উজড়া এবং চমন শব্দ দু’টিকে বাংলায় তর্জমা করলে মোটামুটি যা দাঁড়ায়, তা হল এমন একটি বাগান যার ফুল-ফল উপড়ে নেওয়া হয়েছে। ‘উজড়া চমন’ ছবির বিষয়বস্তুও তাই-ই। তিরিশ ছুঁতে চলা নায়কের অকালে চুল ঝরে গিয়ে বিয়ে না হওয়ার সমস্যা। কিন্তু গুরুতর সমস্যাকে তুলে ধরতে গিয়ে ছবিটি গুরুত্ব হারিয়েছে। মজার ভঙ্গিতে কমেডি, আবেগ না কি পুরোদস্তুর রোম্যান্স— কাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে বুঝতে না পেরে পরিচালক অভিষেক পাঠক ব্যালান্স হারিয়ে জগাখিচুড়ি বানিয়েছেন। আর তাতেই বাগান উজাড় হয়ে গিয়েছে!
টাকভরা মাথা নিয়ে চমন কোহালি (সানি সিংহ) বারবার প্রত্যাখ্যাত হয় পাত্রীপক্ষের কাছে। তবু কখনও দশ বছরের ছোট ছাত্রী, কখনও সহকর্মী, কখনও টিন্ডার... হাল ছাড়ে না সে। কারণ তার মাথার উপরে খাঁড়া ঝুলছে। জ্যোতিষী বাবা (সৌরভ শুক্ল) নিদান দিয়েছে, একত্রিশ হওয়ার আগে বিয়ে না হলে ছেলের সন্ন্যাসযোগ আছে। ছোট ছোট টেস্ট শট খেলার পরে শেষ পর্যন্ত টিন্ডারে ম্যাচ হয় নায়কের। ডেটে গিয়ে দেখা মেলে অপ্সরার (মানবী গাগ্রু)। ছেলের চুল কম, তো মেয়ের ওজন বেশি। এর পরের গল্প এতটাই ক্লিশে যে, দর্শক-পাঠক সকলেই বোধহয় অনুমান করে ফেলেন সবটুকু।
অথচ ছবিতে সম্ভাবনা ছিল না, এমনটা নয়। পৃথিবীতে এমন মানুষ কম নেই, যাঁরা প্রতিনিয়ত ‘টাকলা’, ‘টেকো’, ‘গঞ্জা’ জাতীয় নানা টিটকিরির সম্মুখীন হয়ে আত্মবিশ্বাস হারাতে বসেন। কিন্তু এমন সংবেদনশীল বিষয়কে ফুটিয়ে তুলতে পারেননি স্বয়ং সানিই। হাসি, কান্না, হতাশা, রাগ, সংশয়... সবেতেই তাঁর চাহনি নিষ্প্রভ, মাছের চোখের মতো। ‘পেয়ার কা পঞ্চনামা’য় তাঁর অভিনয় নজর কাড়লেও, ‘উজড়া চমন’-এ তিনি একেবারেই হতাশ করেছেন। অতুলকুমার, গ্রুশা কপূর, মানবী গাগ্রুর মতো বাকি অভিনেতারা যথেষ্ট সপ্রতিভ হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের চেষ্টা একেবারে মাঠে মারা গিয়েছে, পরিচালকের ব্যর্থ পরিকল্পনায়। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, নিজের খুঁত থাকলে সেটাকে খানিক ঢোঁক গিলে মেনে নিয়ে এমন কাউকেই সঙ্গী হিসেবে বেছে নিতে হয় কেন, যার নিজেরও ‘খুঁত’ রয়েছে?
উজড়া চমন
পরিচালনা: অভিষেক পাঠক
অভিনয়: সানি, মানবী, সৌরভ, অতুল, গ্রুশা, শিবানী
৩.৫/১০
হলে ঢোকার মুখে চোখে পড়েছিল পোস্টারে বড় বড় করে লেখা একটি লাইন— ‘টাকলে কি পহেলি অওর আসলি স্টোরি’। ‘গন কেশ’, ‘বালা’, ‘টেকো’... বলিউড-টলিউড মিলিয়ে টাক পড়ার সমস্যা নিয়ে ছবি কম তৈরি হচ্ছে না। কিন্তু আগে রিলিজ় করলেই ছবি প্রথম সারিতে পৌঁছয় না। আর সমস্যার গভীরে ঢুকতে না পারলে ছবিও নকল হয়েই থেকে যায়।