা ঘরে তরুণী চিকিৎসক বিশ্রাম নিতে গিয়েছিলেন কেন? তিনি একবারও দায় নিয়ে বললেন না, তাঁর হাসপাতালের বিশ্রামাগার নারীদের জন্য নিরাপদ নয়। এই প্রবৃত্তি লজ্জার হলেও অস্বাভাবিক নয়। কারণ, তিনি পুরুষ।”
‘পারিয়া’ ছবির পরিচালকের আফসোস, “আমার খারাপ লেগেছে যখন নির্ভয়া-কাণ্ডকে ‘ছোট ঘটনা’ বলা হয়েছিল। আরও অনেক নারীর প্রশ্ন ছিল, কেন অত রাতে একজন মেয়ে রাস্তায় থাকবে?” তিনি বিস্মিত, একুশ শতকেও একজন মেয়ে তাঁর স্বামী বা প্রেমিক তৃতীয় কারও সঙ্গে জড়িয়ে পড়লে সেই মেয়েটির দিকে অভিযোগের আঙুল তোলে। একবারও নিজের পুরুষটিকে শাসন করে না।
এই জায়গা থেকেই তথাগতের উপলব্ধি, নিজের অধিকার, জায়গা আদায় করতে নারীদের সংঘবদ্ধ হতে হবে। সমলিঙ্গকে সমর্থন জানাতে হবে। কোনও নারী খোলামেলা পোশাকে রাস্তায় বেরোলে বা সমাজমাধ্যমে ভিডিয়ো ভাগ করে নিলে সমালোচনা করা বন্ধ করতে হবে। স্বামী, সন্তান, ভাই বা প্রেমিক— পরিবার বা পরিচিত কোনও পুরুষ নারীর প্রতি কুদৃষ্টি দিলে মেয়েটিকে নয়, নিজের পুরুষকে শাসন করতে হবে। তবেই হয়তো লিঙ্গনির্বিশেষে সকলে সমাজে সমানাধিকার পাবে।