সোহম চক্রবর্তীর ছবিতে অভিনয় করেছেন ও পার বাংলার অভিনেত্রী পরীমণি। ছবি: সংগৃহীত
‘ফেলুবক্সী’। অর্থাৎ, ফেলুদা আর ব্যোমকেশ বক্সীর মিশেল। বাজারে এত এত ফেলুদা আর এত এত ব্যোমকেশ যে, এ দু'জনের মিশে যাওয়া নাম খুব অস্বাভাবিক নয়। যদিও সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত এ ছবিতে এই দুই কিংবদন্তি গোয়েন্দার গন্ধ তেমন নেই। বদলে আছে এ প্রজন্মের এক যুবকের নতুন পদ্ধতিতে রহস্য উন্মোচনের কাহিনি। আর আছে, সমকালের পারিবারিক রাজনীতির প্যাঁচ-পয়জার।
একটি পরিবারে একের পর এক খুন হতে থাকে। গৃহকর্তা তাতে বাধ্য হয় ফেলুবক্সী (সোহম চক্রবর্তী)-র দ্বারস্থ হতে। এই ফেলু মোটেই রজনী সেন রোড বা এই বক্সী মোটেই কেয়াতলায় থাকে না। আধুনিক ঝাঁ-চকচকে কেতাদুরস্ত ফ্ল্যাটেই তার বাস। সেখানে মাঝেমাঝে তার বান্ধবীও (মধুমিতা সরকার) আসে। বাংলার চিরাচরিত গোয়েন্দা চরিত্রের সঙ্গে মিল নেই তার। তাই ‘ফেলুবক্সী’ নামটা স্রেফ একটা নাম বলেই মনে হতে থাকে।
ছবির একটি দৃশ্যে অভিনেত্রী মধুমিতা সরকারের সঙ্গে সোহম চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।
বিলেত-ফেরত পুত্রের খুনের পর শোকতপ্ত বাবা ফেলুবক্সীর সন্ধানে আসে। সঙ্গে আসে তার ডাক্তার বন্ধু। পুত্র বিলেত থেকে ফিরেছে, তাই যথেষ্ট খুশিতেই ছিল বাবা। সে আনন্দে পারিবারিক পার্টিও চলছিল। সেখানে হৃদ্যন্ত্র বিকল হয়ে আচমকা মারা যায়।
সেই পুত্র। কিন্তু এই ঘটনা মৃত্যু না হত্যা, তা নিয়ে উঠতে থাকে প্রশ্ন। এর পরেই একে একে আচমকা খুন হতে থাকে পরিবারের সদস্যেরা। আপাত ভাবে ছবিটি দেখতে দেখতে মনে হতে পারে, পারিবারিক কলহের জেরেই হয়তো ঘটছে এই খুনগুলি। কিন্তু ছবিটি যত এগোতে থাকে, উন্মোচিত হয় অন্য সত্য। সেটা কী, জানতে গেলে দেখতে ছবি ছবিটি।
হালফিলের বাংলা ছবিতে কলকাতা শহরকে দেখতে বিদেশের মতো লাগে। ফেলুদা বা ব্যোমকেশ কারও শহরই এত চকচকে ছিল না। ছিল না এত জেল্লা। তাই ছবির নাম যখন ‘ফেলুবক্সী’, তখন প্রত্যাশা জাগে সেই শহর দেখার। এমনকি, ফেলুদা বা ব্যোমকেশের গল্পের মেধাবী প্লটের কিছু অনুষঙ্গ এ ছবিতেও থাকবে, নামকরণের জন্যেই সেই প্রত্যাশাও তৈরি হয়। কিন্তু তার বদলে স্রেফ পরের পর কিছু খুন এবং তা সমাধানে কিছু সহজ রাস্তা দেখতে দেখতে কিছুটা হতাশ লাগে। তবে ফেলুদা বা ব্যোমকেশের ধাঁচেই এখানে পারিবারিক খুন বা রহস্য সমাধানের ধরন রাখা হয়েছে। তাই বাইরে থেকে নামকরণের সঙ্গে মিল থাকলেও, আখ্যানের ভিতর খুব বেশি মিল পাওয়া যায়নি।
গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
তবে ভাল লাগে পরিবারের কর্তার ভূমিকায় সুমন্ত মুখোপাধ্যায়ের অভিনয়। আধুনিক গোয়েন্দা যুগল হিসেবে সোহম ও মধুমিতাকেও মানিয়ে গিয়েছে। পরীমণি, শতাফ ফিগার-সহ বাকিদের অভিনয়ও যথাযথ।
ছবিটির দৈর্ঘ্য আরও একটু ছোট হতে পারত। আর, আজকের দুনিয়া এতই জটিল যে, গোয়েন্দা গল্পে রহস্যও সে জটিলতার কিছু ছিটেফোঁটা দাবি করে। ছবিটির যে বিপুল প্রচার, তাতে সে প্রত্যাশাও তৈরি হয় বার বার। সেখানে ফাঁক থেকেই গেল।
বইমেলা এসে গেল। প্রত্যেক বারের মতো এ বারেও বেস্টসেলারের তালিকার শীর্ষেই থাকবে ফেলুদা ও ব্যোমকেশ। ভাবতে ভাল লাগে, এত দিন আগে লেখা হলেও একেনবাবু বা ফেলুবক্সীদের নির্মাণের সময়ও অনিবার্য হয়ে যাচ্ছে সেই সব পুরনো সাহিত্যই। এখানেই কালোত্তীর্ণ হয়ে যান শরদিন্দু বা সত্যজিৎ। আর, চিরন্তন হয়ে থাকে বাঙালির রহস্যের প্রতি অমোঘ টান।