ওজনদার নাম থাকলেই যে সে ছবি সুপারহিট হবে, এমন নিশ্চয়তা বলিউডে নেই। এ রকম বহু উদাহরণ আছে, যেখানে বড় বড় নাম থাকার পরেও কোনও সিনেমা বক্স অফিসে আশানুরূপ সাফল্য পায়নি।
আসুন, জেনে নিই এমন এক ছবি সম্বন্ধে। সেই ছবির জন্য চার মাস ধরে সাঁতার শিখেছিলেন নায়ক। ত্রুটি রাখা হয়নি নির্মাণ ও প্রচারের কোনও ধাপে। তার পরেও বক্স অফিসে ব্যর্থ হয় আমির খানের ‘তলাশ: দ্য আনসার লাইজ উইদিন’।
এই ছবি মুক্তি পেয়েছিল ২০১২ সালের ৩০ নভেম্বর। ফারহান আখতার-রীতেশ সিদ্ধওয়ানি-আমির খানের প্রযোজনায় এই ছবি পরিচালনা করেছিলেন রীমা কাগতি। সংলাপ লিখেছিলেন ফারহান আখতার এবং অনুরাগ কাশ্যপ।
আমির খান, রানি মুখোপাধ্যায়, করিনা কপূর, রাজকুমার রাও, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির মতো তারকা থাকার পরেও দর্শকের দরবারে আদৃত হয়নি ‘তলাশ’। এই ছবির চিত্রনাট্য শোনানো হয়েছিল শাহরুখ-সলমন দু’জনকেই। কিন্তু তাঁরা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
দুই খান অভিনয় করতে রাজি না হওয়ায় আমির খানের জেদ চেপে যায়। তিনি ঠিক করেন বাকি দুই খানের প্রত্যাখ্যাত ছবি তিনি করবেন। বক্স অফিসে সাফল্য পাওয়ানোর দায়িত্বও তিনি নেন। কিন্তু আমিরের সব চেষ্টা বিফলে যায়।
আমির খানের সিনেমার মূল বিষয় সামাজিক বার্তা। বলি মহলের অনেকের ধারণা, ‘লগান’, ‘তারে জমিন পর’, ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর মতো ছবির নায়ককে ‘তলাশ’-এ মেনে নিতে পারেননি ভারতীয় দর্শকরা। পাশাপাশি এই ছবির ক্রাইম-থ্রিলার-সাসপেন্স আবহ নিতে পারেন দর্শক।
সামাজিক বার্তা নেই। নেই ‘গজনি’-র মতো অ্যাকশনধর্মী চিত্রনাট্যও। ‘তলাশ’-এ আমির খানের ভাবমূর্তিকে নিতে পারেননি দর্শকরা। এই ছবিতে তিনি খুঁজে চলেছেন অশরীরীকে। যা, কিছুটা হতাশাজনক লেগেছিল দর্শকদের কাছে। ডার্ক ছবিতে তাঁকে নিতে পারেননি দর্শক।
ছবির মিউজিক করেছিলেন রাম সম্পত। সে ভাবে জনপ্রিয় হয়নি ছবির গানও। ছবির অন্যান্য বিভাগে যখন বড় বড় নাম ছিল, তখন সঙ্গীত নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা কেন করা হল, উত্তর মেলেনি সেই প্রশ্নের।
‘তলাশ’ যখন মু্ক্তি পেয়েছিল তখন রাজকুমার রাও এবং নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি দু’জনেই ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন। পায়ের নীচে জমি খুঁজছেন। ফলে তাঁদের স্টারডম এ ছবির মূলধন হয়ে উঠতে পারেনি।
আমির খানের বিপরীতে ছিলেন রানি মুখোপাধ্যায়, করিনা কপূরের মতো দুই অভিনেত্রী। কিন্তু চিত্রনাট্যের দৌলতে এক বারও আমির খানের সঙ্গে তাঁদের এক জনেরও রোমান্টিক রসায়ন জমল না।
এমনিতেই ছবির বাজেট ছিল আকাশছোঁয়া। তার উপর ছবির আন্ডারওয়াটার সিকোয়েন্স শুটিং দু’বার করে করা হয়েছিল। প্রথমে ভারতেই শুটিং হয়েছিল। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট হননি নির্মাতারা। এর পর একই দৃশ্যের শুটিং ফের হয়েছিল লন্ডনের পাইনউড স্টুডিয়োয়। ফলে আয়-ব্যয়ের ফারাক বেড়ে গিয়েছিল অনেক।
‘তলাশ’ মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ২০১১ সালে। কিন্তু এর মুক্তি পিছিয়ে যায় প্রায় দেড় বছর। তার ফলেও ছবির আকর্ষণ কমে যায়। ২০১১ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘কহানি’। বক্স অফিসে এই ছবি ছিল চূড়ান্ত সফল। এর সঙ্গে তুলনায় বার বার পিছিয়ে পড়তে হয়েছে আমির খানের ‘তলাশ’-কে।