সেটে শুনতাম, সাবিত্রীদি নাকি দারুণ রাঁধেন। উত্তমকুমার-সহ অনেককেই নাকি নিজে রেঁধে খাইয়েছেন। আমার খুবই দুর্ভাগ্য, এই অভিজ্ঞতা থেকেও বঞ্চিত। কোনও দিন ওঁর হাতের রান্না খাওয়া হল না। প্রথম ছবির সুবাদে দু’চোখ ভরে দেখেছি উত্তমকুমার-সাবিত্রীদি জুটিকে। এক কথায় অনবদ্য।
উত্তম-সাবিত্রীকে নিয়ে লিখলেন রঞ্জিত মল্লিক
১৯৭৪ সাল। প্রয়াত পরিচালক অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের ‘মৌচাক’ ছবিতে অভিনয়ের ডাক পেলাম। আমি তখনও আনকোরা। শুনলাম, ছবিতে উত্তমকুমার আর সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় আমার দাদা-বউদির ভূমিকায় অভিনয় করবেন। আমার তো হাত-পা ঠান্ডা! হৃদস্পন্দন বেড়ে দ্বিগুণ। আমি নতুন! এঁদের সামনে কী অভিনয় করব?
তত দিনে আমি দু’জনেরই বহু কাজ দেখে ফেলেছি। সেগুলো একে একে মনে পড়ছে। ততই যেন ঘাবড়ে যাচ্ছি। সাবিত্রীদি এক দিক থেকে আরও এগিয়ে। তিনি মঞ্চেও সমান সফল। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে দেখলাম, দাপুটে অভিনেত্রী হলেও মানুষটি বেশ ভাল। সকলের সঙ্গে মানিয়ে নেন। আমি নতুন, এটা এক বারও বুঝতে দেননি। এবং তিনি যে ভয়ঙ্কর ভাবে অভিনয়ে বাঁচেন, সেটাও টের পেতে দেননি। ফলে, আস্তে আস্তে খাপ খাইয়ে নিলাম ওঁদের সঙ্গে। ওঁদের সান্নিধ্যে থাকতে থাকতে আমার অভিনয়ও যেন খোলতাই হতে থাকল। আরও একটা জিনিস খেয়াল করেছিলাম— না অনুরোধ করলে যেচে কখনও অভিনয় নিয়ে পরামর্শ দিতে আসতেন না।
‘মৌচাক’-এর পরে আরও একটি-দু’টি ছবিতে কাজ করেছি আমরা। তখনই সেটে শুনতাম, সাবিত্রীদি নাকি দারুণ রাঁধেন। উত্তমকুমার-সহ অনেককেই নাকি নিজে রেঁধে খাইয়েছেন। আমার খুবই দুর্ভাগ্য, এই অভিজ্ঞতা থেকেও বঞ্চিত। কোনও দিন ওঁর হাতের রান্না খাওয়া হল না। প্রথম ছবির সুবাদে দু’চোখ ভরে দেখেছি উত্তমকুমার-সাবিত্রীদি জুটিকে। এক কথায় অনবদ্য। অনেক সাক্ষাৎকারে পড়েছি, উত্তমকুমারের নাকি সাবিত্রীদির চোখের দিকে তাকিয়ে অভিনয় করতে অস্বস্তি হত। পরিচিতরা সুযোগ পেলেই জানতে চাইতেন, ‘‘দু’জনে বুঝি দু’জনকে চোখে হারাতেন?’’ সে সবও বুঝিনি। তবে সেটে এটা খেয়াল করেছি, উত্তমকুমার আর সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় পরস্পরের প্রচণ্ড খেয়াল রাখতেন।
এটাই কি ভালবাসা? হবেও বা...