কথা ছিল, ২৪ ডিসেম্বর আইনি এবং আনুষ্ঠানিক বিয়ে দুটোই এক সঙ্গে হবে। আচমকাই পট পরিবর্তন। ভরা গরমে রবিবাসরীয় সন্ধেয় আইনি মতে বিয়ে সারলেন চিত্রাঙ্গদা শতরূপা এবং সম্বিত চট্টোপাধ্যায়। এ দিকে পরের দিনই ছোট বোন ঋতাভরী চক্রবর্তীর আগামী ছবি ‘ফাটাফাটি’ ছবির শ্যুটিং শুরু! এত তড়িঘড়ি? জানতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল নতুন ‘শাশুড়ি’ শতরূপা সান্যালের সঙ্গে। বড় মেয়ের আইনি বিয়ের পরে তাঁর গলায় যেন স্বস্তির শ্বাস। বললেন, ‘‘গরমে এই অনুষ্ঠান করার একেবারেই ইচ্ছে ছিল না তিতিন (চিত্রাঙ্গদা) বা গোগোল (সম্বিত)-এর। কিন্তু আবার অতিমারির চতুর্থ ঢেউ নাকি দোরগোড়ায়। গত বছর এই কারণেই বিয়ে পিছিয়ে গিয়েছে ওদের। আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ায়। তাই আইনি বিয়েটা সেরে রাখা হল। শীতে আনুষ্ঠানিক বিয়ে হবে।’’যদিও এই
সময়ে বিয়ে নিয়ে বেজায় আপত্তি চিত্রাঙ্গদা-সম্বিত দু’জনেরই। যুক্তি, ভাল করে সাজা যাবে না। খাওয়া দাওয়া করা যাবে না। হুল্লোড় করা যাবে না। কিন্তু সব দিক বিবেচনা করে শতরূপা এবং সম্বিতের মা সুতপা মিলে এই আয়োজন করেন।
পরিবার, বন্ধুদের নিয়ে আইনি বিয়ের আসর বসেছিল চট্টোপাধ্যায় বাড়ির ঠাকুর দালানে। শতরূপার কথায়, ‘‘সুতপা অভিনেতা জহর গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিবারের মেয়ে। বিশিষ্ট তবলিয়া পণ্ডিত শোভেন চট্টোপাধ্যায় শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের সঙ্গে যুক্ত। ফলে, ওঁদের পরিবার সাংস্কৃতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ। এখনও বাড়িতে দোল, দুর্গোৎসবে জমজমাট আয়োজন হয়। শুভেন, ছেলে সম্বিত ঢাক বাজান। সমস্ত আত্মীয়রা জড়ো হন এক ছাদের নীচে। এ দিনও তার অন্যথা হয়নি।’’ তার মধ্যেই একটি দেওয়াল ছিল ছেড়ে যাওয়া আত্মজনদের জন্য। সেখানে সম্বিতের কর্তাদাদু, ঠাকুরদা, ঠাকুমা থেকে শুরু করে চিত্রাঙ্গদার অকালপ্রয়াত বান্ধবীর ছবিও সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল ফুলের মালায়। পরিচালক-অভিনেত্রীর মতে, শুধু জীবিতরাই নন যাঁরা অতীত তাঁরাও এ দিন যেন স্মৃতিতে জীবন্ত, নবদম্পতিকে আশীর্বাদ, শুভেচ্ছা জানাতে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাগ হওয়া ছবি বলছে, ঋতাভরী দারুণ সেজেগুজে এসেছিলেন। পরের দিন শ্যুটিং আগের দিন দিদির বিয়ে। মন খুলে উদযাপনে মাততে পেরেছেন? শতরূপার দাবি, ‘‘দিদির বিয়ের আনন্দে কোনও ভাটা পড়েনি। তবে গরমে কষ্ট পেয়েছে বেচারি। বেশি ক্ষণ থাকতেও পারেনি। আমিই বলি, “বেশি রাত করিস না। তোর আগামী কাল থেকে শ্যুট শুরু। কাজ না থাকলে অবশ্যই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত থাকত ঋতাভরী।” আইনি বিয়েতেও ভোজন পর্বে কোনও কমতি ছিল না। গরম কমাতে অতিথিদের জন্য ছিল আম পান্না। ছিল চিজ বল সহ নানা রকমের মুখরোচক খাবার। এর পরেই মহাভোজ। লুচি, ছোলার ডাল, আলুর দম, পটলের দোলমা, পোলাও মাংস, ফিশ ফ্রাই, চাটনি, চার রকমের মিষ্টি আর মুখশুদ্ধি মিষ্টি পানে।
বিয়ে মিটিয়েই বলিউডের হিন্দি সিরিজে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন বিয়ের কনে চিত্রাঙ্গদাও। শ্যুট হবে দিল্লি, মুম্বইয়ে। কলকাতায় এলে থাকবেন মায়ের কাছে। তেমনই নির্দেশ নতুন জামাই সম্বিতের। কারণ, দুই মেয়ে ছাড়া শতরূপা যে একা। নতুন শাশুড়ি হয়ে কেমন লাগছে? ফোনের ওপারেই পরিতুষ্ট গলা শতরূপার। বললেন, ‘‘খুব মজা লেগেছে। আরও ভাল লেগেছে যখন দু’বার আমার নাম এসেছে। তিতিন ওর নামের সঙ্গে আমার নাম জুড়ে নিয়েছে। তা ছাড়া, আমিও সই করেছি।’’ ‘জামাই’ সম্বিতকে নিয়েও প্রচণ্ড উচ্ছ্বসিত, সম্বিতকে তিনি চিত্রাঙ্গদার ছোট বেলার বন্ধু হিসেবে চেনেন। তাই সম্বিত তাঁর জামাই কম নিজের সন্তান বেশি। এই অন্তরঙ্গতা ধরে রেখেছেন নতুন জামাইও। ‘আন্টি’ সম্বোধন করলেও নিজের মা-এর মতোই দেখেন শতরূপাকে। ফলে, দুই পরিবার এক হওয়ায় খুশি পরিচালক-অভিনেত্রী।