(বাঁ দিক থেকে) শতরূপা স্যান্যাল, চিত্রাঙ্গদা, কেয়া শেঠ। গ্রাফিক : সনৎ সিংহ।
রাজ্য জুড়ে চলছে আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ। গণ বিক্ষোভের এমন আবহে অনেকেই ভুলতে বসেছেন মাসখানেক পরেই বাঙালির সেরা উৎসব দুর্গাপুজো। তবে অনেকে শুরু করে দিয়েছেন কেনাকাটা। সঙ্গে রয়েছে ন্যায়বিচারের আর্তিও।
পরিচালক শতরূপা স্যান্যালও সব কিছুর মধ্যে কেনাকাটা সেরেছেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর দুই মেয়েও খ্যাতনামী অভিনেত্রী ঋতাভরী চক্রবর্তী ও চিত্রাঙ্গদা। এ বছর কেয়া শেঠ পোশাক বিপণির ওয়েবসাইট থেকে কেনাকাটা করেছিলেন। আর সেখানেই ডাহা ঠকে গিয়েছেন ঋতাভরীর মা, এমনই অভিযোগ। তার পরই সমাজমাধ্যমে অন্যদের সতর্ক করলেন শতরূপা। সঙ্গ দিলেন তাঁর বড় মেয়ে চিত্রঙ্গদা।
সবটা দেখে-শুনে অবশ্য বসে থাকেননি কেয়া। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় তিনি চিত্রাঙ্গদাকে উপদেশ দিলেন নিজের মাকে সামলে রাখার!
ঘটনার সূত্রপাত্র একটি বোমকাই শাড়ি কেনা নিয়ে। পরিচালক শতরূপা একটি শাড়ি কিনেছিলেন, অনলাইনে কেয়ার পোশাক বিপণি থেকে প্রায় ৪,৮৯৯ টাকা দিয়ে একটি শাড়ি কিনেছিলেন। শাড়িটি বাড়িতে আসতেই শতরূপার মনে হয়, যা দাম নিয়েছে ততটা দামি শাড়ি নয়। অতএব তিনি শাড়িটি ফেরত দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু সেখানেই বিপত্তি। শতরূপার দাবি, তিনি বার বার অনুরোধ জানান শাড়িটি ফেরত দেওয়ার। কিন্তু কোনও সাড়া মেলেনি।
এর পরই ফেসবুকের পাতায় শতরূপা লেখেন, ‘‘এমনিতে আমি সারা বছরই যথেষ্ট অনলাইন কেনাকাটা করি। আজকাল যে ভাবে মেয়েরা শাড়ি জামা বা পোশাক গয়না ইত্যাদির অনলাইন ব্যবসা করছেন, আমি শুধু তারিফই করি না, কিনিও। তাঁদের প্রতি আমি খুবই আন্তরিক। দু’-এক বার যে ঠকিনি, তা নয়। খুব অল্প টাকার ক্ষতি হয়েছে, যা ধর্তব্য নয়। এখন তাই যাঁদের চিনে গেছি, তাঁদের থেকেই কিনি। কিছু নামীদামি কোম্পানির জিনিসও কিনেছি যথেষ্ট। পছন্দ না হলে ফেরতও দিয়েছি। কারও ক্ষেত্রেই কোন অসুবিধা হয়নি। তাঁরা সুনাম রেখেছেন এখন অবধি! তাঁদের ব্যবহারও ভদ্রলোকের মত। অসুবিধে হল ‘কেয়া শেঠ এক্সক্লুসিভ’ নামক বিক্রেতার সঙ্গে। সিল্ক বোমকাই বলে একটি নকল শাড়ি চালিয়ে দিলেন তাঁরা, ছাড় দিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা দামে। এটার দাম হয়তো ১০০০/- টাকাও হবে না। সুতরাং, কাস্টমার কেয়ারে তৎক্ষণাৎ জানালাম, এটা নকল, ফেরত দিতে চাই। তারা মেলে ও ফোনে জানাল- ‘ফেরত হয় না! বদলও হয় না!!’ নীতি তাদের এ রকমই। লোক ঠকানোর কী নির্লজ্জ ধান্দা! আমার পুরো টাকাটাই জলে!”
মায়ের এই পোস্টের মন্তব্যবাক্সে এই সংস্থাকে ট্যাগ করে জবাব চান চিত্রাঙ্গদা। এর পরই পাল্টা উত্তর আসে কেয়ার তরফে। তিনি একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করে জানান, যে শাড়ি শতরূপা কিনেছেন, তার বিবরণী বাক্সে লেখাই ছিল, এটা আসল সিল্ক নয়। শাড়ির বরাত দেওয়ার সময় সেটা যখন তিনি দেখেননি, তখন সেটা তাঁরই ভুল। শাড়ি ফেরত দেওয়ার প্রসঙ্গে কেয়া বলেন, “আমাদের শাড়ি ফেরত দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই। যদি না শাড়িটা ছেঁড়াফাটা বেরোয়।”
যদিও কেয়ার দাবি, শতরূপা ও তাঁদের তরফে কিছু ইমেল চালাচলি হয়েছে। সেখানে নাকি পরিচালককে প্রস্তাব দেওয়া হয়, শোরুমে এসে শাড়ি বদলে নিয়ে যাওয়ার। তার মধ্যেই এ রকম ফেসবুক পোস্ট আসতে পারে, তা তিনি ভাবেননি।
কেয়া বলেন, ‘‘সমাজে এ রকম শতরূপা সান্যাল অনেকে রয়েছেন, যাঁরা ছোট ঘটনাকে বড় করে ব্যাখ্যা করেন। নিজের ভুল অন্যদের উপর চাপিয়ে দেন।” কেয়া দাবি করেন, বহু বছর আগে তাঁর কাছে শতরূপা এসেছিলেন ছবির চিত্রনাট্য নিয়ে, গল্প শোনাতে। তাঁর ছবির প্রযোজক হওয়ার জন্য অনুরোধ নিয়ে। তাই তাঁর ফোন নম্বর শতরূপার কাছে রয়েছে। তা-ও তাঁকে সরাসরি ফোন না করে, এ ভাবে সমাজমাধ্যমে ‘কুৎসা’ করে তাঁর সংস্থার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চেয়েছেন।
এই ঘটনার পরই নেটাগরিকদের একটা বড় অংশ কেয়াকে ট্রোল করা শুরু করেন। তাঁদের উদ্দেশে কেয়া বলেন, তড়িঘড়ি মন্তব্য না করে, যে কোনও ঘটনাকে যাচাই করে নেওয়া দরকার। কেয়া টেনে এনেছেন চিত্রঙ্গদাকে। পরিচালক-কন্যাকে তিনি পরামর্শ দেন, মাকে ট্যাগ করা শেখানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনি যেন শাড়ির এ সব বিবরণী কী ভাবে দেখতে হয়, তা-ও ভাল করে বুঝিয়ে দেন।