ছবির দৃশ্যে করিনা কপূর খান। ছবি: সংগৃহীত।
অন্ধকারের মধ্যে হাতড়ে চলা জীবনের পথ। এমন মনখারাপের কালেই হনসল মেহতার নতুন ছবি ‘বাকিংহাম মার্ডারস’ মুক্তি পেয়েছে। ছবির বিষয়টিও অন্ধকারে মজে রয়েছে। তা যেন মনখারাপের রেশ বাড়িয়ে দিল অনেকখানি!
ছবির মুখ্য চরিত্রে করিনা কাপুর খান। করিনার নামোচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গেই যে ছবি ফুটে ওঠে, তার থেকে খানিক ভিন্ন এই ছবির চরিত্র। ‘কভি খুশি কভি গম’-এর পূজাকে এখনও ভোলেননি দর্শক। কিন্তু, এ ছবিতে করিনা আর সেই ‘পূজা’র যেন যোজন দূরত্ব! নিজের চেনা ভঙ্গি এখানে সাবলীল ভাবে দুমড়ে-মুচড়ে ভেঙেছেন নিজেই। এই করিনার মুখে রূপটান নেই, পোশাকের জেল্লাও কম। যেন, এই বিষণ্ণ সময়ের মতোই অঘোষিত এক অশৌচ এসে ছায়া ফেলেছে তাঁর মুখ ও শরীরে! এই করিনা হাসেনও না। লাস্য নেই তাঁর মুখে। বরং তিনি গম্ভীর, বুদ্ধিদীপ্তও। শুধু এক বারই তাঁকে লাবণ্যময়ী মনে হয়েছে। নিজের শিশুপুত্রের সঙ্গে, যে সন্তান অকালপ্রয়াত। করিনার এমন রূপ নিয়ে অবশ্য এর আগেই চর্চা হয়েছে বিস্তর। নায়িকা নিজেই সমাজমাধ্যমে একাধিক ছবি ভাগ করেছিলেন। বোঝাই যাচ্ছিল, করিনার নতুন অবতার শুধু প্রযোজক হিসাবে নয়, বরং নায়িকা হিসাবেও।
ছেলের হত্যারহস্য সমাধান করতে বদ্ধপরিকর জ্যাস-রূপী করিনা। ছবি: সংগৃহীত।
‘বাকিংহাম মার্ডারস’ দেখলে প্রাথমিক ভাবে ছবিতে একটা হলিউডি ভাব ফুটে উঠছে মনে হতেই পারে। আসলে গোটাটাই বিদেশে শুটিং করা হয়েছে। বেশির ভাগ চরিত্রই শ্বেতাঙ্গ। তার পাশাপাশি এই ছবির নির্মাণশৈলীও সেই ভাবনার গোড়ায় জল দেয়। ছবিতে আলো ব্যবহার বা চিত্রগ্রহণেও আলো-আঁধারির মায়া, বিষয়বস্তুর সঙ্গে মানানসই। অথচ, ইংল্যান্ডের বাকিংহ্যামশায়ারে শুটিং হলেও জনপ্রিয়তার খাতিরে এক বারও ‘লন্ডন সেতু’ বা রাস্তাঘাট দেখানো হয়নি এ ছবিতে। বরং প্রবাসের কানাগলিই দেখা গিয়েছে বার বার। কারণ, প্রবাসী ভারতীয়দের সাম্প্রদায়িক অশান্তিই এ ছবির মূল। এই ‘অন্য বিলেত’ বা বলা ভাল, ‘সস্তার বিলেতে’ই অতর্কিতে একটি শিশুর হত্যাকাণ্ড মানিয়ে যায় দিব্যি। তার পর সেই খুনকে ঘিরে গল্পের মারপ্যাঁচ ঘন হয়ে ওঠে। রহস্য গল্পের প্লটের জট ছাড়িয়ে ফেলতে নেই। তবে বলা যেতে পারে, এ ছবিকে বেঁধে রেখেছেন করিনা আর করোনা।
করোনার অভিশপ্ত কালপর্ব পেরিয়ে দাম্পত্যের বিশ্বাস-অবিশ্বাস, সমকাম, প্রবাসী কিশোরদের মাদকাসক্তি, প্রবাসের মহল্লায় মহল্লায় সাম্প্রদায়িক অশান্তি এবং একটি হত্যা ও তার সমাধানই এ ছবির মূল প্রতিপাদ্য। এরই বিপরীতে একা দাঁড়িয়ে রয়েছেন করিনা— ‘জ্যাজ়’ বা জসমিত। সন্তানহারা এক মা, যার পেশা গোয়েন্দাগিরি। ‘হাজার চুরাশির মা’র মতোই নিজের সন্তানের হত্যার শোধ নিতে না পারলে যার রাতের ঘুম আসে না।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মহিলা গোয়েন্দাদের আমরা বাংলা সাহিত্য-সিনেমায় নানা সময়ে দেখেছি। অনেকের মনে পড়তে পারে ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘শুভ মহরত’ ছবিটি বা হালের ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরীর ‘ছোটোলোক’ সিরিজের দামিনী বসু অভিনীত মহিলা পুলিশ চরিত্রটিকে। তবে, এই দুই বাঙালি মহিলার গোয়েন্দাগিরির সঙ্গে এ ছবির করিনার ‘মাচো’ ইমেজ আপাত ভাবে মেলে না। কিন্তু, কোথায় যেন নারী স্বভাবে এঁরা তিন গোয়েন্দাই একটু বেশি সংবেদনশীল। তাই এ ছবির শেষে যখন অপরাধীকে শনাক্ত করা যায়, করিনা চেঁচিয়ে বলে ওঠেন, ‘‘একটি শিশুকে হত্যা করেছেন আপনি, বুঝেছেন, একটি শিশুকে...।’’ এই চিৎকারে মনে পড়ে যায়, শিশুদের লাশ আজ দুনিয়া জুড়ে ছড়ানো। তা কখনও গাজ়ায়, তো কখনও সিরিয়ায়।
তবে, প্রেক্ষাগৃহে দেখানো ছবি হিসাবে চিত্রনাট্য আরও টানটান হতে পারত। বরং এই বিষয়বস্তু ওটিটি-র জন্য অধিকতর উপযুক্ত ছিল।