Movie Review

হিন্দুস্তানি ২: এত বড় অভিনেতাদের পেয়েও ব্যবহার করলেন না শঙ্কর! অবহেলার ছাপ স্পষ্ট

কমল হাসন অভিনীত ‘ইন্ডিয়ান ২’ ছবিটি যেন প্রথম ছবিটির ‘কার্টুন’ সংস্করণ। দেখল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৪ ১২:৩০
Share:

‘হিন্দুস্তানি ২’ ছবির দৃশ্যে কমল হাসন। ছবি: সংগৃহীত।

দুর্ভাগা সেই দেশ, যে দেশে বীরের দরকার— কথাটা নাট্যকার বারটোল্ট ব্রেখ্টে‌র। কথাটা আবার মনে পড়ল সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া কমল হাসন অভিনীত ছবি ‘হিন্দুস্তানি ২’ দেখতে গিয়ে। যে দেশে ডিজিটাল প্রযুক্তি আসার পর ১৫ সেকেন্ডে অজ পাড়াগাঁয়ের কোনও যুবক সেলিব্রিটি হতে পারেন, সেখানে এখনও তিন ঘণ্টা ধরে বিপুল ব্যয় করে মহাপুরুষকে ফিরিয়ে আনার এমন নাটক কী করে ফাঁদলেন এই ছবির পরিচালক-প্রযোজকেরা! আইকনিক কমল হাসনও কেন সুভাষচন্দ্র বসুর মহানিষ্ক্রমণের আদলে গল্প বানিয়ে হাজারটা জগাখিচুড়ি প্লটের সঙ্গে পরিবেশন করতে রাজি হলেন?

Advertisement

দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত সাম্প্রতিক হিন্দি ছবি ‘এলএসডি -২’-এ সময়ের কালো দেখতে দেখতে আঁতকে উঠছিলাম। সেখানে সবাই ব্লগার, সবাই ভ্লগারের দুনিয়ায় কী ভাবে নিজেই নিজের মাংস কেটে বেচে দিচ্ছে মানুষ, মেটাভার্সে উলঙ্গ মানুষকে ধর্মীয় গোঁড়ামির সঙ্গে দেখিয়ে কী কশাঘাতই না করেছেন দিবাকর! তার পরেও এই ছবিতে একই বিষয়, অর্থাৎ সামাজিক অধঃপতন ও মানুষের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে কোটি কোটি টাকা খরচ করে ভূতুড়ে রূপটান-সহ কফিন থেকে বার করে আনা হল আইকনিক ‘হিন্দুস্থানি’ কমল হাসনকে। তা-ও আবার বয়স্ক প্রবীণ ‘কমন ম্যান’-এর কার্টুন বার বার পর্দায় চলেফিরে বেড়াচ্ছে দেখিয়ে মনে করিয়েও দেওয়া হল, এ সিনেমা পবিত্র ও বোদ্ধাদের। এ সব দেখে তো শিশুরাও হাসবে...

ছবির দৃশ্যে দুই রূপে কমল হাসন। ছবি: সংগৃহীত

তিন ঘণ্টার এ ছবি। মাঝেমাঝেই সেখানে আবার হিন্দি ‘ডাবিং ভার্সান’-এ ভেসে উঠছে গুজরাতি, পঞ্জাবি ভাষা। ভাষাবিদ না হলে গোটা ছবিটা বুঝে ওঠাই শক্ত! গুলশন গ্রোভার খলনায়ক, কিন্তু বিপুল সম্পত্তির মালিকানা যে ব্যবসায়ীর, সে কী করে হঠাৎ হিন্দুস্তানি কমলের ‘ম্যাজিক’ ছোঁয়ায় ও রকম মেয়েদের মতো আচরণ করতে থাকে? কোথায় তা হলে বাস্তবতার সমতা বজায় থাকল এখানে? হচ্ছিল তো দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা! এমনকি, বাড়ির ছোটরাও বড়দের বিরুদ্ধে রীতিমতো গলা চড়াচ্ছিল... ব্লগারেরা ব্লগ বানাচ্ছিল, সেখানে এই প্লট কী ভাবে বিশ্বাসযোগ্য হয়! অথবা, হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে হঠাৎ হিন্দুস্তানি তার দিব্যদর্শনের পরিচয় দিচ্ছে! প্রশ্ন জাগে, সে কি সুপারম্যান গোত্রের কেউ ? খলনায়কের গোটা বাড়ি, এমনকি শৌচাগারও সোনা দিয়ে মোড়া। এ সব কী করে আজকের দিনে দেখালেন পরিচালকেরা? তাঁরা কি দর্শককে মূর্খ ভাবেন? ছবির পরিচালক শঙ্কর তো এর আগে নানা রকম ছবি বানিয়েছেন, তিনি কি এ ছবিটার এ সব দিকে মন দেননি! না কি স্রেফ মজা করতে তিন ঘণ্টায় কোটি কোটি টাকা খরচ করলেন?

Advertisement

‘ইন্ডিয়ান’ একটি আইকনিক ছবি। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সাড়া ফেলে দিয়েছিল দুর্নীতি বিরোধী কমল হাসনের এই ছবি। ছবিটি ফিরে দেখলে দেখা যাবে কোনও আলটপকা ‘সার্কাস’ তাতে ছিল না। ছিল শান্ত, স্বাভাবিক, বিশ্বাসযোগ্য কিছু মুহূর্ত। সেটাই ছুঁয়েছিল অগণিত দর্শককে। সেই ভাবমূর্তিকে ব্যবহার করে এত বছর পর এই যাচ্ছেতাই বড়লোকি মশকরাটার কোনও দরকার ছিল কি? সারা দুনিয়ায় কত সিক্যুয়েল হয়েছে এর আগে। কিন্তু শুধুমাত্র পাতি ব্যবসা ছাড়া নিজের মূর্তি নিজে ভাঙার কি খুব বেশি উদাহরণ চোখে পড়েছে এ রকম বার বার?

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

এ ছবিতে একাধিক বড় অভিনেতার উপস্থিতি রয়েছে। স্বয়ং কমল হাসন ছাড়াও গুলশন গ্রোভার, সিদ্ধার্থ, অখিলেন্দ্র মিশ্রের মতো অভিনেতাদের পেয়েও পরিচালক ব্যবহার করেননি। বদলে যেন ছেলেখেলা করেছেন তাঁদের নিয়ে।

আইকনিক চরিত্রদের বায়োপিক সাম্প্রতিক ভারতীয় ছবিতে লক্ষণীয় ভাবেই ঘটছে। এক বিরাট মাপের চরিত্রকে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে যদি তাঁকে নিয়ে কার্টুন শো বা সার্কাস চলতে থাকে, তা নিয়ে সমস্যা আছে বইকি!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement