রুপোলি গ্ল্য়ামার দুনিয়া থেকে কারাগার। সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুর পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে আমূল পাল্টে গিয়েছে রিয়ার জীবন। কেমন ছিল তাঁর আটাশ দিনের জেল-জীবন? সে বিষয়ে মুখ খুলেছেন তাঁর আইনজীবী সতীশ মানশিন্ডে।
বাইকুল্লা জেলে বন্দিনী রিয়াকে দেখতে সতীশ নিজে গিয়েছিলেন। জানিয়েছেন, আইনজীবী জীবনে বহু দিন পর তিনি তাঁর কোনও ক্লায়েন্টকে দেখতে কারাগারে গিয়েছিলেন।
তবে বন্দি থাকার সময়েও রিয়া তাঁর মনোবল হারাননি। দাবি সতীশের। তিনি নিজেই নিজের খেয়াল রাখতেন সেলে।
জেলে রিয়া নিয়মিত যোগাভ্যাস করতেন। তিনি একা নন। বাকি বন্দিনীদেরও তিনি যোগাভ্যাসের প্রশিক্ষণ দিতেন। যোগব্য়ায়ামের ক্লাস করাতেন। (প্রতীকী ছবি)
সতীশের কথায়, ভিআইপি-র মতো নয়। জেলে রিয়া থাকতেন সাধারণ বন্দি হিসেবে। আতিমারির কারণে বাড়ি থেকে খাবারও যেত না তাঁর কাছে।
সাহস এবং প্রত্যয়ের সঙ্গে রিয়া জীবনের কঠিন যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছেন। জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী।
একইসঙ্গে সতীশ প্রত্যয়ী যে রিয়া পরবর্তীতেও বাংলার বাঘিনির মতোই প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হবেন।
সুশান্তের পরিবারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন সতীশ। তাঁর অভিযোগ, রিয়াকে অত্যন্ত উত্যক্ত করেছে সুশান্ত সিংহ রাজপুতের পরিবার। পাশাপাশি, সিবিআই,এনসিবি, ইডি-র হাতেও রিয়া হেনস্থা হন বলে অভিযোগ সতীশের।
সংবাদমাধ্য়মের একাংশের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সতীশ। তাঁর অভিযোগ, কিছু সংবাদচ্য়ানেল শুধু টিআরপি বাড়ানোর জন্য় দিনের পর দিন রিয়াকে নিশানা করে ভুয়ো খবর দেখিয়ে গিয়েছে।
সুশান্ত সিংহ রাজপুতকে মাদক জোগানোর ‘অপরাধে’ গ্রেফতার হওয়ার কার্যত এক মাস পরে বুধবার বম্বে হাইকোর্ট এক লক্ষ টাকা বন্ডের বিনিময়ে রিয়ার জামিন মঞ্জুর করে। রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি সারং ভি কোতোয়াল বলেন, কোনও মাদকাসক্ত ব্যক্তির নেশার জন্য টাকা খরচ করা মানেই তাঁকে মাদক নিতে উৎসাহ দেওয়া, এ কথা বলা যায় না।
বিচারপতি কোতোয়ালের আরও বক্তব্য,এও বলা যায় না যে, সুশান্তের জন্য রিয়া মাদক জোগাড় করতেন মানেই তিনি মাদক চক্রের সক্রিয় সদস্য। মাদক রোধ আইনের যে সব ধারা প্রয়োগ করে রিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তার কোনওটাই যুক্তিগ্রাহ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো-র সব অভিযোগই নস্যাৎ করে দিয়েছে আদালত। বিচারপতি কোতোয়ালের প্রশ্ন, রিয়ার কাছে কোনও নিষিদ্ধ মাদক পাওয়া যায়নি। তিনি মাদক চক্রের সক্রিয় সদস্যও নন। আর্থিক লাভ বা ব্যবসা করার উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি কখনও মাদক কেনা-বেচাও করেননি। তা হলে মাদক-বিরোধী আইনের ১৯ (বেআইনি ভাবে আফিম জোগানো), ২৪ (অন্যকে মাদকের জোগান) ও ২৭-ক (বেআইনি মাদক কেনায় টাকা জোগানো) ধারাগুলি কেন তাঁর উপরে প্রয়োগ করা হল?
রিয়া এক জন তারকা, তাই তাঁর বিরুদ্ধে আদালতের দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, এনসিবি-র এই দাবিও মানতে চাননি বিচারপতি। তাঁর কথায়, ‘‘আইনের চোখে সকলেই সমান। কোনও তারকাকে যেমন আইন কোনও বিশেষ সুবিধা দেয় না, তেমন তাঁকে বিশেষ ভাবে শাস্তি দেওয়ারও কোনও যুক্তি নেই।’’
রিয়ার জামিনের জন্য বেশ কয়েকটি শর্তও রেখেছে আদালত। যেমন, আগামী দশ দিন রোজ থানায় হাজিরা দিতে হবে তাঁকে। বৃহণ্মুম্বই এলাকার বাইরে গেলে নিতে হবে পুলিশের অনুমতি। দেশের বাইরে যেতে পারবেন না তিনি। জমা রাখতে হবে পাসপোর্ট। তা ছাড়া, এই মামলায় সংশ্লিষ্ট কোনও ব্যক্তির সঙ্গেও তিনি দেখা করতে পারবেন না বলে রিয়ার আইনজীবী সতীশ মানশিন্ডেকে জানিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি।
রিয়া এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে যাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি। জামিন পাননি রিয়ার ভাই শৌভিক চক্রবর্তীও। রিয়াকে গ্রেফতারের আগের দিনই এনসিবি গ্রেফতার করেছিল তাঁর ভাই শৌভিককে।
আদালতে এনসিবি জানায়, মাদক চক্রে শৌভিকের যোগসাজশ নিয়ে তাদের তদন্ত শেষ হয়নি। তাই কোনও ভাবেই যেন তাঁকে জামিন দেওয়া না হয়। শৌভিকের জামিনের আর্জি খারিজ করে দেন বিচারক। তবে জামিন পান সুশান্তের হাউস ম্যানেজার স্যামুয়েল মিরান্ডা এবং তাঁর পরিচারক দীপেশ সবন্ত। রিয়ার আগেই তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছিল।