Rasbhari

রসেও ঘাটতি, মূল বক্তব্যেও

গল্পের সূত্রধর নন্দকিশোর ত্যাগী (আয়ুষ্মান), মেরঠের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। তার বয়সি আর পাঁচটি কিশোরের মতো নন্দও ‘পুরুষ’ হয়ে ওঠার জন্য মরিয়া।

Advertisement

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২০ ০০:২৫
Share:

‘রসভরী’

রসভরী

Advertisement

(ওয়েব সিরিজ়)

পরিচালনা: নিখিল ভট্ট

Advertisement

অভিনয়: স্বরা ভাস্কর, আয়ুষ্মান সাক্সেনা, প্রদ্যুম্ন সিংহ

৫/১০

নিখিল ভট্টের ওয়েব সিরিজ় ‘রসভরী’র ট্রেলার দেখে অনেকের মনে হয়েছিল, গল্পের মূল সুর বাঁধা শিক্ষিকার জন্য কিশোর ছাত্রের যৌন ফ্যান্টাসিতে। মূল ধারার সিনেমা, সাহিত্য এমনকি বি-গ্রেড ছবির জন্যও এই প্লট লোভনীয়। তবে উত্তেজক দৃশ্যের আশায় এই সিরিজ় দেখতে বসলে হতাশ হবেন। শিক্ষিকা-ছাত্রের রসায়নও মূল বক্তব্যের একটি অংশমাত্র। আসলে বলতে চাওয়া হয়েছে, ছোট শহরের এক নারীর অবদমিত যৌনবাসনার গল্প এবং তা চরিতার্থ করার জন্য সেই রমণী কী কী পথ নিতে পারে। বলতে চাওয়া ও দেখানোর মধ্যে রয়ে গিয়েছে বড়সড় ফাঁক। যে কারণে কয়েকটি সদর্থক বার্তা থাকা সত্ত্বেও, নেহাত মধ্যমানের একটি সিরিজ় হয়ে রয়ে যায় ‘রসভরী’।

গল্পের সূত্রধর নন্দকিশোর ত্যাগী (আয়ুষ্মান), মেরঠের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। তার বয়সি আর পাঁচটি কিশোরের মতো নন্দও ‘পুরুষ’ হয়ে ওঠার জন্য মরিয়া। স্কুলে আসে ইংরেজির নতুন শিক্ষিকা শানু বনসল (স্বরা)। স্কুলে শানু বেশ কড়া। কোনও রকম শিথীলতা পছন্দ করে না। কিন্তু পাড়ার মুদি-ময়রা থেকে এমবিএ পড়ুয়া, দারোগা বাবু থেকে কেবল অপারেটর... সকলেই পরিচিত শানুর অন্য এক সত্তার সঙ্গে। স্ত্রী-প্রেমিকাদের নজর এড়িয়ে শানুর বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে চলে সেই ‘রাসলীলা’। তবে কি শানুর পার্সোনালিটি ডিজ়অর্ডার রয়েছে? তার স্বামী নবীন (প্রদ্যুম্ন) অন্তত তা-ই মনে করে এবং জানে। কাজের জন্য তাকে বাইরে বাইরে থাকতে হয়। নন্দের মুখে স্ত্রীর নামে কুৎসা শুনেও সে রেগে যায় না। শোনায় শানুর সমস্যার কথা। কিন্তু সেটাই কি সত্যি?

কোনও মহিলা একাধিক পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক তৈরি করছে, সেটা দেখাতে এখনও বেগ পেতে হয় ওটিটি নির্মাতাদের। হাই-লিবিডো মহিলা মানে ‘ফোর মোর শটস প্লিজ়!’ ওয়েব সিরিজ়ের চার বন্ধু, যারা আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকে সব রকম সুবিধাভোগী। ছোট শহরের এক নারীর কাছে এই পথ সহজলভ্য নয়। তাই শানুকে সাজতে হয় রসভরী। কনটেন্টের ক্ষেত্রে স্টিরিয়োটাইপ হলেও, আপাতত সেটাই দেখাচ্ছেন দেশজ চিত্রনাট্যকাররা। ‘বধাই হো’ ছবির অন্যতম লেখক শান্তনু শ্রীবাস্তব সিরিজ়ে ‘পলিটিক্যালি কারেক্ট’ থাকার এই চেষ্টা না করলেই পারতেন। তন্ত্র-মন্ত্র, আইডেন্টিটি ডিজ়অর্ডারের মতো অজস্র উপাদান দিয়ে দর্শককে শেষ দৃশ্য পর্যন্ত ধরে রাখা হয়েছে। ছোট শহরের গৃহবধূদের চরিত্রায়নও ছকে বাঁধা। স্বামীকে আঁচলে বেঁধে রাখা ছাড়া তাদের কোনও কাজ নেই!

‘বীরে দি ওয়েডিং’-এর পরে আরও এক বার যৌনতা নিয়ে কথা বলার পরিসর তৈরি করলেন স্বরা, তাঁর অভিনীত চরিত্রের মাধ্যমে। সিরিজ়ে তিনি তুখড় নন। বরং পার্শ্বচরিত্রে রশমী অগডেকর (প্রিয়ঙ্কা), নীলু কোহলি (পুষ্পা) অনেক বেশি নজর কেড়েছেন। নন্দের চরিত্রে আয়ুষ্মান সাক্সেনা মোটের উপরে ভাল। কোথাও কোথাও অতি-অভিনয় করেছেন।

‘রসভরী’র জন্য স্বরা ট্রোলড হয়েছেন। আদৌ কি তাঁর রসভরী সত্তা প্রগতিশীল? যৌনতা নিয়ে কথা বলার জন্য এখনও ট্রেলারে উত্তেজক দৃশ্য না রাখলে প্রচার সম্পূর্ণ হয় না। একই যুক্তিতে কারও বিশ্বাসের সুযোগ নেওয়া ক্ষমতায়নের পথ হতে পারে না। সে নারীই করুক বা পুরুষ!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement