পুণের এফটিআই-এর কৃতী ছাত্রী। কেরিয়ার শুরু হয়েছিল বড় ব্যানারে, ঋষি কপূরের নায়িকা হয়ে। কয়েকটি ছবিতে সাফল্য সত্ত্বেও বলিউডে নিজের জায়গা মজবুত করতে পারেননি রঞ্জিতা কউর।
১৯৫৬-র ২২ সেপ্টেম্বর রঞ্জিতার জন্ম ২২ সেপ্টেম্বর, পটিয়ালায়। তাঁর বাবা ছিলেন সরকারি অফিসার। এক ভাই এবং চার বোনের সঙ্গে রঞ্জিতার শৈশব কেটেছিল পটিয়ালা শহরে। রঞ্জিতার আর এক বোন রুবিনাও ছিলেন হিন্দি ছবির নায়িকা।
সিমলার কনভেন্ট স্কুলের ছাত্রী রঞ্জিতা ছোটবেলায় অভিনেত্রী বৈজয়ন্তীমালার ভক্ত ছিলেন। পর্দায় বৈজয়ন্তীমালার নাচ ও অভিনয় দেখে ঠিক করেছিলেন, বড় হয়ে তিনি নিজেও অভিনেত্রী হবেন।
অভিনয় শিখতে পুণের এফটিআইআই-তে ভর্তি হন রঞ্জিতা। কোর্স শেষ হওয়ার আগেই সই করেন প্রথম ছবিতে। ১৯৭৬ সালে মুক্তি পায় সেই ছবি। ঋষি-রঞ্জিতার এই ছবি সুপারহিট হয়।
শুধু অভিনেত্রী নয়। রঞ্জিতা চেযেছিলেন তাঁকে দর্শক মনে রাখুক একজন ভাল অভিনেত্রী হিসেবেও। তাঁর সেই স্বপ্ন পূর্ণ হয়েছিল ১৯৭৮-এ। সে বছর মুক্তি পেয়েছিল ‘আঁখিয়োঁ কে ঝরোখোঁ সে’। এই ছবিতে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল।
নিজের সময়ের সব নামী নায়কের সঙ্গে অভিনয় করেছেন রঞ্জিতা। রাজেশ খন্না, সঞ্জীবকুমার, ধর্মেন্দ্র, বিনোদ খন্না, রাজ বব্বর, রাজ কিরণ, দীপক পরাশর, বিনোদ মেহরা, অমল পালেকর এবং অমিতাভ বচ্চন।
তবে সবথেকে বেশিবার জুটি বেঁধেছিলেন মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে। রঞ্জিতা মিঠুনের সঙ্গে কাজ করতে ভালবাসতেন। বলতেন, ভাল অভিনেতার পাশাপাশি মিঠুন একজন ভাল মানুষও।
মিঠুন-রঞ্জিতার ছবি ‘সুরক্ষা’, ‘তরানা’, ‘হাম সে বড়কর কৌন’, ‘আদত সে মজবুর’, ‘বাজি’ এবং ‘গুনাহ কে দেবতা’ সফল হয়েছিল বক্স অফিসে।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বিয়ে করেন রঞ্জিতা। তারপর অভিনয় জগতকে বিদায় জানান। অভিনয় ছেড়ে যাওয়ার আগে তাঁর শেষ ছবি ছিল ‘গুনাহ কে দেবতা’।
নব্বইয়ের দশকের মাঝে তিনি কিছু টিভি সিরিয়ালেও অভিনয় করেছিলেন। তারপর প্রায় দেড় দশক পরে আবার ফিরে আসেন ইন্ডাস্ট্রিতে। ২০০৫ সালে অভিনয় করেন ‘অনজানে: দ্য আননোন’ ছবিতে।
মিঠুনের সঙ্গে জুটি বেঁধে ২০০৮-এ তিনি অভিনয় করেন ‘জিন্দগি তেরে নাম’ ছবিতে। তবে ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ২০১২-এ।
সচিন পিলগাঁওকরের বিপরীতে রঞ্জিতা অভিনয় করেন ‘জানা পহেচনা’ ছবিতেও। দ্বিতীয় ইনিংসে অভিনয় করেছিলেন ছোট পর্দাতেও। কিন্তু প্রথম দিকের সেই সাফল্য অধরাই থেকে গিয়েছিল দ্বিতীয় পর্বে। খুব দ্রুত আবার অভিনয় থেকে সরে দাঁড়ান রঞ্জিতা।
রঞ্জিতার কেরিয়ারে উল্লেখযোগ্য আরও ছবি হল ‘পতি পত্নী অউর ওহ’, ‘আপ তো অ্যায়সে না থে’, ‘দর্দ’, ‘ক্রোধী’, ‘রাজপুত’, ‘সত্তে পে সত্তা’, ‘তেরি কসম’ এবং ‘রাজ তিলক’।
বলিউডের যাত্রা কিছুটা সময়ের আগেই থামিয়ে অভিনয়কে বিদায় জানান রঞ্জিতা। অন্য নায়িকাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি, শোনা যায় সাহসী দৃশ্যে শুটিং করতে নারাজ হওয়ায় অনেক ছবি হাতছাড়া হয়ে যায় রঞ্জিতার।
১৯৯০ সালে পরিবারের পছন্দ করা পাত্র, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রাজরতন মসন্দকে বিয়ে করেন রঞ্জিতা। রাজের বড় ব্যবসা ছিল আমেরিকায়। তাঁদের একমাত্র ছেলের নাম স্কাই।
দীর্ঘদিন আমেরিকায় কাটিয়ে স্বামী ও ছেলের সঙ্গে ভারতে ফিরে আসেন রঞ্জিতা। তাঁর স্বামীর ব্যবসা এখনও জারি আমেরিকায়। ব্যবসায়িক সূত্রে তাঁরা যাতায়াতও করেন আমেরিকায়।
এই ব্যবসাসূত্রেই ২০১৯-এ চরমে উঠেছিল রঞ্জিতার পারিবারিক সমস্যা। পুণের কোরেগাঁও এলাকায় অভিজাত আবাসনের বাসিন্দা রাজ মসন্দ অভিযোগও জানান পুলিশের কাছে। প্রবীণ এই ব্যবসায়ীর অভিযোগ, টাকার জন্য তাঁকে চাপ দেন স্ত্রী ও ছেলে।
এমনকি, স্ত্রী রঞ্জিতা ও একমাত্র ছেলে স্কাইয়ের বিরুদ্ধে তিনি হুমকি ও মারধরের অভিযোগও আনেন। উত্তপ্ত কথা কাটাকাটির পরে পাঁচতলার বারান্দা থেকে তাঁকে নাকি ঠেলে ফেলে দেওয়ারও হুমকি দেন স্ত্রী ও ছেলে। অভিযোগ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুপারস্টোর চেনের মালিক রাজের।
পরে অবশ্য তাঁরা সংবাদমাধ্যমে জানান, তাঁদের মধ্যে সব মিটমাট হয়ে গিয়েছে। ব্যবসার শেয়ার সূত্রে মূলত তাঁর স্বামী ও ছেলের মধ্যে বিবাদ হয়েছিল বলে জানান রঞ্জিতা।
রঞ্জিতার স্বামী রাজ নিজেও জানান, রাগের মাথায় তাঁদের মধ্যে পারিবারিক অশান্তি হয়েছিল। তবে সব কিছু ঠিক হয়ে আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছেন তাঁরা।