(বাঁ দিকে) রাজনন্দিনী পাল, মিনিয়েচার সেট (ডান দিকে) ছবি: সংগৃহীত।
যাঁরা হলিউডি ছবির পোকা তাঁরা জানেন, অনেক বড় বড় যুদ্ধ বা দুর্ঘটনার দৃশ্য মিনিয়েচার সেটে শুট করা হয়েছে। দৃশ্য দেখে দর্শক ভেবেছে, পুরোটাই সত্যি। একই ভাবে বলিউডে রোহিত শেট্টির ছবিতে বিরাট আকারের গাড়ি ওড়ানোর দৃশ্য এই পদ্ধতিতেই দেখানো হয়। এ বার বাংলা ওয়েব প্ল্যাটফর্মের একটি সিরিজ়ের জন্য সে রকমই একটি মিনিয়েচার সেটে শুটিং করা হচ্ছে, নাম ‘মহামায়া’। আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে প্রথম খবর, এনটি১ স্টুডিয়োতে প্রথম মিনিয়েচার সেট বানিয়েছেন শিল্প নির্দেশক রণজিৎ ঘড়াই। সেখানেই এক টুকরো বারাণসী তুলে ধরেছেন তিনি। উত্তরপ্রদেশের অন্যতম ‘মন্দির নগরী’র অলিগলি, গঙ্গার ঘাট, বড় বড় ইমারত নাকি শহরে শোভা পাচ্ছে! ইতিমধ্যেই শুটিং শুরু হয়ে গিয়েছে। নায়িকার ভূমিকায় রাজনন্দিনী পাল। প্রযোজনায় বুলবুলি পাঁজা। সিরিজ়ের সৃজনশীল প্রযোজক অর্কদীপ মল্লিকা নাথও সেট তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
বারাণসীর কোন কোন জায়গা সেটে তুলে এনেছেন রণজিৎ? প্রশ্ন রেখেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। রণজিতের কথায়, “বারাণসীর ঘাট, সরু অলিগলি, বড় ইমারত থাকছে। বলতে পারেন পঞ্চাশ শতকের বারাণসীকে দেখানো হবে এই সিরিজ়ে। সেই অনুযায়ী সবটা তৈরি হয়েছে।” এখনও সেট তৈরির কাজ শেষ হয়নি। খবর, রাত জেগে কাজ করছেন সবাই। বারাণসীর মিনিয়েচার সেটে শুটিং শুরু আগামী কাল। ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (এফটিআই) থেকে পড়াশোনা করা রণজিৎ বর্তমানে সত্যজিৎ রায় ফিল্ম ইনস্টিটিউটে (এসআরএফটিআই) শিল্প নির্দেশনা বিভাগের অধ্যাপক।
২৫ দিন ধরে স্টুডিয়োয় তিলে তিলে গড়েছেন বারাণসীর ছায়া। তাঁর মতে, প্রচণ্ড পরিশ্রমের কাজ। সেই সময়কে এখনকার কেউ দেখেননি। তাকে কল্পনায় ধরে বাস্তবের রূপ দেওয়া সহজ নয়। ৪০ ফুট উঁচু ইমারতকে সেটে তৈরি করা খুব কঠিন। ১২ জন সহকারীকে নিয়ে এই সব তৈরি করেছেন তিনি। এক ফুট উচ্চতা যার, রণজিতের হাতের ছোঁয়ায় সেটিই হুবহু তৈরি হয়েছে এক সেন্টিমিটারের মধ্যে। তার জন্য ব্যবহার করেছেন মাউন্ট বোর্ড, স্যান্ড স্টোন, সান বোর্ড। এ ভাবেই সেটকে কখনও ফোর গ্রাউন্ডে রেখেছেন। কখনও অভিনেতাদের নেপথ্যে ব্যবহার করেছেন তিনি। কখনও মিনিয়েচার গঙ্গার ঘাটে অভিনেতারা দাঁড়াচ্ছেন। তাঁদের ভার সামলাতে কী ভাবে পোক্ত করেছেন সিঁড়ির ঘাট?
(বাঁ দিকে) রণজিৎ ঘড়াই, বুলবুলি পাঁজা (ডান দিকে) ছবি: ফেসবুক
শিল্প নির্দেশকের কথায়, “সে ক্ষেত্রে প্লাইউড ব্যবহার করেছি।” রণজিৎ ১৫ বছর মুম্বইয়ে কাজ করেছেন। সেখানে এই ধরনের মিনিয়েচার সেটের প্রভূত ব্যবহার। এই প্রথম কলকাতায় সেই মাপের কাজ করে খুব খুশি তিনি। ছবির প্রযোজক বুলবুলি পাঁজার সঙ্গেও কথা বলেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। বারাণসীতে না গিয়ে স্টুডিয়োয় মিনিচার সেটের ভাবনা কেন? প্রযোজকের কথায়, “বারাণসী গিয়ে শুটিং করা সময়সাপেক্ষ এবং পঞ্চাশ শতককে ধরা অসম্ভব। তখনই রণজিৎ মিনিয়েচার সেটের দায়িত্ব নেয়। বাকিটা ইতিহাস।”এই প্রথম পুরাণ এবং ইতিহাসের যুগলবন্দিতে তৈরি কোনও সিরিজ় আসছে বাংলা ওয়েব প্ল্যাটফর্মে। মহামায়ার ন’টি রূপ, অলৌকিকত্ব, ইতিহাস জায়গা পাবে সেখানে।