তখন আমার টগবগে যৌবন। ‘অগ্নিপরীক্ষা’ নামে একটি ছবি মুক্তি পেল। তাতে একটি আশ্চর্য গান শুনলাম। বলতে পারি, ভুতুড়ে গান। যেমন কণ্ঠস্বর, তেমনই তার সুর। ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’। অনুপম ঘটকের সুরে গাইছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। কী যে আশ্চর্য গান, কী যে অদ্ভুত লেগেছিল, বলে বোঝাতে পারব না!
বেশ কিছু দিন পরে আরও একটি গান শুনলাম। ‘সেই সাগরবেলায় ঝিনুক’। যেমন বিধুর, তেমনই মধুর। আমি আইপিটিএ (ইন্ডিয়ান পিপলস্ থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন)-এর অনুষ্ঠানে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের খেয়াল গান শুনেছি। ঠুংরি শুনেছি রেডিয়োয়। গায়কি শুনে মুগ্ধ হয়েছিলাম। তাঁর কণ্ঠস্বর একেবারে জাদুকরি। লতা মঙ্গেশকরকে টক্কর দেওয়ার মতো একমাত্র সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ই ছিলেন সেই সময়ে। পাশাপাশি তখন আরও অনেকে গাইছেন বটে। কিন্তু সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় একক এবং অনন্য।
আজ তিনি চলে গেলেন। দেহের অবসান তো আছেই। সে তো ঠেকানো যাবে না। কিন্তু তাঁর গান রয়ে গেল। মানুষ তো শরীরে বেশি দিন বাঁচে না। আয়ুষ্কাল পর্যন্ত বাঁচে। তার পরে কেমন করে বাঁচে?
স্মরণে, মননে, স্মৃতিতে। তাঁর গানে। বারবার তাঁর গান আরও বহু কাল ধরে তিতির পাখির মতো আমাদের চার দিকে নেচে বেড়াবে। এ রকম শিল্পীর তো আসলে মৃত্যু হয় না। তাঁদের মরণ নেই। তাঁরা জীবিত থাকেন চিরকাল। বারবার তাঁদের সরণ হয়। ওই যাকে বলে, মানুষের মনের মধ্যে বেঁচে থাকা। তাঁর মতো বেঁচে থাকা কি আর আছে?