আর কত ভাবে ভূতের গল্প বলা যায়? সম্ভবত সে ভাবনা থেকে ইমরান হাশমি অভিনীত ‘ডিবুক’ ছবির উত্থাপন। মলয়ালম ছবি ‘এজ়রা’র রিমেক হিন্দি ছবিটি মুক্তি পেয়েছে অ্যামাজ়ন প্রাইমে। পরিচালনা করেছেন জয় কৃষ্ণন। ‘এজ়রা’ ছবির নির্দেশক ছিলেন তিনি। হিন্দি ছবিতে মূল ছবির ঋণ স্বীকার করা হয়নি।
ইহুদি লোককথায় রয়েছে ‘ডিবুক’, এক দুষ্ট আত্মা যাকে বাক্সবন্দি করে রাখা হয়। যাদের শরীর ও আত্মা এক সুতোয় গাঁথা নয় (ফিয়ার সাইকোসিস বা মানসিক সমস্যা রয়েছে), অপূর্ণ কার্যসিদ্ধির জন্য তাদের উপরেই ভর করে ডিবুক। ইহুদি লোককথা, মরিশাসের বুকে আধিভৌতিক কর্মকাণ্ড... ছবিতে নতুনত্ব রয়েছে। শুরুতে যে আবহ তৈরি করা হয়, তাতে আগ্রহ বাড়ে। তবে ভাবার কোনও কারণ নেই যে, একেবারে নতুন ভঙ্গিমায় এই আবহ তৈরি করা হয়েছে। হাওয়ার তোড়ে ঝাড়বাতির বেড়ে যাওয়া ঝনঝন শব্দ, চিলেকোঠার ঘরে ধুপধাপ পদধ্বনি, বাথরুমের আয়নায় অশরীরী ছায়া... মানে এতকাল দর্শক যা যা দেখতে অভ্যস্ত, সে ভাবেই তুলে ধরা হয়েছে।
কাজের সূত্রে মরিশাসে বদলি হয় স্যাম (ইমরান হাশমি) এবং তার স্ত্রী মাহি (নিকিতা দত্ত)। খ্রিস্টধর্মাবলম্বী স্যামকে মেনে নেয়নি মাহির বাবা। নতুন জায়গায় খানিক মনমরা হয়ে থাকে মাহি। ঘর সাজানোর শখ রয়েছে তার। তাই অ্যান্টিক শপের রহস্যজনক বাক্স ঠাঁই পায় স্যাম-মাহির বাংলোয়। বাক্সের গায়ে হিব্রু ভাষায় লেখা কয়েকটি শব্দ। বাক্স খুলতেই শুরু হয়ে যায় অশরীরী আত্মার খেলা!
প্রথমার্ধ এগিয়েছে খানিক ধীর লয়ে। তবে ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছনোর পরেই ছবি যেন দিশা হারায়। বিশেষত ভূত ছাড়ানোর দৃশ্যটি যেন ভাবনার অভিনবত্বে জল ঢেলে দেয়! যখন ছকে বাঁধা হরর স্টোরির বাইরে গিয়ে গল্পের অবতারণা হয়েছিল, তখন ভূত ছাড়ানো কি ছকভাঙা হতে পারত না? প্রশ্ন রয়ে যায় পরিচালকের কাছে।
ডিবুক
পরিচালনা: জয় কৃষ্ণন
অভিনয়: ইমরান, নিকিতা, দর্শনা, ইমাদ, মানব
৫/১০
হরর গল্পের ক্লাইম্যাক্স বলা দস্তুর নয়। তবে ছবির পুরনো ঘটনা এবং সাম্প্রতিক ঘটনার মধ্যে একটি চমৎকার যোগসূত্র ছিল। সমাজ-নিয়মের তোয়াক্কা না করে দুই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর ভালবাসা এবং তাদের উপরে সমাজের প্রতিশোধের প্লটটিকে আরও খোলসা করা যেত। তবে হরর ছবিতে তন্ত্রমন্ত্র পড়ে ভূত ভাগানো না দেখানো হলে স্বাদ মেটে না নির্মাতাদের! অগত্যা ছবির সে সম্ভাবনা রসাতলে গিয়েছে।
মুখ্য চরিত্রে ইমরান বিশ্বাসযোগ্য, সুন্দর। নিকিতা যথাসম্ভব চেষ্টা করেছেন। ইমাদ শাহ এবং দর্শনা বণিকের জুটি হিসেবে বিশেষ কিছু করণীয় ছিল না। তবে ছবিতে একটি বিশেষ লুকে দর্শনা বাজিমাত করেছেন। রব্বি মার্কাসের চরিত্রে মানব কৌল সুন্দর।
ছবিতে আবহ সঙ্গীতের ব্যবহার পরিমিত। হাস্যাস্পদ ভূতের দৃশ্য খুব বেশি নেই। তবে গল্প যে ভাবে বাঁক নেয়, সেই পথ মসৃণ নয়। রাতে ওটিটির পর্দায় ছবি দেখতে গিয়ে দু’এক বার ভয় পেলেও পেতে পারেন। শেষটা ভাল হলেই সব ভাল হতে পারত।