Sandhya Mukhopadhyay

Sandhya Mukhopadhyay Death: প্রয়াত গীতশ্রী সন্ধ্যা, পাতায় পাতায় রামধনু রং ছড়িয়ে সাদাকালো ফ্রেমে গানের প্রজাপতি

সন্ধ্যার প্রয়াণে ব্যথিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি ভাবতে পারিনি মারা যাবেন। গত কাল রাতে অস্ত্রোপচারের পর খবর এসেছিল। কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। এত তাড়াতাড়ি ঘটে যাবে তা বুঝতে পারিনি। উনিই শেষ সুরের ঝঙ্কার, সুরের স্পন্দন, গানের ইন্দ্রধনু। ওঁর গাওয়া কত গান মনে পড়ছে এখন।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৯:৫০
Share:

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

বাংলা গানে স্বর্ণযুগের শিল্পীদের শেষ তারকা নিভে গেলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন ৯০ বছর বয়সে। আধুনিক বাংলা গানের শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পীদের মধ্যে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়রা একে একে চলে গিয়েছেন আগেই। এ বার নিভল সন্ধ্যা-প্রদীপও। বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
গত ২৬ জানুয়ারি বুধবার সন্ধ্যায় অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই প্রবাদ প্রতিম সঙ্গীতশিল্পী। পর দিন তাঁকে গ্রিন করিডোর করে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছিল তাঁর। ঘটনাচক্রে, তার দু’দিন আগেই কেন্দ্রের পদ্ম সম্মান প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি।

Advertisement

সঙ্গীতশিল্পীকে এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তড়িঘড়ি গঠিত হয় মেডিক্যাল বোর্ড। জানা যায়, শৌচাগারে পড়ে গিয়ে চোট পান শিল্পী। এর পর বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছিল শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যাও। তাঁর দু’টি ফুসফুসেই সংক্রমণ দেখা দেয় বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়। চিকিৎসার পর তাঁর শারীরিক অবস্থা ক্রমশ স্থিতিশীল হচ্ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ হঠাৎ তাঁর শারীরিক জটিলতা বাড়ে।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।

সন্ধ্যার প্রয়াণে ব্যথিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এই মুহূর্তে উত্তরবঙ্গ সফরে। সেখান থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি ভাবতে পারিনি মারা যাবেন। গতকাল রাতে অস্ত্রোপচারের পর খবর এসেছিল। কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। এত তাড়াতাড়ি এমনটা ঘটে যাবে তা বুঝতে পারিনি। আমরা যকৃতের চিকিৎসকে পাঠাব বলে ঠিক করেছিলাম। তখন জানতে পারলাম উনি আর নেই। কোভিড থেকে মুক্ত হওয়ার পর সব ঠিক ছিল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত। কী যে হয়ে গেল! উনি স্বর্ণালি সময়ের শিল্পী। সেই যুগের সকলেই চলে গিয়েছেন। উনি ছিলেন। উনিই শেষ সুরের ঝঙ্কার, সুরের স্পন্দন, গানের ইন্দ্রধনু। ওঁর গাওয়া কত গান মনে পড়ছে এখন।’’

Advertisement

মমতা আরও বলেন, ‘‘একটা শতাব্দীর আর কেউ রইলেন না। এ ক্ষতি অপূরণীয়। আমি মনে করি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ভারতরত্ন। আজ রাতে ওঁকে পিস ওয়ার্ল্ডে রেখে দেব। বুধবার ১২টার সময় দেহ নিয়ে রবীন্দ্র সদনে রাখা হবে। ৫টা পর্যন্ত ওখানে থাকবে সম্মান প্রদর্শনের জন্য। আমি যেমন করে হোক পৌঁছনোর চেষ্টা করব। এর পর রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মান গান স্যালুট দিয়ে ওঁর শেষকৃত্য হবে।’’

শিল্পীর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘উনি আমাকে গান গাওয়ার অনুরোধ করতেন। ওঁকে কখনও কখনও গান শোনাতে হয়েছে। আমি অবাক হয়ে যেতাম সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আমার কাছে গান শুনতে চাইছেন। জন্মদিনে ওঁকে ফোন করেছিলাম। তখন গান শোনাতে বলেছিলেন।’’

সন্ধ্যার প্রয়াণে শিল্পীমহল তো বটেই শোকে মুহ্যমান বাঙালি। শিল্পী ঊষা উত্থুপের কথায়, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম উনি সুস্থ হয়ে যাবেন। তবে তা হল না। সঙ্গীত জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হল।’’ পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘গুরু বোনকে হারালাম।’’ সন্ধ্যার প্রয়াণে টুইট করে শোকজ্ঞাপন করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও।

শিল্পী শিবাজী চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমরা ওঁর থেকে ছোট। উনি আমাদের টেলিফোন করে খোঁজখবর নিতেন। ওঁর মৃত্যুতে আমার খুব খারাপ লাগছে। উনি ফোন করলে এক-দেড় ঘণ্টার আগে কথা শেষ হত না।’’

অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘সন্ধ্যাদির সঙ্গে কোথাও গেলে আমাকে গান গাইতে বলতেন। আমি বলতাম, আপনার সামনে গান শোনাব? উনি বলতেন, শোনাও। ওঁর মেয়ে ঝিনুকের জন্মদিনে বাড়িতে গিয়েছি। আমরা জানতাম না, মেয়ের জন্মদিন। উনি নিজে ভেজিটেবল চপ তৈরি করে দিয়েছেন। এই রকম সম্পর্ক ছিল আমাদের। এটা গানের জগতে মাতৃবিয়োগ হল। মা-ই শিক্ষা দেন। শিক্ষা দেওয়ার আর কে রইল? আমার এত খারাপ লাগছে বলার নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement