Rupankar Bagchi

Debate on KK's Death: ‘হু ইজ কেকে?’ একটি কথাতেই জনতার আদালতে ‘খলনায়ক’ রূপঙ্কর!

কেন কাঠগড়ায় রূপঙ্কর বাগচী? তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে কেকে-র মৃত্যুযোগ কোথায়? নাকি, এ ভাবে প্রকাশ্যে মনের কথা বলাই উচিত নয়?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২২ ২০:১১
Share:

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

সোমবার সন্ধেয় নজরুল মঞ্চে কেকে-র অনুষ্ঠান। নেটমাধ্যমে কিছু অংশের ভিডিয়ো ভাইরাল। সেখানে তারকা গায়ককে নিয়ে তুমুল মাতামাতি। তাই দেখে রাতারাতি লাইভে রূপঙ্কর বাগচী। দাবি, কেকে-র থেকেও বেশি ভাল গান বাংলার শিল্পীরা। প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁদের নিয়ে কেন এত মাতামাতি হয় না? তাঁর জিজ্ঞাসা ‘হু ইজ কেকে?’ তখন থেকেই বিতর্কে তিনি। গায়ক কটাক্ষের শিকার। মঙ্গলবার কটাক্ষের পরিমাণ আরও বেড়েছে। রাতারাতি কুখ্যাত জাতীয় পুরস্কারজয়ী শিল্পী।

Advertisement

মঙ্গলবার রাতে কেকে-র আকস্মিক মৃত্যু তাতে যেন নতুন ইন্ধন জুগিয়েছে। তোড়ে গালিগালাজ নেটমাধ্যমে। যদিও তার আগে আনন্দবাজার অনলাইনকে রূপঙ্কর সাফ বলেছিলেন, ‘‘কেকে-র প্রতি আমার কোনও রাগ নেই। শুধু কেকে কেন, অন্য ভাষার কোনও গায়ক বা গায়িকার প্রতিই আমার অসূয়াও নেই। আমার অনুরোধটুকুই কেউ বোঝেননি। ফেসবুকে আমি বলেছি, আপনারা মুম্বইকে নিয়ে এত মাতামাতি করে যাচ্ছেন। দক্ষিণ ভারতকে দেখুন, পঞ্জাবকে দেখে শিখুন, ওড়িশাকে দেখুন। বাঙালি হন। বাঙালি হন প্লিজ!’’ নিজেই এও বুঝেছিলেন, ‘‘আমি জানি, আমার এই বক্তব্য অধিকাংশ জনই বোঝেননি। কিচ্ছু করার নেই। মাথায় গোবর পোরা থাকলে এই অনুভূতি বুঝবেন কী করে?’’

গায়কের এই বক্তব্য কারও চোখে পড়েছে কিনা সন্দেহ। কেকে-কে নিয়ে বক্তব্য এবং তার পরেই শিল্পীর মৃত্যু— সব দায় বাংলার গায়কের ঘাড়ে। বহু জন লিখেছেন, এ ভাবে আর কাউকে যেন অভিশাপ না দেন রূপঙ্কর। বিনোদন দুনিয়া দ্বিধাবিভক্ত এই একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে! ইমন আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে স্পষ্ট বলেছেন, ‘‘রূপঙ্করদার মন্তব্যে আমার হাত নেই। তবে ওঁর বক্তব্য আমায় বিব্রত করেছে।’’ নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গায়ক জানিয়েছেন, যতই অভিমান থাক, নেটমাধ্যমের মতো জোরালো মঞ্চে এ ভাবে ক্ষোভপ্রকাশ বোধ হয় উচিত নয়। বিধায়ক-প্রযোজক-অভিনেতা সোহম চক্রবর্তীর দাবি, একই পেশায় যুক্ত দুই শিল্পীর মধ্যে ন্যূনতম শ্রদ্ধা, সম্মান তো থাকবে! এমন বিতর্কিত বক্তব্যের জন্যই রূপঙ্করকে ‘দিলীপ ঘোষ’ বলে ডাকার আর্জি জানিয়েছেন ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়। তাঁর মতে, ‘আজ থেকে রূপঙ্করবাবুর নাম দিলীপ ঘোষ হোক। কারণ উনিও আলটপকা কথা বলে প্রচারে থাকতে চান।’ লোপামুদ্রা মিত্রও ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মনের অস্থিরতা আর নিরাপত্তাহীনতা, যাতে আজকাল প্রায়ই ভুগি হয়তো অনেকে। তার জন্য মনের বিশেষ যত্ন ও চিকিৎসার প্রয়োজন কি নেই আমাদের?’ তিনিও কি ঘুরিয়ে রূপঙ্করকেই বিঁধলেন?

Advertisement

প্রায় সব তারকাই যখন রূপঙ্করের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন, লাইভে কেকে-র নাম ধরে বক্তব্য রাখার কারণে খুনের হুমকি পাচ্ছেন তিনি, তখনই ব্যতিক্রম দ্রোণ আচার্য। বিজ্ঞাপনী ছবির পরিচালক রূপঙ্কর-অনুরাগীদের বোঝাতে চেয়ে বলেছেন, ‘কোন জায়গা থেকে, কতটা অভিমান জমলে রূপঙ্কর বাগচী লাইভ করলেন, সেটা একবার ভেবে দেখবেন।’ দ্রোণের কথায়, অভিমানটা বাংলা এফএম রেডিয়োতে বাংলা গান না বাজানোর। অভিমান সুরকারদের বলিউড-ঝোঁক। রাগ অনুষ্ঠান আয়োজকদের প্রতিও। যাঁরা শেষ ধাপে অনুষ্ঠান সফল করতে মঞ্চ ছেড়ে দেন মুম্বইয়ের তারকা গায়কদের।

শ্রীলেখাও পাশে দাঁড়িয়েছেন রূপঙ্করের। কেকে-র শেষ পারফরমেন্সের ভিডিয়ো পোস্ট করে লিখেছেন, ‘রূপঙ্করদার জন্য কেকে-কে হারাইনি। তোমাদের রাগ, কষ্ট থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু এক শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে আর এক শিল্পীকে ছোট কোরো না। কেন রূপঙ্করদা এ রকম বলেছেন, জানি না। মানুষের মন বড় জটিল। সবাই মিলে এ রকম আক্রমণ শানালে... জানি না... আমার কথা না-ই মানতে পারো, তবু।’ কেকের মৃত্যুর জন্য তিনি শিল্পীর চূড়ান্ত ব্যস্ততা আর গরমকে দায়ী করেছেন।

স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ও কিন্তু রূপঙ্করকে নিয়ে কোনও কথা বলেননি। তাঁর মতে, এ বার শিল্পীদের জোট বাঁধার সময় এসেছে। নিজেদের রক্ষার তাগিদে। তাঁর ভয়, এখনও কি শিল্পের নামে গুন্ডামি সহ্য করবেন সবাই? আরও আশঙ্কা, হয়তো আবারও ফেসবুকেই প্রতিবাদ সীমাবদ্ধ থাকবে। তার ফাঁকে ফের একই ভাবে হয়তো চলে যাবেন আরও কোনও শিল্পী। একই সঙ্গে কেকে-র মৃত্যুকে মহিমান্বিত করতেও প্রবল আপত্তি অভিনেত্রীর। স্পষ্ট লিখেছেন, ‘দয়া করে কেকে-র মৃত্যুকে দারুণ চলে যাওয়া, গান গাইতে গাইতে চলে গেল, প্রকৃত শিল্পী— এ সব তকমা দেবেন না।’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement