প্রতীকী ছবি।
হাতে হাত মিলে যায় প্রয়োজনের সময়ে। আবার প্রয়োজন মিটে গেলে যে যার রাস্তায়। আর্টিস্ট ফোরাম সম্প্রতি জানিয়েছে, তারা আর ফেডারেশনের ছত্রচ্ছায়ায় থাকবে না। এই গাঁটছড়া খুলে যাওয়ার নেপথ্য কারণ কী? প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়া না কি অস্তিত্ব-সঙ্কট?
দিন চারেক আগে ওয়েস্ট বেঙ্গল মোশন পিকচার আর্টিস্টস ফোরাম একটি বিবৃতি দিয়ে জানায়, তারা আর ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কারস অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার অন্তর্ভুক্ত নয়। এ বার থেকে স্বয়ংশাসিত সংস্থা হিসেবেই আর্টিস্ট ফোরাম কাজ করবে। এর ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ইন্ডাস্ট্রিতে গুঞ্জন ওঠে, ফেডারেশনের দাদাগিরির কারণেই নাকি এই সিদ্ধান্ত।
এ ব্যাপারে আর্টিস্ট ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বেশ কিছু টেকনিক্যাল কারণেই আমরা আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। অটোনমাস বডি হিসেবে কাজ করলে অন্যের সিদ্ধান্তে আমাদের চলতে হবে না।’’ ২০১১ সাল পর্যন্ত আর্টিস্ট ফোরাম স্বাধীন ভাবেই কাজ করত। তার পর ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত হয়। ফোরামের এক প্রবীণ সদস্যের বক্তব্য, ‘‘রাজনৈতিক পালাবদল ঘটার পরেই ফোরামের সঙ্গে ফেডারেশনের গাঁটছড়া হয়। এখন বেরিয়ে গিয়ে ফোরাম আবার স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারবে।’’ অনেকের মতে, ফোরামের বেরিয়ে যাওয়ার পিছনে রাজনৈতিক কারণ থাকা অস্বাভাবিক নয়।
ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত থেকে কাজ করার ক্ষেত্রে দু’টি বিশেষ সমস্যার কথা উল্লেখ করেন শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়। নিয়ম অনুযায়ী মাসের দ্বিতীয় রবিবার টালিগঞ্জ পাড়ায় ছুটি থাকে। কিন্তু অনেক সময়েই প্রযোজকেরা ওই দিন শুটিং রাখছেন এবং ফেডারেশন তাতে রাজিও হয়ে যাচ্ছে। অথচ আর্টিস্ট ফোরাম এ ব্যাপারে আগাম কিছুই জানতে পারছে না। ‘‘আর্টিস্টরা শুট করতে চাইছেন না সব সময়ে। এ নিয়ে অযথা জটিলতা তৈরি হচ্ছে। তা ছাড়া মাসের দ্বিতীয় রবিবার যদি কোনও কারণে শুট করতে হয়, তা হলে ডাবল পেমেন্ট দিতে হয়। এ ছাড়া যখন ফিল্ম শুটিংয়ের এসওপি তৈরি হয়ছিল, তখন চূড়ান্ত খসড়ায় সইসাবুদের সময়ে আর্টিস্ট ফোরাম উপস্থিত ছিল না। এ রকমই বেশ কিছু কারণের জন্য ফোরাম সর্বসম্মত ভাবে আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে,’’ বক্তব্য শান্তিলালের।
অতিমারির কারণে কাজ তুলতে সময় লাগছে। লকডাউনের জন্য কাজের দিনের সংখ্যাও কমছে।
যে কারণে প্রযোজকেরাও দ্বিতীয় রবিবার কাজ রাখছেন। ফোরামের পক্ষ থেকে দিগন্ত বাগচী বলছিলেন, ‘‘প্রযোজকদের সমস্যার বিষয়টি আমরাও বুঝতে পারছি। যে কারণে ছুটির দিনে কাজ করলেও ডাবল পেমেন্ট চাইতে পারছেন না শিল্পীরা। স্বাধীন সংস্থা হিসেবে কাজ করলে ফোরাম অনেক ক্ষেত্রেই শিল্পীদের স্বার্থ আলাদা ভাবে দেখতে পারবে।’’
ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে খবর, এই ছাড়াছাড়ির পিছনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে।
ফেডারেশনের গায়ে যে রাজনৈতিক রং রয়েছে, ফোরাম তার থেকে নিজেদের আলাদা রাখতে চায়। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ফোরামে নিজের পদে ফিরতে পারেন বলেও খবর। তবে দিগন্তর কথায়, ‘‘প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় কিন্তু ফোরামেই আছেন। আমরা সব বড় সিদ্ধান্ত তাঁকে, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে, চিরঞ্জিৎদাকে জানিয়েই নিয়ে থাকি। এই সিদ্ধান্তের পিছনেও তাঁদের সম্মতি ছিল।’’
এ প্রসঙ্গে ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।