Mithya

Mithya: প্রতিশোধের থ্রিলার

অভিনেত্রী ভাগ্যশ্রীর কন্যা তাঁর প্রথম অভিনয়ে খলচরিত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত তো করেছেনই, উপরন্তু কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন হুমা, পরমব্রতদের মতো সিনিয়রদের সঙ্গে।

Advertisement

সায়নী ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৪৫
Share:

পাহাড়ের প্রেক্ষাপটে আরও একটি হিন্দি থ্রিলার। ব্রিটিশ টিভি সিরিজ় ‘চিট’ অবলম্বনে দার্জিলিঙের চোখজুড়ানো নিসর্গে জমে উঠেছে ‘মিথ্যা’র কাহিনি। পরিচালক রোহন সিপ্পির এই প্রতিশোধের থ্রিলারে সম্পর্কে বিশ্বাসভঙ্গ, সন্তানধারণের সমস্যা, সাহিত্যে কুম্ভীলকবৃত্তির মতো একাধিক সুতো দিয়ে চিত্রনাট্য বোনা হয়েছে। কিছু সুতো চেনা মনে হবেই, কারণ মা-বাবার ভুলে অপূর্ণ শৈশবের ক্ষত সামলাতে না পারা ও সম্পর্কে পা পিছলে যাওয়ার গল্প দর্শক একাধিক বার দেখেছেন সম্প্রতি। তবে এই সিরিজ়ের সদর্থক দিক হল, এর স্বল্প দৈর্ঘ্য। ছ’টি সংক্ষিপ্ত পর্বে গুটিয়ে ফেলা হয়েছে রহস্য। শেষ পর্ব ছেড়ে গিয়েছে আগামী সিজ়নের সূত্রও।

Advertisement

পাহাড়ের আবাসিক কলেজে হিন্দি সাহিত্যের অধ্যাপক জুহি (হুমা কুরেশি)। তার বাবা স্বনামধন্য লেখক আনন্দ (রাজিত কপূর), যার মেয়ে হিসেবে সুবিধে নিতে নারাজ জুহি। স্বামী নীলের (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) সঙ্গে তার আপাত-সুখের সংসার। নীল তার সহকর্মীও বটে। আর এক সহকর্মী বিশাল (ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত), যাকে মনে মনে পছন্দ করে জুহি। প্রথম পর্বের শুরুতেই তা দেখিয়ে দেওয়া হয়। তবে গল্প কিন্তু জুহি-বিশালকে নিয়ে এগোয় না, ঘুরে যায় জুহির এক রহস্যময় ছাত্রীর দিকে। অন্যের লেখা নিজের নামে চালানোর অভিযোগে রিয়া রাজগুরু (অবন্তিকা দাসানি) নামে সেই ছাত্রীকে একহাত নেয় জুহি। এর পরে রিয়া কী ভাবে জুহির জীবন অতিষ্ঠ করে তোলে, তা নিয়ে শুরু হয় প্রতিশোধের ধূর্ত খেলা। পর্দা উঠতে থাকে এক-একটি সত্যির উপর থেকে। দার্জিলিঙের পাহাড়ে কুয়াশা কাটে একেবারে শেষ পর্বে, ‘মিথ্যে’র সত্যিটা সামনে আসে।

মিথ্যা (ওয়েব সিরিজ়)
পরিচালনা: রোহন সিপ্পি
অভিনয়: হুমা, পরমব্রত, অবন্তিকা, রাজিত, সমীর, ইন্দ্রনীল
৫.৫/১০

Advertisement

প্রথমেই বলতে হয়, এই সিরিজ়ের অন্যতম প্রাপ্তি, রিয়া রাজগুরুর চরিত্রে অবন্তিকা দাসানির অভিনয়। ২৩ বছরের অবন্তিকা তাঁর চাহনি, শরীরী ভাষা ও কণ্ঠস্বরে পর্যন্ত জিঘাংসা ঢেলে দিয়েছেন নায়িকার প্রতি। অভিনেত্রী ভাগ্যশ্রীর কন্যা তাঁর প্রথম অভিনয়ে খলচরিত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত তো করেছেনই, উপরন্তু কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন হুমা, পরমব্রতদের মতো সিনিয়রদের সঙ্গে। হুমা এই সিরিজ়ে খানিক নিষ্প্রভ, যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন মাঝে মাঝেই। ‘মহারানি’ সিরিজ়ে যে দাপট দেখিয়েছিলেন, ‘মিথ্যা’য় সেই মান যেন ধরে রাখতে পারলেন না হুমা। তবে নিজের চেহারা অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন ও তা প্রত্যয়ের সঙ্গে ক্যারি করা তাঁর মতো অভিনেত্রীর কাছ থেকে শেখার মতো। পরমব্রতকে ইতস্তত গুটিয়ে যাওয়া, ভীরু প্রকৃতির স্বামীর চরিত্রে দেখা গিয়েছে এই সিরিজ়ে। হুমার সঙ্গে তাঁর কেমিস্ট্রি জমে না, কাহিনি অনুসারে। কেন জমে না, তার কারণও নিজ অভিনয়ে সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছেন পরমব্রত। ‘ভালনারেবল’ থেকে আচমকা হিংস্র হয়ে ওঠা, দুর্বল মুহূর্তে বেসামাল হয়ে পড়ার দৃশ্যে তাঁর অনায়াস বিচরণ। রাজিত কপূর, সমীর সোনি, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তের মতো অভিনেতাদের চরিত্র ততটা যত্ন নিয়ে লেখা হয়নি বরং। রাজিতের স্ত্রীর চরিত্রে অবন্তিকা আকেরকরের অতি অভিনয় বেমানান লাগে। ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ভাল লাগে কৃষ্ণ সিংহ বিশতের অভিনয়।

প্রতি পর্বের শুরুতে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে, গরাদের এ পার-ও পারে। যে মৃত্যুকে ঘিরে আবর্তিত পুরো কাহিনি, তা-ও প্রথমেই দেখানো হয় এবং ফিরে ফিরে আসে প্রতি পর্বে। সাদাকালোয় দেখানো এই দৃশ্যগুলি চেনা ট্রিটমেন্ট ও পুনরাবৃত্তির দোষে দুষ্ট। গল্প সাজাতে এমন কিছু ঘটনাক্রম দেখানো হয়েছে, যা একটু অসংলগ্ন। ছাত্রী প্রথম বার বাড়িতে এলে প্রফেসর তাকে সিঙ্গল মল্ট অফার (এ ক্ষেত্রে ছাত্রীর তরফে প্ররোচনা থাকলেও) করে। সামান্য আলাপ অচিরেই গড়ায় বেডরুমে... পত্নীনিষ্ঠ প্রফেসর যেন বড় সহজেই ফাঁদে পড়ে। পুলিশি তদন্তও সংক্ষিপ্ত ভাবে দেখানো হয়েছে। বেশির ভাগ দৃশ্য ইনডোরে, তবে দার্জিলিঙের মেজাজ কিছুটা হলেও ধরা পড়েছে শীর্ষ রায়ের ক্যামেরায়।

সিরিজ়টি ভালমন্দ মেশানো খাতে বয়ে চললেও ‘মিথ্যা’র প্রথম সিজ়নে এর মুখ্য কলাকুশলীরা উত্তেজনা ধরে রাখতে পেরেছেন। তাই পরের সিজ়নের অপেক্ষা করাই যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement