বাঙালির অস্কার কেন হাতছাড়া হল, কী মনে করছেন প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য, প্রসূন চট্টোপাধ্যায় এবং বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায়? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ভারতের সংগ্রহে দু’টি অস্কার। আনন্দের মাঝেও তবু যেন দুঃখের রেশ। অস্কারের দৌড়ে জায়গা করে নিয়েছিল বাঙালি তরুণ পরিচালক শৌনক সেনের তথ্যচিত্র ‘অল দ্যাট ব্রিদস’। আশায় বুক বেঁধেছিল বাঙালি। সেরা ফিচার তথ্যচিত্র বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছিল শৌনকের এই ছবি। তবে শেষ অবধি অস্কার অধরাই রয়ে গেল। সেই পরিস্থিতিতে কী বলছেন বাংলার স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতারা?
আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’-র পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের সঙ্গে। সদ্য মুক্তি পেয়েছে তাঁর তথ্যচিত্র ‘শিকড়’। ছবিটি নানা জায়গায় প্রদর্শন করছেন প্রদীপ্ত, যাতে সবাই দেখতে পান। সেই ব্যস্ততার মাঝেই বললেন, “শৌনক সেনের তথ্যচিত্র ‘অল দ্যাট ব্রিদস’ অস্কার পেলে খুবই ভাল লাগত। সত্যজিৎ রায়ের পর আবার বাঙালির ঝুলিতে অস্কার আসত। তবে যে মনোনীত হয়েছে, সেটাও তো কম কথা নয়। আর সব মিলিয়ে ভারতের যে দুটো অস্কার এল, তা-ও গর্বের।”
সম্প্রতি ‘দোস্তজী’র মতো পূর্ণ দৈর্ঘ্যের স্বাধীন ছবি বানিয়ে বিপুল সাড়া ফেলেছেন বাঙালি পরিচালক প্রসূন চট্টোপাধ্যায়। সেই ছবি এ বার মুক্তি পাচ্ছে আমেরিকায়। সেই গর্ব মুকুটে নিয়ে নিউ ইয়র্কে উড়ে যাচ্ছেন তিনি। ইচ্ছা রয়েছে, আগামী বছর অস্কার দৌড়ে অংশ নেওয়ার। শৌনকের ব্যর্থতার আবহে এখনও কি আশা দেখছেন ‘দোস্তজী’ নিয়ে? ৩০ হাজার ফুট উচ্চতায় বিমানে বসেই আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে কথা বললেন পরিচালক।
তাঁর কথায়, ‘‘কাকতালীয় ভাবে আপনি এমন একটা সময়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রশ্নটা করছেন, যখন আমি ৩০,০০০ হাজার ফিট উপরে আকাশে। নিউ ইয়র্ক যাওয়ার পথে ইন-ফ্লাইট ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনাকে উত্তর দিচ্ছি, এবং যাওয়ার কারণ আগামী ১৭ মার্চ প্রায় সমগ্র আমেরিকা জুড়ে ‘দোস্তজী’র অস্কার কোয়ালিফাইং থিয়েট্রিক্যাল রিলিজ়।”
এর পরই বললেন, “‘অল দ্যাট ব্রিদস’ নিয়ে আমি প্রচণ্ড আশাবাদী ছিলাম। বড় পর্দায় আমি ছবিটা দেখেছি। এটা সত্যিই একটা ‘মাস্টারপিস’। এমন ছবি সচরাচর হয় না, সহজে হয় না। অস্কার না পাওয়ায় আমার খুবই কষ্ট হয়েছে। কিন্তু এটাকে একটু অন্য ভাবে দেখলে মনে হয় আমাদের সামগ্রিক ভাবে এগোতে কিছুটা সুবিধা হবে। শৌনক এবং ওর টিম আমাদের অনেকগুলো ধাপ একসঙ্গে এগিয়ে দিল কিন্তু। আমি আশাবাদী, অদূর ভবিষ্যতে হবেই হবে।”
প্রসূন জানালেন, ‘দোস্তজী’র ক্ষেত্রে সবেমাত্র প্রথম পদক্ষেপটা হতে চলেছে। এখনও বহু বহু পথ অতিক্রম করতে হবে, যা অত্যন্ত কঠিন।
‘তিন কাহন’-এর পরিচালক বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায় মুম্বইয়ে বিজ্ঞাপনী ছবি বানান। শৌনকের তথ্যচিত্র অস্কার না পাওয়ায় কিছুটা ক্ষুব্ধ তিনিও। সমাজমাধ্যমে লিখলেন, ‘‘শৌনকের যদি আরও টাকা এবং লবির ক্ষমতা থাকত, তবে হয়তো হয়ে যেত! ‘অল দ্যাট ব্রিদস’ যে অস্কার পেল না, এটা একটা ব্যক্তিগত ক্ষতি বলে মনে হচ্ছে।’’
এর আগে বাঙালির অস্কার বলতে সত্যজিৎ রায়ের সারা জীবনের সম্মান। তাতে অবশ্য প্রতিযোগিতার কোনও অবকাশ ছিল না। সত্যজিতের আজীবনের কাজের স্বীকৃতির জন্য তাঁকে ওই পুরস্কার দিয়েছিল অ্যাকাডেমি অফ মোশন পিকচার্স। তার পর ২০২১ সালে বাঙালি সুস্মিত ঘোষের তৈরি তথ্যচিত্র ২০২২ সালের অস্কার পুরস্কারের জন্য লড়াইয়ে মনোনীত হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিকে ছেঁড়েনি। এ বারও শিকে ছিঁড়ল না বাঙালির।