আনপজ়ড: নয়া সফর
(ওয়েব সিরিজ়)
পরিচালক: নূপুর আস্তানা, আয়াপ্পা কে এম, রুচির অরুণ, শিখা মকান, নাগরাজ মঞ্জুলে
অভিনয়: শ্রেয়া, প্রিয়াংশু, গীতাঞ্জলি, সাকিব, নীনা, নাগরাজ
৫/১০
অতিমারিকে কেন্দ্র করে একটি অ্যান্থলজি সিরিজ়, যার প্রথম পর্ব এসেছিল ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে। গত এক বছরে অতিমারির সঙ্গে ঘর করা আরও সহজ হয়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে যে শূন্যতা সর্বব্যাপী, সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে, তাতে কি পড়েছে সময়ের প্রলেপ? অ্যামাজ়ন প্রাইমের ‘আনপজ়ড-নয়া সফর’ সিরিজ়টি শূন্যতার নতুন আখ্যান, যার অনুপ্রেরণা বছর দুয়েকের নিত্যনতুন লড়াই। পাঁচটি গল্পের মধ্যে দু’টিতে অভিনয় এবং প্লটের মেলবন্ধন হয়েছে। বাকি তিনটি তেমন দাগ কাটে না। আগের সিজ়নের তুলনায় এ বারে গল্পগুলির বুনন তত পোক্ত নয়।
সিরিজ়ের সবচেয়ে শেষ গল্পটি দল-মত-নির্বিশেষে সেরার দাবি রাখে। মরাঠি পরিচালক নাগরাজ মঞ্জুলে পরিচালিত ও অভিনীত ‘বৈকুণ্ঠ’ গল্পের কেন্দ্রস্থল এক শ্মশানঘাট। সেখানে চিতার আগুন কখনও নেভে না। প্লাস্টিকে মোড়া শবদেহকে নির্বিকার বদনে পুড়িয়ে চলেছে বিকাশ চওয়ন (নাগরাজ মঞ্জুলে)। তার বাবা করোনায় আক্রান্ত। ছেলেকে নিয়ে এক কামরার ঘর ছেড়ে দিতে অনুরোধ জানায় পাড়াপড়শি। শ্মশানঘাটেই সে ছেলেকে নিয়ে থাকে। জীবন ও মৃত্যুর এক পূর্ণচক্র দেখানো হয়েছে গল্পে। ঘটনার ঘনঘটা ছাড়া কয়েকটি ইঙ্গিতপূর্ণ চিত্রকল্প বহন করেছে জরুরি বার্তা।
দ্বিতীয় সেরা গল্পটি হল ‘ওয়র রুম’। গীতাঞ্জলি কুলকার্নি অভিনীত এই শর্ট ফিল্মটি পরিষ্কার করে কিছু বলে না। তবে অতীত-প্রতিহিংসা-ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি-সিস্টেমের মতো বেশ কয়েকটি সম্ভাবনার কৌটো খুলে দেয়। যেন এক একটি মুখে চেপে রাখা রয়েছে এক একটি গল্প। স্কুল শিক্ষিকা সঙ্গীতা ওয়াঘমারে (গীতাঞ্জলি) এখন করোনার প্রথম-সারির যোদ্ধা। আপৎকালীন সেবা দেওয়ার জন্য সে নিয়মিত রোগীর পরিবারের ফোন ধরে। কিন্তু এমন একটি ফোন ঘেঁটে দেয় তার বিবর্ণ দিনযাপন। খুঁচিয়ে তোলে পুত্রশোকের যন্ত্রণা। ঠিক কী হয়েছিল, তা স্পষ্ট করে না গল্প। তবে আয়াপ্পা কে এম পরিচালিত সিরিজ়ে গীতাঞ্জলির অভিনয় আচ্ছন্ন করে রাখে দর্শককে।
নূপুর আস্তানা পরিচালিত ‘দি কাপল’ গল্পের মুখ্য চরিত্রে প্রিয়াংশু পাইনুলি এবং শ্রেয়া ধন্বন্তরী। মুম্বইয়ের উঁচু আবাসনে থাকা এই কর্পোরেট দম্পতির জীবনে নিউ নর্মাল, ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম। তবে হঠাৎ করেই শ্রেয়ার সংস্থা ধরিয়ে দেয় পিঙ্ক স্লিপ। দাম্পত্যের তুচ্ছাতিতুচ্ছ খিটিমিটি বড় আকার নেয় দু’জনের মধ্যে। তবে প্লটকে জটিল করেননি পরিচালক। শ্রেয়া এবং প্রিয়াংশুর রসায়নকে বাজি ধরেই পার হয়ে যায় কঠিন সময়।
সাকিব সলীম, আশিস বর্মা এবং স্যাম মোহন অভিনীত সিরিজ়ের তৃতীয় গল্প ‘তিন তিগাড়া’। রুচির অরুণ পরিচালিত এই গল্পটি খানিক লক্ষ্যভ্রষ্ট। চুরি করা মাল বিক্রির জন্য দিন গুনছে তিন খেটে খাওয়া শ্রমিক। কিন্তু লকডাউনের কারণে তাদের মাল বিক্রি করার পথ নেই। এর মধ্যে তিনজনের ভাব, অভাব, লড়াই, বন্ধুত্বের গল্প বুনতে চেয়েছেন পরিচালক। তবে গল্পটা শেষ পর্যন্ত কোথাও পৌঁছয় না।
শিখা মকানের ‘গোঁদ কে লাড্ডু’তে মুখ্য চরিত্রে নীনা কুলকার্নি, দর্শনা রাজেন্দ্রন এবং লক্ষ্যবীর সরণ। অতিমারির অজুহাতে একা থাকা এক বয়স্কার টেকনোলজি-নির্ভর হয়ে ওঠা, এবং অন্য দিকে এক ডেলিভারি বয়ের বাঁচা-মরার লড়াই। চেনা প্লট আরও একবার তুলে ধরা হয়েছে। কারণ অতিমারি প্রেক্ষাপটে এই বাস্তবই মূর্ত হয়ে উঠেছিল ঘরে ঘরে।
অতিমারিকে নিয়ে গল্প ভাবা, তার রূপায়ণ সহজ নয়। তবে এই অ্যান্থলজির নতুন সিজ়নের জন্য বাস্তবকে আরও তলিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।