Raima Sen on Pradeep Sarkar

আমার আনন্দের খবরটা পাঠালাম, এই প্রথম কোনও উত্তর এল না প্রদীপদার থেকে

প্রয়াত প্রদীপ সরকার। বলিউডে রাইমার সফরের অনেকটাই জুড়ে ছিলেন পরিচালক। প্রিয় ‘দাদা’র স্মৃতিচারণায় আনন্দবাজার অনলাইনের জন্য কলম ধরলেন রাইমা সেন।

Advertisement

রাইমা সেন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৩ ১৩:০৬
Share:

প্রদীপ সরকারের স্মৃতিচারণায় আনন্দবাজার অনলাইনে লিখলেন রাইমা সেন। — ফাইল চিত্র।

এই মুহূর্তে আমি কলকাতায়। সকাল সকাল খবরটা পেয়েই ভীষণ মনখারাপ হয়ে গেল। প্রদীপদার মুখটা খুব মনে পড়ছে। ‘চোখের বালি’র পর আমি মুম্বইতে দাদার সঙ্গে প্রচুর বিজ্ঞাপনেও কাজ করেছি। সেই সূত্রেই ‘পরিণীতা’ ছবিতে আমাকে নির্বাচন করেছিলেন। দু’বছর পর ‘একলব্য: দ্য রয়্যাল গার্ড’ ছবিতেও আমাকে নেওয়ার জন্য বিধু বিনোদ চোপড়াকে দাদা রাজি করিয়েছিলেন। ওই ছবিতে দাদা ক্রিয়েটিভ হেড ছিলেন।

Advertisement

যত সময় গিয়েছে, প্রদীপদার সঙ্গে আমার সখ্য বেড়েছে। ফোনে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। প্রথম লকডাউনের পর মুম্বইতে দাদার বাড়িতে আমি গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখলাম, চেহারাটা বেশ খারাপ হয়ে গিয়েছে। প্রদীপদা বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে পছন্দ করতেন। শরীর নিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, ‘‘এখন তো ডায়েট আর বিভিন্ন বিধিনিষেধে জীবন বাঁধা। তাই ওজন কমেছে।’’

পরিচালক হিসেবে প্রদীপদা ছিলেন অতুলনীয়। মজা করতে ভালবাসতেন। আবার কাজের সময় ততটাই সিরিয়াস। মনের মতো শট না পেলে বারংবার রি-টেক নিতেন। ছবির ডিটেলিংয়ের বিষয়ে আমার তো মনে হয় প্রদীপদা ছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষের মতো। শটের আগে কী চাইছেন সেটা একদম বিশদে বুঝিয়ে দিতেন। ‘পরিণীতা’র সেটে আমি আর বিদ্যা (বালন) ওঁর সঙ্গে ঠাট্টা করতাম। খুব মজা পেতেন। কলকাতায় শুটিংয়ের সময় হোটেলে দাদা আমাদের সঙ্গেই খাওয়াদাওয়া করতেন। কত আড্ডা দিয়েছি। আজকে সেই স্মৃতিগুলো বার বার মনের মধ্যে ফিরে আসছে।

Advertisement

প্রদীপদা আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। আমার কাজ দেখতেন। পছন্দ হলে সেটা ফোনে জানাতেন। সব সময় যোগাযোগ রাখতে বলতেন। দাদার মুখ থেকেই শোনা একটা ঘটনা মনে পড়ছে, একবার এক সাংবাদিক দাদাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, উনি আমাকে কোন চরিত্রে কাস্ট করতে চান। উত্তরে দাদা নাকি বলেছিলেন, ‘‘আমি রাইমাকে রাইমা হিসেবেই কাস্ট করতে চাই।’’ কিছু দিন আগেই দাদার ফোন আসে। ফোন করে বলেছিলেন যে ওঁর ছবিতে একটা গানের জন্য আমাকে ভাবছেন। আমাকে বললেন, ‘‘তুমি করবে?’’ আমি তো এক কথায় রাজি। তার পর আজকে এই দুঃসংবাদ।

প্রদীপদা সাধারণত ফোন বা মেসেজের উত্তর দিতেনই। গত বুধবার একটা পুরস্কার পাওয়ার পর ভিডিয়োটা দাদাকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাই। কিন্তু দেখলাম কোনও উত্তর এল না। তার পর আজ সকালে দাদার ফোন থেকেই বৌদি আমাকে মেসেজ করে খবরটা জানালেন। বৌদি লিখেছেন, ‘‘তোমার পাঠানো ভিডিয়োটা আমি দেখলাম। ভিডিয়োটা ওঁকে আর দেখাতে পারলাম না।’’ মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। চলে তো যেতেই হয় সবাইকে। কিন্তু প্রদীপদাও যে বড্ড তাড়াতাড়ি চলে গেলেন...।

(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement