নতুন অধ্যায় শুরু শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা ছবির জগৎ তাঁকে চেনে বিদগ্ধ নাট্য ও চিত্র সমালোচক হিসেবে। ৮১ বছর বয়সে সেই পরিচয়ে আমূল বদল! অনীক দত্তের সৌজন্যে চিত্র সমালোচক এ বার চিত্রাভিনেতায় রূপান্তরিত! পরিচালকের আগামী ছবি ‘অপরাজিত’য় তিনি আকাশবাণীর সাংবাদিক! সাক্ষাৎকার নেবেন পর্দার ‘পথের পাঁচালী’র রূপকার সত্যজিৎ রায়ের।
কেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই বাছলেন অনীক? আনন্দবাজার অনলাইনকে পরিচালকের পাল্টা প্রশ্ন, কেন নয়? তাঁর দাবি, ১৯৭৬-এ দূরদর্শনের হয়ে সত্যজিৎ রায়ের প্রথম সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন চিত্র সমালোচক শমীকবাবুই। যা এখনও সেরা সাক্ষাৎকারগুলির অন্যতম হিসেবে বিবেচিত। অনীকের বক্তব্য, ‘‘এই জন্যেই ওঁকে আমার নেওয়া।’’
ছাত্রের এই কথাকেই রসিকতায় মুড়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন তাঁর ‘মাস্টারমশাই’। শমীকবাবু পাঠভবন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম। অনীক সেই স্কুলেরই ছাত্র। সেই সূত্রে তাঁদের শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্ক। শমীকবাবুর কথায়, ‘‘সন্দীপ-সহ বহু কৃতী বাঙালি আমার ছাত্র। তাঁদের কেউ পরে আমার শিক্ষক হয়ে ওঠেনি। ব্যতিক্রম অনীক।’’ ছাত্র শিক্ষক হয়ে উঠলে কেমন লাগে? প্রবীণ চিত্র সমালোচক বলছেন, “ভালই তো লাগে!” শ্যুট করতে করতে অনীক তাঁকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ১৯৭৬ সালে শমীকবাবুর বয়স ছিল ৩৪, সত্যজিৎ রায় ৫৪। ২০২১-এ এসে বদল সেই সমীকরণেও। সাংবাদিক শমীক ৮১, পর্দার সত্যজিৎ রায় ওরফে জিতু কমল মাত্র ৩৪!
আকাশবাণীর সঙ্গেও দীর্ঘ সময় যুক্ত ছিলেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সেই অভিজ্ঞতাও কাজে লাগিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিচালক অনীক। আর অভিনেতা হিসেবে অল্প রূপটান নিয়ে দু’দিন শ্যুট করতে মোটেও খারাপ লাগেনি তাঁর, দাবি নব্য অভিনেতার। পাশাপাশি, তিনি চমৎকৃত জিতুর অভিনয় দেখে। চিত্র সমালোচকের দৃষ্টি বলছে, ‘‘জিতু কিংবদন্তি পরিচালকের অনেক ছোট ছোট স্বভাববৈশিষ্ট্য নিখুঁত ভাবে অভিনয়ে মিশিয়ে দিয়েছে। নিজের চরিত্র নিয়ে প্রচণ্ড খাটছে।’’
শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বউদি করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাড়ির কেউ গেলে অভিনয়ে অসুবিধে হবে, এই কারণে কোনও দিন সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’র ‘সর্বজয়া’র ভূমিকায় করুণা দেবীর শ্যুট দেখার সুযোগ পাননি তিনি। জীবনে এক বারই শ্যুটিং দেখেছেন। সেটি মৃণাল সেনের ‘ইচ্ছাপূরণ’ ছবির। সে কথা জানিয়ে হাসতে হাসতে প্রবীণ সমালোচকের ফের রসিকতা, ‘‘ভাগ্যিস অভিনয়ে রাজি হলাম। শ্যুটিং দেখার শখ নিজের শ্যুট দিয়েই মিটিয়ে নিয়েছি।’’