কিন্তু ১০-১২ জন মিলে ক্যামেরা নিয়ে, বুম নিয়ে যখন ঘিরে ধরে, নাগাড়ে প্রশ্ন করে উত্যক্ত করতে থাকে, নিজেকে সামলাতে পারি না।’’ রাণু জানেন, যাঁরা তাঁকে উত্যক্ত করেন তাঁরাও সেটাই চান। তাঁর বক্তব্য ক্যামেরাবন্দি করেই তাঁরা ছড়িয়ে দেন নেট মাধ্যমে। যাতে রাণুর আলোয় আলোকিত হতে পারেন।
রেকর্ডিং স্টুডিয়ো তে রাণু মন্ডল। —নিজস্ব চিত্র।
না, এই প্রজন্মের পোশাকে দেখা দেননি। ছাপা শাড়ি, খোলা চুল, দু’হাতে চুড়ি। সাধাসিধে বেশবাসে সকাল থেকেই গায়ক সিধু ওরফে সিদ্ধার্থ রায়ের বাড়িতে। উপলক্ষ, নিজের জীবনী ছবি ‘রাণু মারিয়া’র গান রেকর্ডিং। ছবির গানের দায়িত্ব সিধুর কাঁধেই। দক্ষিণ কলকাতার রেকর্ডিং স্টুডিয়োয় বিকেলে পা রাখতেই সাংবাদিকেরা ছেঁকে ধরেছিল তাঁকে। যা দেখে মুহূর্তের জন্য দ্বিধাগ্রস্ত। পর ক্ষণেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি রাণু মণ্ডল। যাঁর নাম আরবসাগর তীরের মায়নগরীও জানে! রাণুকে পর্দায় জীবন্ত করবেন ঈশিকা দে। পরিচালনায় হৃষিকেশ মণ্ডল। রেকর্ডিংয়ের ফাঁকেই গায়িকা আড্ডা দিলেন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে।
জীবনে নানা ঘাত-প্রতিঘাত। প্রতি মুহূর্তে চমক। সেই রাণু এক বারও ভেবেছিলেন তাঁর জীবন নিয়ে ছবি তৈরি হবে? শোনার পরে কী মনে হয়েছিল? অদ্ভুত নির্লিপ্ততা তাঁর গলায়। বললেন, ‘‘সবই ঈশ্বরের ইচ্ছে। তিনি চেয়েছেন বলেই হয়তো আমার জীবন নিয়ে ছবি তৈরি হতে চলেছে।’’ এও জানাতে ভোলেননি, ছবির গল্প তাঁর খুবই ভাল লেগেছে। এ বার পর্দায় নিজেকে জীবন্ত দেখার অপেক্ষায়।
ঈশিকার সঙ্গে রাণুর আকাশ পাতাল পার্থক্য। জীবন যাপন, চেহারায়, আচরণে, চলনে বলনে। ঈশিকা তাই কয়েকটি দিন থেকেছেন রাণুর সঙ্গে। তাঁকে খুঁটিয়ে নজর করবেন বলে। ১০ কেজি ওজনও কমিয়েছেন ছবির স্বার্থে। এক সঙ্গে থাকতে থাকতে কে, কাকে নিজের মতো করে নিলেন? রাণুর কথায়, ‘‘আমরা এক সঙ্গে থেকেছি। খাওয়া দাওয়াও করেছি। ঈশিকা আমায় ‘রাণু মা’ বলে ডাকে। ও আমার মেয়ের মতো। তাই মেয়ে মায়ের মতো হল না মা মেয়ের মতো--- এটা সব চেয়ে ভাল বলতে পারবেন পরিচালক, দর্শক আর অভিনেত্রী নিজে।’’
আড্ডার মধ্যেই চা হাজির। তার আগে রাণু টিফিন সেরেছেন মাংসের রোল দিয়ে!
কাপে চুমুক দিতে দিতেই আবারও অনর্গল, রেকর্ডিংয়ে এসে একটু অস্বস্তিতেই পড়েছিলেন তিনি। লোকের ভিড় আজও তাঁকে পুরনো অভিজ্ঞতা মনে পড়িয়ে দেয়। এখানেও তাঁকে সামলে দিয়েছেন তাঁর ‘পাতানো মেয়ে’ ঈশিকা আর সুরকার সিধু। এঁরা না থাকলে হয়তো আজও তিনি গান রেকর্ডিং করতে পারতেন না। তা হলে কে বেশি আন্তরিক, মুম্বইয়ের হিমেশ রেশমিয়া না কলকাতার সিধু? প্রশ্ন রাখতেই চোখা জবাব, ‘‘এটা কোনও প্রশ্ন হল? প্রত্যেকে প্রত্যেকের মতো। কারওর সঙ্গে কারওর তুলনা টানা উচিৎ নয়।’’ তাঁর আরও যুক্তি, গান তোলানোর প্রথম দিন থেকে সিধু তাঁর সঙ্গে। তাঁর বাড়িতে বসে ধরে ধরে গান তুলিয়ে দিয়েছেন। রেকর্ডিং স্টুডিয়োতেও একই ভাবে সাহায্য করেছেন। তিনি আন্তরিক কৃতজ্ঞ।
অনেক ঝড়, অনেক কটাক্ষ তাঁকে ঘিরে। অনেক বিতর্কও। আচরণ নিয়ে অজস্র সমালোচনা। ইদানীং ‘বাদাম কাকু’ ভুবন বাদ্যকারের জনপ্রিয়তার সঙ্গেও তাঁর জনপ্রিয়তার বিচার হচ্ছে। ‘রাণু মারিয়া’ কি সে সবের জবাব হয়ে আসছে? ফের নির্লিপ্ত রাণু। জানালেন, সবটাই ঈশ্বর এবং সময়ের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। তার পরেই ইতস্তত করে বললেন, ‘‘আমি কাউকে কটূক্তি করতে চাই না। খারাপ ব্যবহারও না। কিন্তু ১০-১২ জন মিলে ক্যামেরা নিয়ে, বুম নিয়ে যখন ঘিরে ধরে, নাগাড়ে প্রশ্ন করে উত্যক্ত করতে থাকে, নিজেকে সামলাতে পারি না।’’ রাণু জানেন, যাঁরা তাঁকে উত্যক্ত করেন তাঁরাও সেটাই চান। তাঁর বক্তব্য ক্যামেরাবন্দি করেই তাঁরা ছড়িয়ে দেন নেট মাধ্যমে। যাতে রাণুর আলোয় আলোকিত হতে পারেন।