চাইলেই কি ওড়া যায়?

বাচ্চুর চরিত্রে চন্দন অসাধারণ। তাঁর ছেলেমানুষি, রাগ, বিস্ময়ের সঙ্গে দর্শক একাত্ম হতে পারবেন। বাচ্চুর স্ত্রীর চরিত্রে পার্নো মিত্র সাবলীল। তাঁর চরিত্রায়নে একাধিক স্তর না থাকলেও, গ্রাম্য মহিলার ভূমিকায় তিনি মানানসই।

Advertisement

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৯ ০০:২১
Share:

‘উড়োজাহাজ’-এর দৃশ্য

আকাশছোঁয়া স্বপ্ন। আক্ষরিকই আকাশকে ছুঁয়ে দেখার স্বপ্ন। মেকানিক বাচ্চু মণ্ডলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার নিরিখে একটু বেশি দামি সে স্বপ্ন। তবে শুধু কি সাধ ও সাধ্যের দ্বন্দ্ব? ব্যক্তি মালিকানায় ভাগ যে রয়েছে রাষ্ট্রেরও। জল, হাওয়া, জঙ্গল যে রাষ্ট্রের, কুড়িয়ে পাওয়া উড়োজাহাজের অধিকার কি সে হেলায় ছেড়ে দেয়?

Advertisement

কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হওয়া বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ‘উড়োজাহাজ’ ছবিটি রূপকধর্মী। বাস্তব ও পরাবাস্তব সেখানে হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে। মুখ্য চরিত্র বাচ্চুর (চন্দন রায় সান্যাল) ইচ্ছে ও তা পূরণের মধ্যে যে ব্যবধান, তার মধ্যেই পরিচালক দেখিয়েছেন জীবন-মৃত্যুর আসা-যাওয়া, আশা ও হতাশার দোলাচল, বিশ্বাস ও বিশ্বাসভঙ্গের কাচের দেওয়াল। চেনা ও সহজ কয়েকটি চরিত্রের মধ্য দিয়ে জীবনের গূঢ় উপলব্ধিগুলো উঠে এসেছে। আর বিভিন্ন চিত্রকল্পের মধ্য দিয়ে দর্শক পৌঁছে যাচ্ছেন ম্যাজিক রিয়্যালিজ়মের দেশে। চিত্রনাট্যের দিক থেকে এবং দর্শকের চোখেও, এই যাত্রাপথ মসৃণ।

সমাজ-রাষ্ট্রের আপাত ‘স্বাভাবিক’ মুখোশকে খুলে ফেলতে সংলাপের আড়ম্বর দেখাননি পরিচালক। বরং রোজকার কথাবার্তার মধ্য দিয়ে ছুড়ে দিয়েছেন তাঁর শাণিত প্রশ্ন। ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের টানাপড়েনের রাস্তা দিয়ে দর্শক প্রবেশ করেছেন সমস্যার মাইক্রোকজ়ম থেকে ম্যাক্রোকজ়মে। চাষির স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের দায় কি রাষ্ট্রের নয়? ঘরে ফিরতে না পারা শ্রমিকের দাম্পত্যে চিড় ধরলে, সে দায় কার?

Advertisement

প্রাপ্তবয়স্ক বাচ্চুর যে অপরিণত-শিশুসুলভ দিক পরিচালক দেখাতে চেয়েছেন, তা-ও কিন্তু তাঁর বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। সমাজের চোখে যে অপরিণত, সে-ই তো ‘অ্যাবসার্ড’। রোম্যান্স, ড্রামা এবং অ্যাবসার্ড প্লে-র ত্রিসীমানার মধ্যে চলেছে ছবির ওঠা-পড়া। অসীম বসুর ক্যামেরায় দৃশ্য ও চরিত্র যেন নিজেদের মধ্যে কথা বলে।

বাচ্চুর চরিত্রে চন্দন অসাধারণ। তাঁর ছেলেমানুষি, রাগ, বিস্ময়ের সঙ্গে দর্শক একাত্ম হতে পারবেন। বাচ্চুর স্ত্রীর চরিত্রে পার্নো মিত্র সাবলীল। তাঁর চরিত্রায়নে একাধিক স্তর না থাকলেও, গ্রাম্য মহিলার ভূমিকায় তিনি মানানসই। ছবিতে একাধিক ছোট চরিত্র। তবে মূল চরিত্র ছবির বিষয় ও ভাবনা।

সমাজ-রাষ্ট্র-ব্যক্তির ত্রিশঙ্কু সমসময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত। কারও চোখে এই ত্রিশঙ্কু বিপন্নও। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া এক মানুষের স্বপ্নপূরণের পথে প্রতিবন্ধকতা দেখিয়ে সমসময়ের উচ্চারিত ও অনুচ্চারিত আশঙ্কাকে তুলে ধরেছেন পরিচালক। সকলেই তার পারিপার্শ্বিকতার গণ্ডি ছাড়িয়ে উড়ে যেতে চাইছে। কিন্তু চাইলেই কি ওড়া যায়?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement