ছবির নামেই হোঁচট খাবেন দর্শক। কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে ‘সামসারা’ শব্দটির অর্থ অজানা। বাংলার বুদ্ধিমান পরিচালকেরা এই মুহূর্তে অচেনা পথে হেঁটে চেনা গন্তব্যে পৌঁছতে চাইছেন। তাঁদের সাহায্য করছেন লেখকরাও।
ভূত শুধু কল্পনাপ্রসূত নয়। ভূতের আর একটি মানে অতীত। রক্তে ভেজা কালিমালিপ্ত অতীত মানুষের পিছু ছাড়ে না। ‘সামসারা’য় ভূত শব্দটির উল্লেখ নেই। বরং ‘পরপার’ শব্দটির মধ্য দিয়ে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে জীবন পরবর্তী অধ্যায়ের। এই গূঢ় উপলব্ধিতে পৌঁছনোর জন্য পরিচালক সুদেষ্ণা রায় ও অভিজিৎ গুহ ছবিটিকে রূপ দিয়েছেন সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারের। গল্প ও চিত্রনাট্য পদ্মনাভ দাশগুপ্তের। আগের মাসে মুক্তি পাওয়া হরনাথ চক্রবর্তীর হরর কমেডি ‘ভূতচক্র প্রাইভেট লিমিটেড’-এরও গল্প পদ্মনাভর। দু’টি গল্পের প্লট আলাদা। তবে মূল ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু একটিই— অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের টাইম ট্রাভেল, জীবন-মৃত্যুর লুকোচুরি।
‘সামসারা’র কৃতিত্ব তার পরিবেশনে। জ়ঁর নিয়ে বাংলার পরিচালকেরা যে এক্সপেরিমেন্ট করছেন, তা প্রশংসনীয়। ছবিতে বিক্রম (ইন্দ্রজিৎ), অতনু (ঋত্বিক) ও চন্দন (রাহুল) তিন বন্ধুর রোজনামচায় হানা দেয় গোপন অতীত। যে অতীত শোনায় ভবিষ্যতের অশনি সঙ্কেত। প্রথমার্ধে তিন বন্ধুর জীবনের একটি আভাস দেওয়া হয়। ছড়িয়ে দেওয়া হয় থ্রিলারের তিনটি সুতো। দ্বিতীয়ার্ধে গল্পের গতি একটু মন্থর। একটি সুতো গোটানোর সঙ্গে সঙ্গেই গল্পের বাকি চলন অনুমান করা যায়। তবে শেষ অবধি সাসপেন্স রয়েছে ছবিতে।
গল্প বলার ধরনে মধ্যযুগীয় মর্যালিটি প্লে ‘এভরিম্যান’-এর আভাস মেলে। দ্বিতীয়ার্ধে ছবির ল্যান্ডস্কেপও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে ওঠে। রানা দাশগুপ্তের ক্যামেরায় জায়গাটি দেখতে ভারী সুন্দর লেগেছে।
সামসারা পরিচালনা: সুদেষ্ণা রায় ও অভিজিৎ গুহ অভিনয়: রাহুল, ঋত্বিক, ইন্দ্রজিৎ ৬/১০
তিন বন্ধুর চরিত্রে ঋত্বিক চক্রবর্তী, রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় ও ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী মানানসই। ছোট চরিত্রে সুদীপ্তা চক্রবর্তী, তনুশ্রী চক্রবর্তী, দেবলীনা কুমার এবং সমদর্শী দত্ত ভাল। তবে ছবিটি আবর্তিত হয়েছে তিন বন্ধুকে ঘিরেই। অযথা গান দিয়ে থ্রিলারের ছন্দপতন না করার জন্য পরিচালক জুটিকে ধন্যবাদ।
তবে গল্পের ফাঁকফোকরও নজর এড়ায় না। পথ দুর্ঘটনায় যে মৃত্যু, তার কি তদন্ত হয় না? চুরির অভিযোগ আনতে সমদর্শীর চরিত্রটি অতনুর বেস্টসেলার হওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকে? যে ম্যাপ দেখে তিন বন্ধু পথে বেরোয়, সেখানে আদতে কী ছিল, তা ঠিক স্পষ্ট হল না। অভিযোগ আরও একটি, হাস্যরস উদ্রেকের জন্য অম্বরীশ ভট্টাচার্য অভিনীত চরিত্রের স্থূল মন্তব্যগুলি না করলেও চলত। এতে ন্যারেটিভে বাড়তি কিছু যোগ হয় না।
মধুমন্তী পৈত চৌধুরী