সাবার মুখে গুলি করে দেহটা নদীর জলে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা-কাকা। সাবার ‘অপরাধ’, ভালবাসার মানুষকে বিয়ে করার জন্য তাঁর সঙ্গে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন। পরিবারের ‘সম্মান রক্ষায়’ তাই নিজের মেয়েকেই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তাঁর বাবা-কাকা। কিন্তু, অবিশ্বাস্য ভাবে প্রাণে বেঁচে যান সাবা। পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের ১৯ বছরের সাবার কাহিনি তথ্যচিত্রে বন্দি করেছেন সে দেশের শারমীন ওবেইদ চিনয়। ‘আ গার্ল ইন দ্য রিভার— দ্য প্রাইস অব ফরগিভনেস’ নামের সেই তথ্যচিত্রই এ বার বেস্ট শর্ট ডকুমেন্টরি ক্যাটেগরিতে অস্কার জিতেছে। একই সঙ্গে, প্রথম পাকিস্তানি হিসেবে রবিবার দু’টি অস্কার জিতে ইতিহাস গড়েছেন শারমীন। ৮৮তম অস্কার মঞ্চে পুরস্কার হাতে বলতে উঠে সবার আগে সাবাকে ধন্যবাদ দিয়েছেন ৩৭ বছর বয়সী শারমীন। তবে একই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, “যখন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মহিলারা একত্র হন, তখন এটাই ঘটে।” গোল্ডেন স্ট্যাচু হাতে ফুল-লেংথ ব্ল্যাক ডিজাইনার কোটে ঝলমল করছিলেন তিনি। ফেসবুকেও তাঁর সগর্ব ঘোষণা, “পাকিস্তান, এইমাত্র আমাদের দ্বিতীয় অস্কার জয় হল!!” এর আগে ২০১২ সালে এই একই ক্যাটেগরিতে অস্কার পেয়েছিলেন শারমীন। সে বার তাঁর ডকুমেন্টরির বিষয়বস্তু ছিল অ্যাসিড আক্রান্ত মহিলারা।
আরও পড়ুন
বৈষম্য মোছার বার্তা অস্কারের মঞ্চে
মহিলাদের সমস্যা তাঁর তথ্যচিত্রের বিষয়বস্তু হলেও নিজের জীবনে পুরুষদের ভূমিকাকে ভুলে যাননি তিনি। যে সমস্ত সাহসী পুরুষ মহিলাদের স্কুলে যেতে বা কাজ করতে উৎসাহ দেন, তাঁদের জন্য একটি সুন্দর সমাজের কথা বলেন, মঞ্চে উঠে তাঁদের সকলের প্রশংসা করেছেন শারমীন। অনুষ্ঠান শেষে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে পাকিস্তানে অনার কিলিংয়ের মতো জ্বলন্ত সমস্যা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ নিয়ে আলোচনা হয় না। এমনকী, পুলিশেও এ বিষয়ে কোনও কেস দায়ের হয় না বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে অন্ধকার টানেলের শেষেও আশার আলো দেখা যাচ্ছে। এই তথ্যচিত্র দেখার পর পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ অনার কিলিং নিয়ে আইন বদলেরও আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন শারমীন। “দিস ইজ দ্য পাওয়ার অব ফিল্ম।”