চেনা ইমেজের খোলস ছেড়ে বেরোতে চান না। অথচ ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির চাকা ঠেলতে নতুন কিছু ফাঁদতেই হবে। তাই শুধু তাঁর চওড়া ইস্পাত-কঠিন কাঁধের উপরে নয়, সলমন খানের লেখনীতেও ভরসা রেখেছে ‘দবং থ্রি’র টিম। যতই হোক, এটা পারিবারিক ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি বলে কথা। কিন্তু তাঁর সমালোচকদের সারপ্রাইজ় করলেন না সলমন। বরং নিজের হাতে একটি সফল সিরিজ়ের দফারফা করলেন। ‘দবং থ্রি’র গল্পই যে এর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা, তা ঠিক নয়। শেষ দৃশ্যের দ্বৈরথ ছাড়া আর কিছুতেই মন মজবে না।
‘দবং থ্রি’তে এমন কিছুই নেই, যা আগের দু’টি ‘দবং’-এ দর্শক দেখেননি। এবং মান বিচার করলে, পুরো প্যাকেজেরই শান কমেছে। গান, অ্যাকশন, সংলাপ, কমেডি... এমন একটি বিভাগও নেই যা ছবিকে টেনে দাঁড় করাবে। শুধু সব দৃশ্য জুড়ে দাঁড়িয়ে সবেধন নীলমণি সলমন ‘চুলবুল’ পাণ্ডে।
এ গল্প ধাকড় চাঁদ পাণ্ডের ‘চুলবুল’ হয়ে ওঠার, রোজগারহীন যুবকের পুলিশ ইনস্পেক্টর হওয়ার, কট্টর প্রতিপক্ষের সামনে ধাকড়ের নুইয়ে পড়ার। ধাকড়ের মধ্যে ‘বজরঙ্গি ভাইজান’-এর সলমনের একটা আভাস খুঁজে পাবেন। মানে, হয় দবং, না হয় বজরঙ্গি... এই দুই অবতারে আটকে ভাইজান।
একে সলমনে রক্ষা নেই, তার উপরে প্রভু দেবার পরিচালনা। স্থূল জোকস, সুড়সুড়ি দিয়ে হাসানোর চেষ্টা ছবির অনেক জায়গাতেই। সবচেয়ে হতাশ হবেন, সংলাপ শুনে। তার উপরে ‘দবং’-এর বিখ্যাত লাইন, ‘ইতনি ছেদ করেঙ্গে কে শ্বাস কঁহা সে...’’ চুলবুলের নিজস্ব নয়। এক কালে নিতান্তই এক ছেঁদো গুন্ডার কাছে সে এ কথা শুনেছিল। হিরোকে মাটির কাছে আনা মানে কি তার জাঁকজমক কমিয়ে দেওয়া? কী জানি, ছবির নির্মাতাদের মাথায় কী ঘোরে!
চুলবুলের প্রতিপক্ষ বালি সিংয়ের চরিত্রে কিচ্চা সুদীপ দারুণ। চোখের ভাষাতেই তাঁর বাজিমাত। তবে তাঁকে বিশেষ কোনও সংলাপ দেওয়া হয়নি। সে দিক থেকে চুলবুলও বাড়তি সুবিধে পায়নি। এ বারে সলমনের দুই নায়িকা, সোনাক্ষী সিংহ (রজ্জো) এবং সাই মঞ্জরেকর (খুশি)। তাই সমতা বজায় রাখতে দুই নায়িকার সঙ্গে দু’টি করে মোট চারটি গান অসহনীয়। নবাগতা সাই মন্দ নন। তবে তাঁর জড়তাও ক্ষেত্র বিশেষে বোঝা গিয়েছে। সলমনকে কোলে তোলা ছাড়া সোনাক্ষীর চরিত্রে নজরকাড়া কিছু ছিল না। ছবির আবহ সঙ্গীতে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার জোগাড়।
তবে পৌনে তিন ঘণ্টা বসিয়ে রেখে, এত কিছুর পরেও খালি গায়ে সলমন যখন পর্দায় এসে দাঁড়ান, তখন সমালোচকদের কাছ থেকেও হাততালি তাঁর প্রাপ্য। গানে আর অ্যাকশনে পঞ্চাশোর্ধ্ব সলমনের ফিটনেস শত ত্রুটিকেও ঢেকে দেয়।
‘দবং’-এর ঝাঁজ যে কমছে, তা নির্মাতারাও ঠারেঠোরে বুঝেছেন। তাই ছবির শেষে চুলবুলের কণ্ঠে পেশা বদলের সুর। কিন্তু বদল যে অন্য অনেক দিকেও দরকার, সেটা কি তাঁরা বুঝেছেন?