রাজকুমার রাও এবং ভিকি কৌশল। এই প্রজন্মের বলিউডের দুই বলিষ্ঠ অভিনেতা। সে দিক দিয়ে তাঁরা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। অথচ অনেকেই জানেন না, ভিকির বলিউডে পরিচিতি পাওয়ার পিছনে আছেন রাজকুমারই।
ভিকি কৌশলের বাবা শ্যাম ছিলেন হিন্দি ছবির স্টান্ট ডিরেক্টর। ভিকির কোনও দিনই অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছে ছিল না। বরং তাঁকে বেশি টানত পরিচালনা। ‘গ্যাংস অব ওয়াসিপুর’ ছবিতে তিনি সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজও করেছেন।
সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সময় অনেকেই ভিকিকে বলেছিলেন অভিনয় শুরু করার জন্য। তার পর থেকেই তাঁর আগ্রহ বাড়ে অভিনয়ের প্রতি। তিনিও চেষ্টা করতে থাকেন কোনও ভূমিকায় অভিনয়ের সুযোগ পাওয়ার।
‘লভ শব তে চিকেন খুরানা’ এবং ‘বম্বে ভেলভেট’ ছবিতে ছোট ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ভিকি। কিন্তু এই দু’টি ছবিতে তিনি দর্শকদের নজরে পড়েননি।
ভিকির অভিনয় যে ছবিতে সমালোচক এবং দর্শকদের মন জয় করে নেয়, তা হল ‘মসান’। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ২০১৫ সালে।
বক্স অফিসে সে রকম সাফল্য না পেলেও সমালোচকদের কলমে প্রশংসিত হয়েছিল ছবিটি। সামাজিক বিষয়ের উপর যে কয়েকটি বলিষ্ঠ ছবি বলিউডে হয়েছে, ‘মসান’ সেগুলির মধ্যে অন্যতম।
‘মসান’ ছবির পরিচালক ছিলেন নীরজ ঘায়ওন। এটাই ছিল তাঁর পরিচালনার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি। তার আগে তিনি কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি পরিচালনা করেছিলেন।
একে নতুন পরিচালক, তার উপর বাজেট কম। নীরজ জানতেন, তিনি কোনও সুপারস্টারকে পাবেন না। নায়ক দীপক চৌধুরীর ভূমিকায় তাঁর প্রথম পছন্দ ছিলেন রাজকুমার রাও।
অভিনয়ের প্রস্তাব নিয়ে রাজকুমারের সঙ্গে কথাও বলেন নীরজ। কিন্তু সে সময় রাজকুমার তাঁকে সময় দিতে পারেননি। অন্য শ্যুটিং-এ ব্যস্ত থাকায় তাঁর আর ‘মসান’-এ অভিনয় করা হয়নি।
এর পরই নীরজের মাথায় আসে ভিকির কথা। ভিকিকে তিনি চিনতেন। ‘গ্যাংস অব ওয়াসিপুর’-এ নীরজও সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছিলেন। সেখান থেকেই ভিকির সঙ্গে তাঁর আলাপ। দু’জনের বন্ধুত্ব অটুট ছিল।
ভিকি কথা দিয়েছিলেন নীরজকে, তিনি নিজের সেরাটা তাঁর ছবির জন্য দেবেন। কথা রেখেছিলেন ভিকি। উজাড় করে অভিনয় করেছিলেন ‘মসান’-এ। প্রথম সুযোগেই বাজিমাত করেন তিনি।
এই ছবির পর থেকেই ভিকির চারপাশটা বদলে যায় রাতারাতি। এত দিন অবধি তিনি ছবিতে সুযোগ পাওয়ার জন্য দরজায় দরজায় ঘুরতেন। ‘মসান’-এর পরে তাঁকে মূল নায়কের চরিত্রে নেওয়ার জন্য অপেক্ষার লাইন শুরু হল পরিচালক-প্রযোজকদের।
ভিকি কৌশল এখন বলিউডের ব্যস্ত নায়কদের মধ্যে অন্যতম। ‘রাজি’, ‘লাস্ট স্টোরিজ’, ‘সঞ্জু’, ‘মনমর্জিয়াঁ’, ‘উরি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর হাত ধরে তিনি এখন দর্শকদের পছন্দের অভিনেতা।
অন্যদিকে রাজকুমার রাও-ও বলিউডের প্রথমসারির অভিনেতাদের একজন। ‘লভ সেক্স অউর ধোঁকা’, ‘কাই পো চে’, ‘কুইন’, ‘সিটি লাইটস’, ‘নিউটন’-এর মতো সিনেমায় তাঁর অভিনয় দর্শকদের মনে চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে।
রাজকুমার রাও এবং ভিকি কৌশল-দুই বহিরাগত অভিনেতাই এখন বলিউড শাসন করছেন। কয়েক বছরের কেরিয়ারে দু’জনেই জাতীয় পুরস্কার লাভ করেছেন। তবে নিজের অজান্তেই ভিকি কৌশলকে বলিউডে পা রাখতে সাহায্য করেছিলেন রাজকুমার রাও।