তারকা হিসাবে রাজকুমারের জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর জমি এতটাই শক্ত ছিল যে কখনও কর্মজীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় কাটাতে হয়নি তাঁকে। কাজ হারানোর ভয়ও ছিল না।
তাই যখন তখন যে কারও মুখের উপর কথা বলে দিতেন। তাঁর কথায় অনেকেরই খারাপ লাগত ঠিকই কিন্তু পাল্টা প্রতিবাদ করার ক্ষমতা কারও ছিল না।
পরিচালক, প্রযোজক থেকে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা প্রায় সকলেই তাঁকে আলাদা খাতির করেই চলতেন। কিন্তু মিঠুন চক্রবর্তীকে বাগে আনতে পারেননি তিনি।
অপমানের জবাব এমন ভাবে দিয়েছিলেন মিঠুন যে সে সময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপ এই অভিনেতাও মুখ লুকনোর জায়গা পাননি।
১৯৮০ সালে শুরু হয়েছিল ‘গলিয়োঁ কি বাদশা’ ছবির শ্যুটিং। ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন রাজকুমার এবং হেমা মালিনী।
রাজকুমার এবং হেমা দু’জনেই ছিলেন চূড়ান্ত সফল অভিনেতা এবং সে সময় তাঁদের জুটিও পছন্দ করেছিল হিন্দি সিনেমার দর্শক।
এই ছবিতে মিঠুন চক্রবর্তীও ছিলেন। মিঠুন তখন জুনিয়র অভিনেতা। তাঁকে নেওয়া হয়েছিল পার্শ্ব চরিত্রে।
রাজকুমার যখন মিঠুনের কথা শোনেন, তিনি রীতিমতে বেঁকে বসেছিলেন। পরিচালকের সঙ্গে মিঠুনকে ওই ছবিতে নেওয়া নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন তিনি।
রাজকুমারের বক্তব্য ছিল, মিঠুন এই জগতে একেবারেই নতুন মুখ। তাই তাঁর বদলে অন্য কোনও পরিচিত মুখ নেওয়াই উচিত হবে।
মিঠুনকে ছবিতে নেওয়া হবে কি না এ নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যান পরিচালকও। তখনকার দিনে রাজকুমারের প্রস্তাব ফেলে দেওয়াটাও সহজ ছিল না।
এমন আলোচনা যে চলছে তা জানতে পেরে যান মিঠুনও। পর দিন সেটে পৌঁছে তিনি সরাসরি রাজকুমারের সামনে হাজির হন।
মিঠুনকে চিনতেন না রাজকুমার। তাই নিজের পরিচয় দেন মিঠুন। রাজকুমার প্রকাশ্যেই চূড়ান্ত অপমান করেন মিঠুনকে। অভিনয় যে কারও কাজ নয়, মিঠুনের মুখের উপর তা সাফ জানিয়ে দেন।
মিঠুন প্রচণ্ড বিরক্ত হয়েছিলেন রাজকুমারের ব্যবহারে। তবে কোনও খারাপ আচরণ তিনি করেননি। নিজেকে সামলে নিয়ে শুধু বলেছিলেন এ রকম ব্যবহার হলে কোনও জুনিয়র অভিনেতা তাঁর সঙ্গে কাজ করতে চাইবেন না।
আর একদিন যে তাঁর মতোই সফল অভিনেতা হবেন সেটাও জানিয়ে দেন। মিঠুনের কথা হেসে উড়িয়ে দেন রাজকুমার। তবে মিঠুনকে নিয়েই ছবির শ্যুটিং শেষ হয়।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিভিন্ন কারণে ছবির মুক্তি আটকে যায়। ১৯৮০-র ছবি মুক্তি পায় ৯ হছর পর ১৯৮৯ সালে।
তত দিনে মিঠুনের একাধিক চূড়ান্ত সফল ছবি বক্স অফিসে মুক্তি পেয়ে গিয়েছে। মিঠুন সুপার স্টার হয়ে গিয়েছেন।
দর্শকদের কাছে ১৯৮৯ সালে রাজকুমারের ওই ছবির কোনও মূল্যই ছিল না। মিঠুন চক্রবর্তী, গোবিন্দা, সানি দেওল, জ্যাকি শ্রফের মতো তারকাদের তাঁরা পেয়ে গিয়েছিলেন।
তাই পরিচালক ওই ছবি বিক্রিই করতে পারছিলেন না। কোনও সিনেমা হলের মালিকই ওই ছবি কিনতে চাইছিলেন না।
বাধ্য হয়ে রাজকুমারের ছবি বিক্রি করতে এ বার মিঠুনকেই কাজে লাগান পরিচালক। ছবির নায়ক রাজকুমার হলেও ব্যানার থেকে তাঁর ছবি সরিয়ে দেন। পরিবর্তে পার্শ্ব চরিত্রে থাকা মিঠুনের ছবি বড় করে ছাপানো হয়।
মিঠুনের ছবি ছাপানোর পর সেটা বিক্রিও হয়ে যায়। যদিও বক্স অফিসে তেমন কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি ছবিটি। কিন্তু মিঠুনের জনপ্রিয়তার মাত্রা খুব ভাল ভাবেই টের পেয়ে যান রাজকুমার। নিজের কাজ দিয়েই রাজকুমারের অপমানের কড়া জবাব দেন মিঠুন।