(বাঁ দিকে) শ্রীকান্ত আচার্য। অরুন্ধতী দেব (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
কবিগুরু তিনি, বিশ্বকবিও বটে। তাঁর কলম ও লেখনীতে আশ্রয় খুঁজে পেয়েছেন দেশ-বিদেশের পাঠক ও শ্রোতারা। তাঁর কবিতায় যেমন পাঠক খুঁজে পেয়েছেন মনের রসদ, তাঁর রচিত গান হিল্লোল তুলেছে আত্মার অন্তঃস্থলে। সেই গানই যদি একক পরিবেশনার বদলে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে পরিবেশিত হয়?
নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে পরিবেশিত হল হাজার কণ্ঠের সম্মেলক রবীন্দ্রসঙ্গীত। ছবি: সংগৃহীত।
বাংলা ও দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বহু বার বিদেশভ্রমণ করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বিদেশের পাঠকের কাছেও তাঁর সৃষ্টির আবেদন কিছু কম নয়। ইউরোপে, বিশেষত ইংল্যান্ডে ভ্রমণের সময় কবিগুরু দেখেছিলেন, সেখানে কী ভাবে গানের মধ্যে দিয়ে জাতির এক সম্মিলিত রূপ প্রর্দশিত হয়। সম্মিলিত এই প্রয়াসে অংশগ্রহণকারী সব শিল্পীই যেন এক দেশ, এক জাতি। শিল্পের মাধ্যমে ফুটে ওঠা ওই ঐকতান মনে ধরেছিল রবীন্দ্রনাথের। কবিগুরুর মনে জেগেছিল সম্ভ্রম। শিল্পীদের কণ্ঠ ও সঙ্গীতের বিবিধ যন্ত্রের সমবেত পরিবেশন চাক্ষুষ করার স্মৃতি তাঁর মনে গাঁথা ছিল আমৃত্যু। কবিগুরুর সেই সুপ্ত আকাঙ্ক্ষাকেই বাস্তবায়িত করল ‘সংগীত ভারতী মুক্তধারা’। রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে মহানগরের বুকে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে পরিবেশিত হল হাজার কণ্ঠের সম্মেলক রবীন্দ্রসঙ্গীত। পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের ১২টি রাজ্যের মোট ১০১০ জন কণ্ঠশিল্পী পরিবেশন করলেন রবীন্দ্রনাথের ‘নটরাজ ঋতুরঙ্গশালা’।
১৮ জুন, বিকেল ৫.৩০টা। নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়াম গমগম করে উঠল হাজার কণ্ঠশিল্পীর গানে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বিশিষ্ট শিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য। বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে শোনা গেল আবৃত্তি। অনুষ্ঠানের যন্ত্রানুষঙ্গ রচনা ও পরিচালনায় ছিলেন আবির হোসেন। এই সমগ্র প্রয়াস পরিকল্পনা, বিন্যাস, ভাষ্যপাঠ ও পরিচালনায় ছিলেন বিশিষ্ট শিল্পী অরুন্ধতী দেব। প্রায় আড়াই ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানে হাজার কণ্ঠশিল্পীকে মঞ্চ থেকে পরিচালনাও করেছেন তিনিই। যোগ্য সঙ্গত করেছেন আবির হোসেন। বিদেশে অর্কেস্ট্রা পরিচালনায় যেমন থাকেন এক জন ‘কনডাক্টর’, বাংলার বুকেও সেই কাজ করে দেখালেন অরুন্ধতী ও আবির। আবৃত্তি ও যন্ত্রশিল্পীদের যদিও মঞ্চে দেখা যায়নি। গোটাটাই চলছিল ‘ট্র্যাক’-এর মাধ্যমে। ২০০৭ সালে প্রথম যাত্রা শুরু হয় এই প্রয়াসের। ২০২৩-এ এসে চতুর্থ সংস্করণে পা হাজার কণ্ঠের সম্মেলক রবীন্দ্রসঙ্গীতের। ২০২০ সালেই পরিবেশিত হওয়ার কথা ছিল এই অনুষ্ঠান। অতিমারি ও লকডাউনের জেরে তা পিছিয়ে যায়। অবশেষে প্রায় বছর তিনেক পরে রূপায়িত হল ‘নটরাজ ঋতুরঙ্গশালা’।