ছোট থেকে কথা বলার সমস্যা ছিল তাঁর। স্কুল এবং কলেজে এ নিয়ে বন্ধুদের কৌতুকের কারণ হয়ে দাঁড়াতেন তিনি।
যখনই কিছু বলতে যেতেন তোতলামির জন্য শুরুতেই তাঁকে থামিয়ে দিতেন বন্ধুরা। গ্বালিয়রের সেই তোতলা ছেলেই আজ বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা। ইন্ডাস্ট্রির বহু ফিল্মের সেরা চরিত্রের হয়ে তিনিই ডাবিং করেছেন।
তিনি শরদ কেলকর। মাইলস্টোন ফিল্ম বাহুবলীতে শিবা এবং অমরেন্দ্র বাহুবলীর চরিত্রে হিন্দিতে ডাব করেছেন তিনিই। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ফিল্ম লক্ষ্মীতে যদি কাউকে নিয়ে চর্চা হয়ে থাকে তাহলে সেটা একমাত্র শরদের অভিনয় নিয়েই।
তাঁর জন্ম গ্বালিয়রে। ১৯৭৬ সালে। খুব কম বয়সেই বাবাকে হারান তিনি। শরদ তখন স্কুলে পড়তেন। পরিবারের ছাতা ছিলেন তাঁর বাবা। বাবার মৃত্যুর পর মায়ের উপরই সংসার চালানোর সমস্ত ভার এসে পড়ে।
মা একার উপার্জনে শরদ এবং তাঁর বোনের দেখভাল করেছেন। স্কুল পাশ করার পর গ্বালিয়রের প্রেস্টিজ ইনস্টিটিউট থেকে এমবিএ করেন।
এই কলেজে সমস্ত উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়তেন। বন্ধুদের সঙ্গে অনেক সময়ই শরদ রেস্তরাঁয় খেতে গিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে পড়তেন। কারণ বিল দেওয়ার টাকা তিনি দিতে পারতেন না।
স্কুল থেকেই শরদের আগ্রহ ছিল শারীরশিক্ষায়। তাই এমবিএ-র ডিগ্রি নিয়েও শরদ জিমের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন।
তিনি কেরিয়ার শুরু করেছিলেন জিম ট্রেনার হিসাবেই। ২০০৪ সালে তিনি গ্রাসিম মিস্টার ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেন এবং তারপরই মডেলিংয়ে আসেন।
মডেলিংয়ে বেশ নামডাক হয়েছিল তাঁর। ফটোশ্যুট করতেন আর টাকা পেতেন। কিন্তু সমস্যায় পড়লেন অভিনয়ের সুযোগ যখন পেলেন।
তাঁর টেলিভিশন ডেবিউ ছিল ‘আক্রোশ’। তাঁর তোতলামির সমস্যার জন্য প্রথম দিকে অনেক পরিচালকই তাঁকে নিতে চাইতেন না। একতা কপূর তাঁকে এক সিরিয়ালের মাঝপথ থেকে বার করে দিয়েছিলেন।
তবে ধীরে ধীরে নিজের এই সমস্যা থেকে বার হয়ে আসেন তিনি। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে যা যা করার প্রয়োজন সব বাড়িতে বসেই করতেন তিনি।
তাঁকে সাহায্য করতেন স্ত্রী কীর্তি কেলকর। কীর্তি নিজেও টেলিভিশন অভিনেত্রী ছিলেন। কর্মসূত্রেই দু’জনের পরিচয়। ২০০৫ সালে বিয়ে করেন তাঁরা।
কথা বলার সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার পরই ক্রমে টেলিভিশনের খুবই পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন শরদ। প্রচুর সিরিয়ালে সুযোগ পেতে শুরু করেন তিনি।
পাশাপাশি বলিউড ফিল্মেও সুযোগ পেতে শুরু করেন। শরদ ‘হলচল’, ‘১৯২০ ইভিল রিটানস্’ এবং ‘রকি হ্যান্ডসাম’-এর মতো একাধিক বলিউড ছবিতে অভিনয় করেছেন। এ ছাড়াও ছোট পর্দায় বিভিন্ন ধারাবাহিকে তাঁর নিয়মিত উপস্থিতি।
এক সময় তোতলামির সমস্যা থাকা শরদ শুধু অভিনয় দিয়েই নয়, ভয়েস ওভার দিয়েও দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। অনেকেই জানেন না, যে মাইলস্টোন ফিল্ম ‘বাহুবলী’র ডায়ালগ আজও লোকের মুখে মুখে ফেরে, শিবা এবং অমরেন্দ্র বাহুবলীর কণ্ঠ তাঁরই।