artist

Bengali Serial: স্বরূপের হুমকিতে থমকে শ্যুটিং, ‘ভাতের থালায় লাথি মারছে ফেডারেশন’ ক্ষোভ টেলিপাড়ায়

ইতিমধ্যেই অনেক টেকনিশিয়ান প্রযোজকদের জানিয়েছেন যে, তাঁরা ভয় পাচ্ছেন কাজে যেতে। কিন্তু তাঁরা চাইছেন কাজ শুরু করতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২১ ২১:৪৬
Share:

শুরু হয়েছিল ‘রিমলি’-র শ্যুটিং

সরকারি নির্দেশ মেনে টেলিপাড়ায় ৫০ জনকে নিয়ে শ্যুটিং শুরুর প্রথম দিনেই ফেডারেশনের হস্তক্ষেপে থেমে গেল কাজ। রীতিমতো হুমকি দিয়ে কলাকুশলীদের কাজে না আসার নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু কলাকুশলী নয়, ভেন্ডরদেরও ধারাবাহিকের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিতে বারণ করা হয়েছে।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে বুধবার জরুরি ভিত্তিতে বিকেল ৫টা নাগাদ সাংবাদিক সম্মেলন করলেন প্রযোজক, বিভিন্ন চ্যানেল কর্তা এবং আর্টিস্ট ফোরাম। ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন প্রোডিউসর্স (ডব্লিউএটিপি)-এর সভাপতি শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, " সরকারি নিয়ম মেনে শ্যুটিং শুরু হয়েছিল। দেখলাম কলাকুশলীরা চাইলেও ফেডারেশনের হুমকির ভয়ে কাজে আসতে পারছেন না। ফেডারেশনের সমস্যা আসলে কী? সেটা বোঝা যাচ্ছে না। কাজ বন্ধ রেখে তো সার্বিক ক্ষতি হচ্ছে।ইন্ডাস্ট্রিকে থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে।"
ক্রমাগত হুমকি আসছে ফেডারেশনের তরফে। মোট ১২টা ধারাবাহিকের শ্যুট শুরু হয়েছিল বুধবার সকাল থেকে। কিন্তু আপাতত সব স্থগিত।

ফেডারেশনের দাবি ছিল, কোনও টেকনিশিয়ান নির্দিষ্ট ২০টি ধারাবাহিকে কাজ করতে পারবেন না। কারণ, ফেডারেশনের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও লক়ডাউনের মধ্যে সেগুলির শ্যুটিং চলেছে। যত ক্ষণ না প্রোডিউসার গিল্ডের সঙ্গে ফেডারেশনের নতুন চুক্তি কার্যকর হচ্ছে, তত ক্ষণ এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। সেই ২০টি ধারাবাহিকের তালিকা দেওয়া হয়েছিল ফেডারেশনের তরফে— ‘কৃষ্ণকলি’, ‘তিতলি’, ‘অপরাজিতা অপু’, ‘গ্রামের রাণী বীণাপাণি’, ‘বরণ’, ‘খেলাঘর’, ‘যমুনা ঢাকি’, ‘গঙ্গারাম’, ‘জীবন সাথী’, ‘মিঠাই’, ‘সাঁঝের বাতি’, ‘খড়কুটো’, ‘শ্রীময়ী’, ‘মোহর’, ‘দেশের মাটি’, ‘রিমলি’, ‘ওগো নিরুপমা’, ‘ফেলনা’, ‘কি করে বলবো তোমায়’, ‘ধ্রুবতারা’।

Advertisement

৩০ বছর ধরে এই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত শৈবাল জানান, হোটেলে শ্যুট করা যে দৃশ্য নিয়ে ফেডারেশন প্রশ্ন তুলেছেন সেই দৃশ্য তো আগেই শ্যুট করা ছিল। ধারাবাহিকে আগাম পর্ব শ্যুট করে রাখা নতুন নয়। আর মুখ্যমন্ত্রী যেখানে বাড়ি থেকে কাজ করাকে মান্যতা দিয়েছেন সেখানে শ্যুট করাকে 'অন্যায়' বলা হচ্ছে কোন যুক্তিতে? কলাকুশলীরাও তাঁদের প্রাপ্য সাম্মানিক পেয়েছেন।

লেখক, প্রযোজক লীনা গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, এত দিন এ রকম সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করার প্রয়োজন পড়েনি। নিজেদের ব্যাপার নিজেরা কথা বলে মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে। লীনার কথায়, ‘‘মতবিরোধ আসতেই পারে। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়েছে যে, আমাদের ভিতরের সমস্যার কথা বলতে হচ্ছে সংবাদমাধ্যমের সাহায্যে। এটাই হতাশাজনক।’’ লীনার আক্ষেপ, গত বছরের লক়ডাউনে সাড়ে ৩ মাস কাজ বন্ধ ছিল, সেই সময়ে প্রযোজকদের তরফে ফেডারেশনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল ৪০ লক্ষ টাকা। বিমা করে দেওয়া হয়েছিল। লীনার প্রশ্ন, ‘‘সে সব কথা তো এ বার উল্লেখ করা হচ্ছে না?’’

লীনা তাঁর বক্তব্যে সাফ জানিয়েছেন এই ইন্ডাস্ট্রি বরাবর মুখ্যমন্ত্রীর সহযোগিতা পেয়েছে। তাঁকে সকলেই শ্রদ্ধা করেন। তাঁর নির্দেশেই ধারাবাহিকের কাজ আরম্ভ করা হয়েছিল। কিন্তু এই কাজ থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে?

সাংবাদিক সম্মেলন

অ্যাক্রোপলিস এন্টারটেনমেন্টের প্রযোজক সানি ঘোষ রায় সকালে শ্যুট হওয়ার আগে জানিয়েছিলেন, ধারাবাহিকের কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বললেন, ‘‘অনেক টেকনিশিয়ানই এসেছেন। ফেডারেশন তাঁদের ভয় দেখাচ্ছে ক্রমাগত। কাজের মধ্যেও বার বার তাঁদের কাছে ফোন আসছে। কিন্তু তাঁদের টাকার দরকার। এক মাস বাড়িতে বসে ছিলেন তাঁরা। সেটা কেন বুঝছেন না ওঁরা?’’ একই সঙ্গে সানির বক্তব্য, ‘‘আমরা প্রযোজকরা বলেছি, যাই হয়ে যাক, টেকনিশিয়ানদের সদস্যপদ বাতিল করে দিলে বা তাঁদের কালো তালিকায় ফেলে দিলে আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়াব।’’

যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী যাতে শ্যুটিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যামেরা, আলো, ইত্যাদি না দেওয়া হয় সে দিকেও কড়া নজর রেখেছেন ফেডারেশন। ইতিমধ্যেই অনেক টেকনিশিয়ান প্রযোজকদের জানিয়েছেন যে, তাঁরা ভয় পাচ্ছেন কাজে যেতে। কিন্তু তাঁরা চাইছেন কাজ শুরু করতে।

আর্টিস্ট ফোরামের পক্ষ থেকে অভিনেতা শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় বললেন, "যিনি ধারাবাহিক বন্ধ রেখে আমাদের সকলের ভাতের থালায় লাথি মারছেন তাঁর রোজগারের উৎস এই ইন্ডাস্ট্রি নয়। তা হলে তিনি আমাদের ক্ষতি করছেন কেন?"

অভিনেতা শঙ্কর চক্রবর্তী যেমন বললেন এই পরিস্থিতি অত্যন্ত অমানবিক। চুপ করে থাকেননি প্রযোজক নিসপাল সিংহ রানে। তিনি জানালেন খুব শিগগিরি আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা মিটিয়ে কাজে নামতে হবে।

কিন্তু সমস্যা মেটাবে কে?

অভিনেতা দিগন্ত বাগচী চিন্তিত ৮০ হাজার মানুষের আর্থিক সংস্থান নিয়ে। তিনি সাফ জানালেন "এখানে ইগোর লড়াই চলছে।"

আর্টিস্ট ফোরাম থেকে প্রযোজক, চ্যানেল সকলেই চাইছেন কাজ শুরু করতে। সরকারি নিয়ম মেনে যদি শপিং মল, রেস্তরাঁ খোলা যায় তা হলে শ্যুটিং পাড়া খুলবে না কেন? কী বলছেন ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস? আনন্দবাজার ডিজিটালের পক্ষ থেকে তাঁকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বললেন, " আমি সাংবাদিক সম্মেলনের ভিডিয়ো দেখে তার পর মন্তব্য করব। মিটিং চলছে। পরে কথা বলব।"

কাল কী শ্যুটিং হবে?

শৈবাল, লীনা এবং রানে এক কথায় বলে ওঠেন, " আজ রাতেই আমরা কল টাইম দেব। আশা করি শিল্পী থেকে কলাকুশলীরা সকলে কাজে আসবেন।"

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement