২৯তম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সলমন খান। ছবি: পিটিআই।
মঙ্গলবার বিকালে ২৯তম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে তখন চাঁদের হাট। কানায় কানায় পরিপূর্ণ নেতাজি ইন্ডোরে দর্শকদের সামনে একে একে বক্তব্য রাখলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, শত্রুঘ্ন সিন্হা, সোনাক্ষী সিন্হা, মহেশ ভট্ট, অনিল কপূররা। কিন্তু প্রত্যাশিত ভঙ্গিতেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের রাশ ধরে রাখলেন সলমন খান।
সাধারণত চলচ্চিত্র উৎসবে আগত বিশিষ্ট অতিথিদের মুখে গুরুগম্ভীর ভাষণ শুনেই অভ্যস্ত দর্শক। কিন্তু ভাইজান তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই আপাত গম্ভীর পরিবেশে অভ্যাগতদের মুখে হাসি ফোটালেন। শুরুতেই কিছু ক্ষণ চুপ থাকার পর বললেন, ‘‘আমার আগে যাঁরা বললেন আমাকে রীতিমতো বিপর্যস্ত করে দিলেন। কারণ, তাঁরা আর আমার বলার জন্য কিছুই বাকি রাখলেন না।’’
১৩ মে কলকাতার ইস্টবেঙ্গল মাঠে কনসার্ট করেছিলেন সলমন। তখন শহরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি। সেই প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দিয়ে সলমন বলেন, ‘‘গত বার দিদি অনুরোধ করেছিলেন। আমি কথা দিয়েছিলাম বলেই আজ এখানে এলাম।’’ এর পরেই তাঁর ছবির বিখ্যাত সংলাপ ধার করে সলমন বলেন, ‘‘কারণ, এক বার আমি কাউকে কথা দিলে তার পর আমি আর নিজের কথাও শুনি না।’’
আগের বার কলকাতায় এসে মমতার বাড়িতে গিয়েছিলেন সলমন। মঙ্গলবার অভিনেতা বলেন, ‘‘আমি শুধু দেখতে চেয়েছিলাম যে, দিদি আমার থেকেও ছোট বাড়িতে থাকেন কি না। কিন্তু গিয়ে দেখলাম সত্যিই তাই।’’ অনুরাগীরা জানেন, দেশের প্রথম সারির সুপারস্টার হওয়া সত্ত্বেও মুম্বইয়ের বান্দ্রার গ্যালাক্সি আবাসনের এক কামরার ঘরের বাসিন্দা সলমন। অভিনেতা হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘দিদিকে দেখে সত্যিই হিংসে হয়। কারণ দেখলাম, তিনি সত্যিই আমার থেকেও ছোট একটা বাড়িতে থাকেন।’’ এরই সঙ্গে ভাইজান তাঁর নিজের বাড়ির বর্ণনা দেন। কথাপ্রসঙ্গে বলেন, অনিল কপূর বা মহেশ ভট্টের বাড়ি তাঁর বাসস্থানের থেকে কত বড়। ভাইজানের কথায়, ‘‘আসলে আমার ও দিদির মতো সরল মনের মানুষদের জীবন যাপনের জন্য খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন হয় না।’’
বক্তৃতার মাঝে বেশ কয়েক বার আর কিছু বলার নেই বলে সলমন পোডিয়াম ছাড়ার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু দর্শকদের অনুরোধে আবার বলতে শুরু করেন। আসলে সবটাই তিনি করেছেন মজার ছলে।
মঙ্গলবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর পাশের আসনেই বসেছিলেন সলমন। মাঝে মাঝে তাঁকে মমতার সঙ্গে কথা বলতেও দেখা যায়। তবে শুধু হিন্দি নয়, সলমন দর্শকদের উদ্দেশে বাংলাতেও কথা বলেছেন। তাঁর মুখে, ‘‘কলকাতা কেমন আছ’’ বা ‘‘আমি তোমাকে ভালবাসি’’-র মতো সংলাপ শুনে প্রেক্ষাগৃহে তখন করতালির বন্যা। মঞ্চে অনিল কপূরের সঙ্গে তাঁর জনপ্রিয় ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ ছবিটির ‘জ়িন্দগি কি এহি রীত হ্যায়’ গানেও গলা মেলাতে দেখা গেল সলমনকে। কথা প্রসঙ্গেই অনিল তাঁকে মনে করিয়ে দেন, সেই ছবির চিত্রনাট্যকার আসলে সলমনের বাবা সেলিম খান।
মুখ্যমন্ত্রী সলমনকে আবারও কলকাতায় আসার জন্য অনুরোধ করলে সলমনও কথা দেন, তিনি আবার এই শহরে আসবেন এবং শুটিং করবেন। বাংলার প্রতিভার প্রতি সম্মান জানিয়ে তাঁর বক্তব্যের শেষে বলেন, ‘‘এখন বলিউড বেঁচে আছে কারণ সেখানে বাঙালিরা রয়েছেন। এত দিন আমরা আপনাদের কাজ দিয়েছি। এ বার আমাদের এখানে এসে কাজ করার পালা।’’ এখন দেখার, সেই আশা সত্যিই পূরণ হবে কি?