এ দিন গ্রেফতার হওয়ার পর রিয়া চক্রবর্তী। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
টানা তিন দিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর মঙ্গলবার দুপুরে গ্রেফতার। এ বার অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তীকে ১৪ দিন বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল আদালত। সুশান্ত মামলায় মাদক যোগের অভিযোগে রিয়াকে গ্রেফতার করেছিল নারকোটিকস কন্ট্রোল বুরো (এনসিবি)। এ দিন রাতেই ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে তাঁকে আদালতে পেশ করা হয়। শুনানি চলে এনসিবি-র অফিস থেকেই। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তাঁর আইনজীবীও।
রবিবার থেকে রিয়াকে জেরা শুরু করেছিল এনসিবি। রবি, সোম পর পর দু’দিন জেরার পর, আজও তাঁকে তলব করা হয়েছিল। কিছু ক্ষণ জেরার পর ওই অভিনেত্রীকে গ্রেফতার করে এনসিবি। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়। এর পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে তাঁকে আদালতে পেশ করা হয়। শুনানিতে তাঁকে হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
মাদক যোগ নিয়ে রবিবার থেকে রিয়াকে টানা জেরা করছিল এনসিবি। রবিবার এক টানা আট ঘণ্টা জেরা করা হয় তাঁকে। ভাই শৌভিকের মুখোমুখি বসিয়ে সোমবার জেরা করা হয় ছ’ঘণ্টা। বার বার প্রশ্নের মুখে পড়ে গতকাল এনসিবির সামনে রিয়া বলেন, ‘‘আমি যা করেছি, তা সবই সুশান্তের জন্য।’’
আরও পড়ুন: দিশা সালিয়ানের মৃত্যুর পরেই সুশান্ত কেন নষ্ট করেন হার্ড ডিস্ক, ফোন করেন আইনজীবীকে?
তবে এমন কিছু যে একটা ঘটতে পারে, আগে থেকেই তা আঁচ করতে পেরেছিলেন রিয়ার আইনজীবী সতীশ মানেশিন্ডে। রিয়া গ্রেফতার হওয়ার জন্য প্রস্তুত বলে দিন কয়েক আগেই বিবৃতি দেন তিনি। মেয়ের বিরুদ্ধে মিডিয়া ট্রায়াল নিয়ে সরব হন রিয়ার বাবা ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘আমার ছেলেকে গ্রেফতার করার জন্য ভারতকে অভিনন্দন। আমি নিশ্চিত, এর পরেই আমার মেয়ের পালা।’’ এ দিন তাঁদের সেই আশঙ্কাই শেষ পর্যন্ত সত্যি বলে প্রমাণিত হয়।
আরও পড়ুন: সুশান্তের বোনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ রিয়ার
গত ১৪ জুন মুম্বইয়ের বান্দ্রার বাড়ি থেকে সুশান্ত সিংহ রাজপুতের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। শুরুতে মুম্বই পুলিশের হাতেই তদন্তভার ছিল। পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে ওঠে। সেই মামলায় রিয়ার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট থেকে মাদকযোগের কথা উঠে এলে, আলাদা করে তদন্ত শুরু করে এনসিবি। তা নিয়ে গত সপ্তাহে দফায় দফায় জেরার পর শুক্রবার রিয়ার ভাই শৌভিক ও সুশান্তের প্রাক্তন ম্যানেজার স্যামুয়েল মিরান্ডাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হন সুশান্তের হাউজ হেল্প দীপেশও। ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হেফাজতে রয়েছেন তাঁরা।
এর আগেও রিয়ার মাদক প্রসঙ্গে জয়া সাহা এবং সিদ্ধার্থ পিঠানির সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে উঠে এসেছে মাদক যোগের কথা। সেখানে দেখা যায় তাঁর বন্ধু জয়া রিয়াকে লেখেন, “চার ফোঁটা জলে বা চায়ে মিশিয়ে ওকে সিপ করাও… ৩০-৪০ মিনিট পরে মাতাল হবে।” তা ছাড়াও অন্য একটি চ্যাটে দেখা যায় সুশান্তের ফ্ল্যাটমেট সিদ্ধার্থের থেকে রিয়া বাড়িতে মাদকের জোগান ও গুণমান সম্পর্কে জানতে চায়। প্রথমে অস্বীকার করলেও সোমবার রিয়া এনসিবির কাছে সুশান্তের জন্য মাদক কেনার কথা স্বীকার করেন। রিয়ার বয়ান অনুযায়ী সুশান্তের কর্মচারী দীপেশকে দিয়ে তিনি মাদক আনিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তিনি নিজেই কোনও দিন গাঁজা-চরস বা অন্য কোনও ধরনের মাদক নেননি। অভিনেত্রী জানান, ‘কেদারনাথ’-এর শুটিং-এর সময় থেকেই সুশান্ত মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন।
রবিবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এনসিবির দফতরে যাওয়ার সময় রীতিমতো ‘মবড’ হতে হয় রিয়াকে। তাঁর হয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, মেয়ে বলেই কি দোষ প্রমাণ হওয়ার আগে তাঁকে এত হেনস্থা করা হচ্ছে। আজ সকালেই পরোক্ষ বার্তা দেওয়ার জন্য সেই দফতরের সামনে তাঁকে দেখা যায় ‘স্ম্যাশ দ্য প্যাট্রিয়ারকি’ লেখা টি-শার্টে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের গোঁড়ামিকে ভেঙে দিতে চাওয়ার বার্তা। তাঁর কিছুক্ষণের মধ্যেই মাদকযোগে তাঁকে গ্রেফতার করে এনসিবি।