Oh Lovely Movie Review

মোটের উপর তিনি লাভলি! মদন মিত্রের প্রথম ছবি দেখে আর কী মনে হল আনন্দবাজার অনলাইনের?

মুক্তি পেয়েছে মদন মিত্রের প্রথম ছবি ‘ওহ লাভলি!’ অভিনেতার ভূমিকায় কেমন কাজ করলেন প্রবীণ নেতা?

Advertisement

সুচন্দ্রা ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৩ ১৪:৪৫
Share:

মদন মিত্র। ছবি: সংগৃহীত।

ছবি শেষে পুরনো কথা নতুন করে মনে হতে বাধ্য। মদন মিত্র পাকা রাজনীতিক। যেখানেই যান, এত বছরের অভিজ্ঞতা সঙ্গে নিয়ে চলেন। তাই প্রথম ছবিতে প্রখর অভিনেতাদের পাশে দাঁড়ানোর সময়ে জল মেপে নিতে ভোলেন না। নিজে যত বড় তারকাই হোন না কেন, চেনা জমি আর অচেনা জমির মধ্যে মোটেই গুলিয়ে ফেলেন না। জোর করে ভিড়ের মধ্যে নিজের প্রতি নজর টানার অকারণ চেষ্টাও দেখান না। জনতার সঙ্গে মিশে গিয়ে পরিবর্তন কী ভাবে আনতে হয়, তা তাঁর জানা। তাই তাঁকে দেখে মনে হয় না, নেতা কেন অভিনেতা। আর তা ছাড়া তিনি তো জানেনই যে, পর্দায় দেখা গেলে লোকে তাঁকে ঠিক দেখবে। সে তিনি যে ভূমিকাতেই দেখা দিন না কেন!

Advertisement

আর তাই তো হল। না হলে ‘ওহ লাভলি!’ ছবি মুক্তি পাওয়ার সন্ধ্যায়, সারা দিনের বৃষ্টি-জল-কাদা সামলেও নন্দন চত্বরে এসে হাজির হত না দর্শক। পাড়ার হলে দেখা আলাদা কথা। এমন জায়গায় এসে দেখতে গেলে তো বাড়ির থেকে খানিকটা দূরে যেতেই হয়। ভিড় খুব হয়নি ঠিকই। কিন্তু শুক্রবারের আবহাওয়া যেমন ছিল, তাতে কোনও দর্শকই পাওয়ার কথা বিশেষ ছিল না। ‘মদনদা’ যে ‘লাভলি’, বৃষ্টির সঙ্গে লড়ার ক্ষমতা রাখেন, দেখিয়ে দিলেন।

নেতা থেকে অভিনেতা মদন মিত্র। ছবি: সংগৃহীত।

ফেরা যাক নেতা যখন অভিনেতা প্রসঙ্গে। ছবির নাম ‘ওহ লাভলি!’ তৃণমূল বিধায়ক মদনবাবুর কথাই মনে পড়ে এই শব্দবন্ধটি কানে এলে। ফলে ছবির নাম শুনে সিনেমা হলে ঢুকলে মনে হতেই পারে, এর কেন্দ্রে থাকবেন নেতাই। প্রথম দৃশ্যে তিনি থাকলেও এ ছবি কিন্তু মোটেই মদনবাবুর একার নয়। নাম যা-ই হোক না কেন, ছবিটি সেই নায়ক-নায়িকারই। রাজনন্দিনী পাল আর শ্রীশ চট্টোপাধ্যায়ের প্রেমে পড়া, বিয়ে হওয়া-না হওয়ার টানাপড়েন কেন্দ্রে রইল। গ্রামের জীবন, শহুরে কাঠিন্য, পরিবার বনাম ব্যক্তি— বাণিজ্যিক ছবিতে যা যা রসদ লাগে, সব জায়গা পেল। আর তার মাঝে হাস্যরসের নিয়মিত জোগান দিতেই থাকলেন এক নেতা। যিনি কিনা নেতার ভূমিকায় নেই। আছেন পিতার চরিত্রে। তার জন্য নিজেকে যতটা মেপে চলতে হয়, তিনি ততটাই পরিমিত।

Advertisement

মদনবাবু ঠিক কী করলেন? নিজেকে ভাঙলেন। নেতা থেকে অভিনেতা হলেন। পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী যতটুকু দায়িত্ব দিয়েছিলেন, বাকি অভিনেতাদের পাশে দাঁড়িয়ে তা পালন করলেন। নেতাসুলভ চটক না দেখিয়েই চমকে দিলেন। খরাজ মুখোপাধ্যায়, লাবণী সরকারের মতো বলিষ্ঠ অভিনেতাদের যেন খানিকটা সম্মান দিলেন এমন করেই। পিতারা যেমন হন আর কি, তেমনই হলেন। বলা যেতে পারে, এ ছবির নাম ‘ওহ লাভলি!’ না করে ‘নেতা যখন পিতা’-ও দিতে পারতেন পরিচালক।

‘ওহ লাভলি!’ ছবির গানের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত।

তবে নেতা মদনকে যে একেবারেই দেখা যাবে না, এমন নয়। ছবির একেবারে শেষ প্রান্তে গিয়ে ‘ওহ লাভলি!’ গান। শুধু ‘মদনদা’-কে দেখতেই যাঁরা সিনেমা হলে যাবেন, তাঁদের অপেক্ষা করতে হবে বেশ অনেক ক্ষণ। কিন্তু হতাশ হয়ে বেরোতে হবে না। পরিচিত উজ্জ্বল লাল রঙের পাঞ্জাবি, সানগ্লাসের সাজ আর কথায় কথায় মুখে ফুটছে ‘ওহ লাভলি’ বুলি। শেষমেশ সাদা শার্ট ছেড়ে তিনি দেখা দিলেন সেই বেশে। দেখে হাঁপ ছেড়ে বাঁচার মতো মনে হবে, অবশেষে নিজের ভূমিকায় ফেরেন তিনি। মুহূর্তের মধ্যে ধরে খেলা বদলায় ছেড়ে খেলায়। নায়ক-নায়িকা, বলিষ্ঠ প্রবীণ অভিনেতা, সকলকে ছাপিয়ে পর্দা দাপিয়ে যাচ্ছেন তখন নেতাই।

সরল চোখে সবটা দেখা যেতেই পারে। তবে দর্শক রাজনীতিকদের সহজ ভাবে দেখতে অভ্যস্ত নয়। তাই গান যতই লাভলি লাগুক না কেন, খোঁচা থেকে যায়। মনে মনে বলাবলি করে, নেতারা এমনই হন! গোটা ছবিতে সকলের সঙ্গে মিলেমিশে, তাঁদের মতো হয়ে থেকেছেন। শেষে সমূলে পরিবর্তন এনেছেন। বাকিদের ঠিক নিজের মতো করে নিয়েছেন। ঠাট্টার কারণ কিন্তু শুধু ‘ওহ লাভলি’ বুলি নয়। সঙ্গে সাজও। লাল পাঞ্জাবি, ধুতি, কালো চশমা পরে যখন সকল সহ-অভিনেতা নেতার সঙ্গে পা মেলান ‘ওহ লাভলি’ গানে। ছবির ভিতরে যতটা ভূমিকাই থাকুক না কেন, শুরু থেকে শেষ, এ ভাবেই সবটা জুড়ে রইলেন ‘মদনদা’। গোটা গল্পে বাবার ভূমিকায় নেতাকে দেখে যদি মনে মনে আক্ষেপ হয়ে থাকে, আর বার বার মনে হতে থাকে মদনদা একটু নাচুন না, সে সব অবলীলায় ভুলিয়ে দেবে এ গানের সঙ্গে টুকটুকে সাজে নেতার নাচ।

সব মিলিয়ে পরিচিত নেতা থেকে শিক্ষানবিশ অভিনেতার ভূমিকায় দিব্যি পাশ করলেন মদনবাবু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement